যৌনতার অর্থ ও ফ্রয়েড-ইয়ুং বিবাদ – স্যাম ড্রেসার

(এই নিবন্ধটি প্রথম এয়ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ক্রিয়েটিভ কমনস-এর সাহায্যে এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হল।)

২৭এ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৭। ভিয়েনার ১৯ বার্গাসে সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রেমে পড়লেন। যে মানুষটি তাঁর হৃদয় অধিকার করে বসেছিলেন তিনি ফ্রয়েডের থেকে উনিশ বছরের ছোট কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং। ইয়ুং তখন প্রখ্যাত বার্ঘোলজলি হাসপাতালের ক্লিনিকাল ডিরেক্টর এবং জুরিখ ইউনিভার্সিটির প্রফেসর। ‘ওয়ার্ড অ্যাসোশিয়েশন টেস্ট’ উদ্ভাবনের জন্য গোটা বিশ্বে তিনি সুপরিচিত। তাঁর চিকিৎসাপদ্ধতির ‘অনায়াস বিদারণক্ষমতা’ও গবেষকমহলে বহুচর্চিত। ইয়ুং ইতোমধ্যে ফ্রয়েডের ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস’ পড়ে প্রবলভাবে আলোড়িত হয়েছেন এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফ্রয়েডের সাথে মুখোমুখি দেখা করবেন। সেদিনের সাক্ষাত খুব সংক্ষিপ্ত হয়নি। দুজনের কথা চলেছিল টানা ১৩ ঘণ্টা। অবচেতনের সমুদ্র মন্থন করে, মনোসমীক্ষার প্রয়োগ-পদ্ধতি আর স্বপ্নের অর্থ নিয়ে তাঁরা কথা বলে গিয়েছিলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।    

বলাই বাহুল্য ইয়ুং-এর মেধা দেখে ফ্রয়েড চমৎকৃত হয়েছিলেন। কিন্তু ইয়ুং-কে মনোসমীক্ষার (সাইকোঅ্যানালিসিস) গবেষণায় টেনে আনার পেছনে ফ্রয়েডের মনে অন্য একটি রাজনৈতিক কারণও ছিল। ইন্টেলেকচুয়াল আন্দোলন হিসেবে প্রথমদিকে মনোসমীক্ষা ছিল অনেকটা রাজনৈতিক দলের মতো। বা বলা যায় আঁতুড়ে বাড়তে থাকা ধর্মের মতো- ধর্মগুরুর মতো ফ্রয়েড ছিলেন তার একেবারে কেন্দ্রে। মনোসমীক্ষার প্রসার তাঁর কাছে ছিল চরমতম উদ্দেশ্য। তার জন্য প্রয়োজন হত মূলধারার মনোবিজ্ঞানীদের ‘ধর্মান্তরিত’ করে মনোসমীক্ষার বৃত্তে নিয়ে আসা এবং মাঝেমধ্যেই কিছু পথভ্রষ্ট মনোসমীক্ষককে বৃত্ত থেকে নির্বাসন দেওয়া। যেভাবে বিদায় দেওয়া হয়েছিল উইলেম স্টেকেলকে যিনি একসময় ফ্রয়েডকে ‘আমার ঈশ্বর’ বলে সম্বোধন করেছিলেন। ফ্রয়েড লোউ আনদ্রেয়াস-সালোমকে বলেছিলেন তাঁদের বৃত্তে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা-সমালোচনা চলতেই পারে কিন্তু ‘গোড়ায় একটা সামঞ্জস্য থাকা প্রয়োজনীয়; অন্যথায় আমরা মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ব।’

