কল্পনার কালিপেনে
পৌলমী নন্দ
পৌলমী নন্দ – একজন স্ব-শিক্ষিত শিল্পী । আঁকিবুকি ছাড়াও কবিতা আর ছোট গল্প লিখতে ভালোবাসেন। আমাদের সাধারণ বাস্তব জগতের বাইরে গিয়েও এমন এক জগৎ আছে বলে বিশ্বাস করেন যেখানে সবকিছু ঠিক ‘রুল্বুক’ মেনে চলে না, যা একান্তই আমাদের কল্পনার জগৎ। সেই কল্পনার জগৎ-এরই কিছু বন্ধুবান্ধব দের কে নিত্য তাঁর আঁকা ও লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
এবারের গ্যালারীর এক একটি ছবি যেন ছোট গল্প। শুরু আছে, শেষ নেই। গল্পের আকারে গাঁথা এই তিন ছবির সূত্র ধরে এক কল্পজীবনের আভাস পাওয়া যায়। চারিপাশে ছড়ানো এমন না দেখতে পাওয়া ছবির জন্য মনটা আকুল হয়। সেই আকুলতা অনুভবের জন্যই দর্শককে এখানে টেনে আনা।
ছদ্মবেশ
ছদ্মবেশ
একবার এক বন্ধুর বাড়ি গিয়ে ওদের বারান্দায় রাখা একটি খাঁচার ভেতরে এক কাকাতুয়া দেখেছিলাম। সেই কাকাতুয়াকে একমনে পাখা ঝাপটাতে দেখে কোন খেয়ালের মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিলাম জানিনা, হঠাৎ দেখি সেই কাকাতুয়া দু’হাত বাড়িয়ে আমাকে ডাকছে। পরনে পাট-ভাঙা শাড়ি আর পেছনে প্রজাপতির মত সে ডানা মেলে রয়েছে। খাঁচার ভেতরে অজস্র গাছপালা আর তার মধ্যে আমি ওই কাকাতুয়া কে দেখছিলাম এক ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপে। আমার চোখ ছানাবড়া দেখে আমার বন্ধু আমাকে ডাক দিলে, আমি ভ্রম কাটিয়ে উঠে দেখি সেই খাঁচা তো খালি। আমার বন্ধুটিকে জিজ্ঞেস করতে সে বললো, “ধুর, ওই কাকাতুয়া তো আজ চার বছর হলো মারা গেছে।“
তিনমগজ
তিনমগজ
আমাদের পাশের বাড়ির পাঁচিলে প্রায় এক পাগলী বুড়িকে বসে থাকতে দেখতাম। প্রায় বলতে প্রতি শনিবার দুপুরবেলা, যখন বাড়ির ছাদে কাকে গুলোও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝিমোয় অথচ আমার চোখে ঘুম নেই আর আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাস্তার লোক দেখছি, এমন সময় হঠাৎ চোখ পড়ত ওই বুড়িটার দিকে। কি অদ্ভুত তার চাহনি, চোখের পলক পড়ত না তার, এক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকত আমার দিকে। আমি ভয় পেয়ে ঘরে ঢুকে যেতাম।কিন্তু কি আছে ওই চাহনি তে কে জানে, আমি ওই পাগলী কে অনেকবার স্বপ্নে দেখেছিলাম – সে তার তিন খানা মাথা নিয়ে পাঁচিলের ওপর বসে আমার ভূত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ সমস্ত কিছু যেন বইয়ের পাতার মত উল্টে পাল্টে দেখে ফেলছে।এরপর ই হঠাৎ কোনো এক শনিবার থেকে তাকে আমি আর দেখতে পেতাম না, এমন কি সে আমার স্বপ্নেও আর আসতো না।
লুসি
লুসি
লুসি আমার মায়ের বান্ধবী, উনি সফ্ট টয়স বানাতেন। আমাদের বাড়ি এলেই উনি আমার জন্য তুলো পোরা খেলনা কুকুর, বেড়াল এইসব আনতেন। একবার উনি আমার জন্য এক কালো খেলনা বেড়াল এনেছিলেন, যার চোখ গুলো ছিল হলুদ, আমার ভীষণ পছন্দের পুতুল ছিল সেটা। লুসিও আমার খুব পছন্দের মানুষ ছিল বটে, খুব অদ্ভুত কথাবার্তা বলতেন উনি। আমার মনে পড়ে লুসি প্রায় মজা করে আমাকে বলতেন যে ওনার নাকি দুটো চোখ ছাড়াও কপালে আরেকটা চোখ আছে, আমি খুব দুষ্টুমি করলে নাকি সেটা দেখা যাবে। আমি তো হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলাম।
তবে এরপর আমি যখনই আমার মাকে অল্প হয়রানির মধ্যে ফেলেছি, আমি ওই খেলনা বিড়াল টিকে দেখতাম, সে তার দুচোখ ছাড়াও আরো অনেক গুলো চোখ মেলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । প্রথমে চোখের ভুল ভেবে উড়িয়ে দিলেও সেই ঘটনা আমি বারবার ঘটতে দেখেছি।
আমি তারপর কোনো একদিন সময় সুযোগ বুঝে আমার এক বান্ধবীকে ওই খেলনা বিড়ালটি গিফ্ট করে দিই।