জীবন
ম্যাজিসিয়ান তার সিক্রেট কখনও বলে না
সে তার অনুশীলনের কথাও বলে না
ম্যাজিসিয়ান রাজার পোষাক পরে
মাথায় রাজার মুকুট
আমরা ভাসাভাসা চোখে দেখি
ঠকে যাচ্ছি… ঠকে যাচ্ছি… ঠকে যাচ্ছি
এই সব প্রতারণার মুখের ওপর অভ্যাসে
ছুড়ে দিই হাততালি
ম্যাজিসিয়ান যে আসলে আমাদেরই জীবন
বুঝতে বুঝতেই ড্রপসিনের ঘন্টা বেজে ওঠে।
ফুটো
পকেটের ফুটো দিয়ে
খুচরো পয়সা সব ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায় –
ঘরে ফিরি। ছেঁড়া ফাটা আমার সংসার
ফাঁক গলে পড়ে যায় কথার চাতুরি,
দেখি আর মনে মনে শব্দজব্দ খেলি।
ঘন রাত। কিছু নেই আশা ভরসার
দেখে যাই চাঁদোয়া জুড়ে জোনাকির অলীক প্রাকার।
ছায়া পথ, পড়ে আছে শুনশান লেন —
আকাশের ফুটো গলে পড়ে গেছে
সোনালী কয়েন।
পরম্পরা
ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয় আজকাল।
ফেসবুকের কবিতাও হাতফেরতা হয়ে
ছাপা হয়ে যায় অন্য কোনও নামে।
এ-রকমই হয়।
খেটেখুটে রান্না করে দিতেন মা।
আমরা পেতাম গরম ভাত, কুসুম সমেত আধখানা ডিম,
মায়ের জন্য আলু আর ঝোল একটু।
নিয়ম এমনই।
পূজোয় আমাদের ছিটের জামা,
নতুন জুতো, ক্যাপ বন্দুক।
মহালয়ার দিন বাবার কামিজ রিফু করে দিতেন মা।
এটাই দস্তুর।
লক্ষ্যভেদ করলেন অর্জুন,
ফুলশয্যার রাত যুধিষ্ঠিরের।
এটাই আমাদের ট্রাডিশান।
গ্রাউন্ডসম্যান
পাঁচ পাঁচটা স্লিপ ফিল্ডার নিয়ে বল করছে যে বোলার,
তিন তিনবার বলের লাইন মিস করেছে যে ব্যাটসম্যা্ন
শেষ বলে ছক্কা মেরে ম্যাচ বের করেছে যে পিঞ্চহিটার,
ম্যাচ জিতে ট্রফি হাতে শ্যাম্পেনের বোতল খুলছে যে ক্যাপটেন,
তারা সবাই ভুলে যায় গ্রাউন্ডসম্যানদের কথা ।
বৃদ্ধাবাস দেখলে আমার মনে পড়ে সেই গ্রাউন্ডসম্যানদের –
যারা সারা জীবন খেটেখুটে বানিয়েছেন খেলার মাঠ…
আর উইকেট পাচ্ছে, ছক্কা মারছে, হাততালি কুড়োচ্ছে
তাদের প্রবাসী সন্ততিরা।
সান্তাক্লজ
মানুষ এমনই।
বড়দিন হোক না হোক
সন্তানের ঝোলানো মোজায়
সে নিয়ত রেখে যায় আলো –
যাতে পথ ভুল না হয় …
রেখে যায় শুভ কামনার অনিঃশেষ
চকোলেট। বিশ্রামের অস্থায়ী তাঁবু,
চলাচলের পথ আর বলা-কওয়ার ভাষা।
সারাটা জীবন নীরবে মোজায় ফেলে যায়
ভালোবাসা আর নিজের অসফল স্বপ্নের ধানদুব্বো।
সন্তানদের দেবার যখন আর কিছুই থাকে না
তখন সে মোজায় রেখে দেয় নিজের ছায়া,
ছায়ার হাতে কম্পাস আর সেফটি ল্যাম্প।
মানুষ যে এভাবেই আজীবন সান্তাক্লজ
কোনোদিন বুঝতেই পারে না ।