ফ্রয়েড মনে করেছিলেন মনোসমীক্ষার প্রসারের পথে সবচেয়ে বড় কাঁটা বাড়ন্ত ইহুদিবিদ্বেষ (অ্যান্টিসেমিটিজিম)। তিনি নিজে ছিলেন নিরীশ্বরবাদী ইহুদী, তাঁর সাথে আর যাঁরা ‘Wednesday Psychological Society’ (বিশ্বের প্রথম মনোসমীক্ষা চর্চাকেন্দ্র) গড়ে তুলেছিলেন তাঁরাও সবাই ছিলেন ইহুদি। ফ্রয়েড ভয় পেয়েছিলেন এই মনে করে যে মানুষ দুয়ে দুয়ে চার করে মনোসমীক্ষাকে ইহুদীধর্ম-উদ্ভূত কোন ধারা হিসেবে ভেবে বসবে। আর তাহলে হয়ত মূলধারার বিজ্ঞান হিসেবে মনোসমীক্ষা কখনই নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না। এক বন্ধুকে তিনি লিখছেন, ‘আমাদের আর্য কমরেডরা আমাদের কাছে অপরিহার্য। নইলে মনোবিশ্লেষণচর্চা ইহুদিবিদ্বেষের শিকার হতে পারে’। সুতরাং ইয়ুং-র আবির্ভাব ফ্রয়েডের কাছে মেঘ না চাইতেই জল। ইয়ুং ছিলেন মেধাবী, জনমুখী, বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি সংযুক্ত ও চর্চিত, এবং সর্বোপরি একজন সুইস প্রটেস্ট্যান্ট যার শরীরে একফোঁটাও ইহুদি রক্ত ছিল না। ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন, ‘একমাত্র তাঁর উপস্থিতিই মনোসমীক্ষাকে ইহুদি প্রসঙ্গ থেকে মুক্তি দিল।’

যদি ইয়ুং-র মধ্যে ফ্রয়েড একজন সার্থক অইহুদি উত্তরসূরী দেখে থাকেন, তাহলে ফ্রয়েডের মধ্যে কি দেখেছিলেন ইয়ুং? খ্রীষ্টান যাজকের ছেলে ইয়ুং-র কল্পনা সহজে গণ্ডি মানতো না। মূলধারার মনোচিকিৎসাও তাঁকে বেঁধে রাখতে পারেনি। সূচনাপর্বের আরও অনেক মনোসমীক্ষকের মতো তিনিও ছিলেন বেশ খামখেয়ালী – গ্রহণযোগ্যতার সীমান্তেই বরং তাঁর উৎসাহ ছিল বেশি। মাঝে মাঝে নিজেকে তিনি গ্যেটের উত্তরসূরী ভাবতেন (কবির সাথে তাঁর বংশের খুব  ক্ষীণ যোগ সত্যিই ছিল); বারো বছর বয়সে দেখা একটা স্বপ্নের কথা বহুজনকে বহুবার বলেছেন যাতে স্বয়ং ভগবান বাসেল ক্যাথিড্রালের ওপর মলত্যাগ করেন; আবার গ্রন্থকীট হয়েও তাঁর পড়ার অভ্যাস ছিল অত্যন্ত অগোছালো। যখন ইয়ুং ফ্রয়েডের ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অফ ড্রিমস ’ পড়লেন তখন তাঁর অশান্ত ভবঘুরে মন অন্তত কিছুদিনের জন্য নতুন বাসা পেল।

