তিনটি কবিতা – রঞ্জনা ভট্টাচার্য্য

উলঙ্গ হতে পারিনি

 

আলো পুড়ে গেলে অন্ধকার নামে,

ফুসফুসে রাত জমা হয়,

হৃদয়ের দেওয়ালে ফোস্কার মত

জেগে থাকে অর্ধদগ্ধ কবিতারা।

নগ্ন হতে পারি না, উলঙ্গ হতে পারিনি,

জীবনের গা বেয়ে আঁচিলের আঁশে

ঢাকা জমিতে প্রেমের কাটা শিরা দপদপ করে ,

পাথুরে ত্রাসে কোন

রহস্যময় পোড়া আলো খেলা করে

কে জানে?

আমি দেখি গাছে গাছে

ঝুলন্ত জরায়ু থেকে টপটপ রক্ত পড়ে

ভিজে যায় মাটি, তোমার মুখ ধীরে ধীরে শস্যক্ষেত হয়ে যায়,

অনুর্বরতার

ভয় ছায়ার মতো পাশ ফিরে শোয়।

 

 

এক ফোঁটা রূপকথা

 

বিষণ্ণ করোটির মধ্যে জ্বাল হয় দুঃখ

একটা ছবির শিরা উপশিরা নিয়ে

পরিচালক শুটিং করতে করতে দেখেন

অন্য কিছু হবার ছিল, লাভাস্রোত

অথবা রক্তমাখা মুক্ত, হলো না।

দোকানে ঘামতেল

মেখে বিক্রি হচ্ছে বিখ্যাত পংক্তি,

কাঁটা চামচ দিয়ে খাচ্ছে অভিনেতা ও পরিচালক। 

দুঃখের ঘন ক্বাথে পরিপুষ্ট ক্রমাগত ক্রিয়াপদ,

ক্রমশ স্বাদু হয়ে উঠছে রথের মেলা, হঠাৎ চুমু, তেপান্তরের বেলুনওয়ালা। 

পরিচালক আর অভিনেতার হাতে কাঁটাচামচের ইতিহাস,

বিষণ্ণ করোটি এবার দুঃখের ক্বাথে

এক ফোঁটা রূপকথা দেবে.. বলে… ভাবছে।

 

 

কান্নার গন্ধ

 

কেঁপে ওঠা কাপলেট,

কালো কফির তল থেকে ফিকে সাদা ধোঁয়া ,

সবকিছুর গায়ে নগ্ন সন্ধ্যার ঘ্রাণ,

আমি কি গন্ধ নিয়ে, শুধু গন্ধ নিয়ে বেঁচে থাকব, অন্ধের মত?

তোমাকে প্রবল জ্বরে একবারও দেখব না?

দুর্বোধ্যের কোমর ধরে তুমি আদর করবে,

আর আমার শিয়রে জলপটি দেবে মৃত্যু,

আদরের অন্তর্বাসে দোল খাবে শূন্যতা ,

আমি তোমার গন্ধের সাথে গুলিয়ে ফেলব সমুদ্রের নুলিয়া গন্ধকে,

তুমি ভুলে গেছ আমার আধখানা চোখ

নিকষ নক্ষত্র রাতে তোমাকেই ধার দেওয়া ছিল।

ভুলে যাওয়া দোষ কিছু নয়,

ভুলেই তো বিরহের সুখ, মুঠোচাপা চিৎকার,

আধফালি করে কাটা প্রবল জ্যোৎস্না রাত… ভুল সব ঘুম ঘুম গন্ধে বেঁচে থাকা,

সব ভুল তীক্ষ্ণ ফলার মত, ঝিম ধরা,

স্তব্ধতা খোঁড়ে, 

আমার সুড়ঙ্গে তোমার গন্ধমাখা কান্না নিয়ে আসে।

প্রচ্ছদঃ সুবর্ণরেখা পাল

*****