প্রকৃতপক্ষে ফ্রয়েডকে ইয়ুং প্রথম উপহারটি দিয়েছিলেন তাঁদের সাক্ষাতের আগেই। ১৯০৬ সালে ইয়ুং তাঁর শব্দানুষঙ্গ পরীক্ষা বা ‘ওয়ার্ড-অ্যাসোসিয়েশন টেস্ট’ প্রয়োগ করেছিলেন ফ্রয়েডের মুক্তানুসঙ্গ (ফ্রি অ্যাসোসিয়েশন) তত্ত্বের ওপর- যা ছিল অবদমিত স্মৃতি উদ্ধারের এক গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটিই ছিল মনোসমীক্ষার প্রথম নিরীক্ষামূলক পরীক্ষাগুলোর একটি। এই পরীক্ষার ফলাফল যেভাবে তাঁর তত্ত্বের বৈজ্ঞানিক অভিজ্ঞতালব্ধ সমর্থন যুগিয়েছিল তাতে ফ্রয়েড স্বাভাবিকভাবেই উল্লসিত হয়েছিলেন। তিনি বরাবর মনোসমীক্ষাকে বিজ্ঞান হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন (এমনকি, আজকে যতই আশ্চর্য ঠেকুক না কেন, বেশ কিছু তথ্যসূত্র থেকে জানা যায় যে তিনি নিজেকে একজন সচেতন লজিকাল পজিটিভিস্ট বলে মনে করতেন)। যদিও মনোসমীক্ষা প্রাথমিকভাবে অনুমানের ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছিল তবু ফ্রয়েড নিশ্চিত ছিলেন যথাযথ পরীক্ষানিরীক্ষা হলে এর সমর্থনে অমলিন প্রমাণ পাওয়া যাবে। ইয়ুং সেই দিকে বড় একটা অবদান রেখেছিলেন। ফলে ইয়ুং-এর প্রতি ফ্রয়েডের এই ভালোবাসা অস্বাভাবিক নয়, যদিও অনেকাংশে তা ছিল ফ্রয়েডের আত্মমগ্নতারই এক বর্ধিত রূপ।

ইয়ুং ভিয়েনা ছাড়ার পর একটি চিঠিতে ফ্রয়েডকে জানান যে তাঁদের সাক্ষাত প্রকৃত অর্থেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ঈর্ষাপরায়ন যুগলের মিষ্টি প্রেমের মত মান-অভিমানে ভরা ছিল তাঁদের পরবর্তী কয়েক বছরের সম্পর্ক। ইয়ুং ফ্রয়েডের প্রতি আধ্যাত্মিক অনুরাগ ব্যক্ত করেছেন অনায়াসে। ফ্রয়েড লিখেছেন ‘তোমার উপস্থিতি আমাকে ভবিষ্যতের প্রতি আস্থাশীল করেছে’। এই অনুরাগ চূড়ান্ত আদলে পৌছোলে ফ্রয়েড হয়ে ওঠেন পিতা আর ইয়ুং পুত্র। হয়ত একটি সমপ্রেমী (হোমো-ইরোটিক) সম্পর্কেরও আভাস পাওয়া যায় । ফ্রয়েড শীঘ্রই ইয়ুংকে ‘আন্তর্জাতিক মনোসমীক্ষা সমিতি’র প্রথম সভাপতি নির্বাচন করেন, ১৯১০র মধ্যে সমিতির শিকড় ভিয়েনা, জুরিখ, বার্লিন, লন্ডন এমনকি আমেরিকাতেও অল্পবিস্তর ছড়িয়ে পড়ে। তাঁদের বেশীরভাগই ছিলেন ইহুদি – ব্যতিক্রমী বলতে উল্লেখযোগ্য একমাত্র ওয়েলস মনোবিজ্ঞানী আর্নেস্ট জোন্স। যাই হোক, ইয়ুং অফিশিয়ালি হয়ে উঠলেন ফ্রয়েডের উত্তরসূরী- অবশেষে ফ্রয়েড মনোসমীক্ষার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করলেন ইয়ুং-র হাত ধরে।

ভিয়েনিজ মনোসমীক্ষকরা কিন্তু ফ্রয়েডের মতো নিশ্চিত হতে পারেননি । ইয়ুং-এর সুইস বৃত্তের প্রভাবে এবং সর্বোপরি তাঁকে সভাপতি করার সিদ্ধান্তে সমিতিতে চিড় ধরার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিলো। ফ্রয়েডের ঘনিষ্ট বন্ধু আলফ্রেড অ্যাডলার এই সময় থেকে ধীরে ধীরে মনোসমীক্ষার ভিত্তিভূমিকেই চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন। ইয়ুংর সাহায্যে ফ্রয়েড অ্যালডারপন্থীদের দমন করে আধিপত্য বজায় রাখেন কিন্তু তা সত্ত্বেয় ইয়ুংর আনুগত্য  তিনি বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি।

ইয়ুংর স্মৃতি অনুযায়ী তাঁদের সম্পর্কে প্রথম চিড় ধরে ১৯০৯এ, আমেরিকায়, যখন তাঁরা দুজনেই ম্যাসাচুসেটসের ক্লার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা দেন। যে ফ্রয়েড, বলতে গেলে, যার সাথেই দেখা হয় তাকেই বিশ্লেষণ করার অভ্যেস তৈরি করে ফেলেছেন, তিনিই ঘোষণা করেন যে নিজেকে বিশ্লেষণ করতে আর তাঁর উৎসাহ নেই। তিনি বলেন এই প্রক্রিয়া তাঁকে দুর্বল করে দেয়। ঠিক এইসময় থেকেই ইয়ুং ফ্রয়েডের মাত্রাধিক আধিপত্যে অসন্তুষ্ট হতে শুরু করেন।

অবশ্য সম্পর্কে চিড় ধরার আরও গভীর দার্শনিক কারণও ছিল। যেসব মনোসমীক্ষকের সাথে ফ্রয়েডের বনিবনা হয়নি তাদের বেশিরভাগের সাথেই তাঁর মতান্তরের বিষয় ছিল যৌনতা। লিবিডো তত্ত্ব প্রণয়নের পর ফ্রয়েড নিশ্চিত ছিলেন যে মানুষের যাবতীয় ইচ্ছা, কীর্তি ও কামনার পেছনে একটাই চালিকা শক্তি- যা আসলে যৌনতা থেকে উদ্ভুত। মনোসমীক্ষা যেহেতু গোটাটাই তাঁর মতে লিবিডো তত্ত্বের ওপর দাঁড়িয়েছিল সুতরাং এই বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করার অর্থ গোটা শাস্ত্রটাকেই চ্যালেঞ্জ করা। অথচ এই নিয়ে প্রথম থেকেই ইয়ুং-এর মনে সন্দেহ ছিল। তিনি মনে করতেন যৌনতাই মৌলিক চালিকাশক্তির একমাত্র উৎস নয়। ফ্রয়েড শুরুতে ভেবেছিলেন ইয়ুংর এই ধারণা তিনি অচিরেই কাটিয়ে তুলতে পারবেন।

তা কিন্তু হয়নি। আশার পাশাপাশি ফ্রয়েডের মনে প্রথম থেকেই একটা প্রচ্ছন্ন ভয়ও ছিল- ইয়ুং খ্রীষ্টান যাজকের ছেলে, হয়ত কখনই অতীন্দ্রিয় ধ্যানধারণার কবল থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারবে না। অন্তত একজন নিরীশ্বরবাদী ইহুদির পক্ষে যত সহজে সম্ভব তত সহজে তো আর নয়! শেষপর্যন্ত ফ্রয়েডের আশঙ্কাই সত্যি হল। তাঁদের মনোমালিন্যের কেন্দ্রে ছিল এই অতীন্দ্রিয়, আধ্যাত্মিক বিষয় সম্পর্কে খুব ভিন্ন মনোভাব। একদিকে ফ্রয়েডের মতে এইসমস্ত কিছুও শেষবিচারে লিবিডো বা যৌনতাড়না থেকেই সঞ্জাত, অন্যদিকে ইয়ুং মনে করতেন মনস্তত্ত্বের বিশ্লেষণে অতিপ্রাকৃতের ভূমিকা অপরিহার্য এবং ফ্রয়েডের সূত্রে এগুলোর পুরোপুরি ব্যাখ্যা হয় না।

১৯১২র  দিকে তাঁদের সম্পর্কের ফাটল আরও বাড়তে থাকে। এরপর যখন তাঁরা ধর্ম নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন বলা যায় তখনই কফিনে শেষ পেরেকটি গেঁথে যায়। ১৯১৩ তে ফ্রয়েড ‘টোটেম ও ট্যাবু’ প্রকাশ করেন, দেখাতে চান ধর্মের উদ্ভবের সূত্রটি নিহিত আছে ইডিপাস কমপ্লেক্সর ভেতর। ইয়ুং অন্যদিকে কিছুটা অদ্ভুত বিকল্প যুক্তিবিস্তার করছেন যার মধ্যে সুপ্তভাবে ধরা থাকছে পরবর্তীকালে তাঁর বিখ্যাত ধারণাগুলির (আর্কিটাইপ, কালেকটিভ আনকনশাস) বীজ। তাঁর থেকেও বড় কথা ফ্রয়েডীয় তত্ত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি লিবিডোকে নতুন করে দেখতে চাইছেন একটি আত্মিক চালিকাশক্তি (মেন্টাল এনার্জি) হিসেবে।

সম্পর্কের শেষটা হয় খুবই তিক্তভাবে, বন্ধুত্ব ভরে ওঠে বিদ্বেষে। ১৯১৩র মিউনিখ কনফারেন্সে খুব অস্বস্তিজনক সাক্ষাতের পর থেকে ফ্রয়েড এবং ইয়ুংর মধ্যে আর প্রায় কখনওই কথা হয়না। তাঁদের বিচ্ছেদের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী। ফ্রয়েড যেমন একজন রাজনৈতিক দলনেতার মত মনোবিশ্লেষণের বৃত্তটিকে পরিচালনা করার চেষ্টা করেছেন, ঠিক সেভাবেই অ্যানালিটিকাল সাইকোলজির ওপর ইয়ুং নিজের বজ্রমুষ্টি কখনও আলগা করতে চাননি। বাস্তবিকই সময়ের সাথে ইয়ুংর মনস্তত্ত্ব ফ্রয়েডের তত্ত্বের থেকেও বেশি গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে উঠেছে।

যদিও অনুরাগীরা অনেকেই তাঁদের প্রফেটের আসনে বসিয়েছেন তবু ফ্রয়েড বা ইয়ুং নতুন কোন ধর্ম প্রবর্তন করতে চাননি। তাঁরা কেউই আধ্যাত্মিক গুরু ছিলেন না। বলতে গেলে তাঁরা ছিলেন অন্ধকার অবচেতনের দুই পথপ্রদর্শক। এবিষয়ে মেজাজে ও মনোভাবে দুজনেই ছিলেন অনমনীয়, স্বভাবে দুজনেই কড়া ও কর্তৃত্বপূর্ণ। শুরুর দিনগুলোতে তাদের দুজনেরই দুজনকে প্রয়োজন হয়েছিল কিছুটা রাজনৈতিক কিছুটা বৌদ্ধিক কারণে। অবচেতনের যে গল্প তাঁরা শুনিয়েছিলেন- আজকে যতই বহুচর্চিত ক্লিশের পর্যায় পৌঁছে গিয়ে থাকুক – সেদিনের প্রেক্ষাপটে তা ছিল অদ্ভুত আশ্চর্যের। তাঁদের অবচেতনের তত্ত্বের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রিচার্ড রর্টি একবার বলেছিলেন, এ যেন আমাদেরই মনের গভীরে আরেকটি মানুষের বাস; ‘আমি কে?’- এই প্রশ্নের উত্তরে আমাদের চেতনা যেমন স্বাভাবিক দাবিদার ঠিক তেমনই অবচেতনের দাবিও বড় কম নয়। দুই পুরুষের অদ্ভুত বন্ধুত্বের ইতিহাসই হয়ত আমাদের জানিয়ে দেয় -কি অভিনব ও অস্বস্তিকর ছিল তাঁদের ভাবনার অভিমুখ ও চরিত্র; সম্ভবত এখনও তা একইভাবে সত্য।       

~ অনুবাদ : অর্ণব চক্রবর্তী           

___

Aeon counter – do not remove