মানুষের যুদ্ধ – দেবদাস কুণ্ডু

এক

– আপনার কি রেফার কেস?

– না।

-তাহলে ডাক্তার দেখবেন না।

-কেন?

-এটা সাইকিয়াটিক ডিপার্টমেন্ট।

-জানি।

-এই ডিপার্টমেন্টে রেফার ছাড়া রুগী দেখা হয় না।

-আচ্ছা। লাইনে তো দাঁড়াই।

-আপনি দু নম্বর লাইনে দাঁড়ান। ওটা নতুন টিকিটের লাইন।

সিকিউরিটি গার্ডটি একটু কড়া চোখে আমার দিকে তাকিয়ে অদূরে টুলটায় গিয়ে বসল।

আমি লাইনে। চোখের সামনে কাগজ মেলে ধরি। আমি কাগজ কিনে পড়িনা। আর্থিক অনটনে। চায়ের দোকানে কিংবা দুপুরে লাইব্রেরিতে  পড়ে নিই। আজ যেহেতু লাইনে দাঁড়াতে হবে, তাই কাগজ কিনেছি। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলে নানা চিন্তা। টেনশন। চোখ দুটো বড় বড় হয়ে উঠল। মার মৃতদেহ আগলে ছেলে ছ মাস। কি করে থাকল পচা গন্ধে? ছেলে নয়, পঞ্চাশ বছর বয়স্ক মানুষ। মানসিক রুগী। মৃতদেহ দাহ না করে ঘরে রেখে দেবেন, এ আবার কি ধরনের ভালোবাসা? মাকে কে না ভালোবাসে? চোখ সরিয়ে নিলাম। প্রধান মন্ত্রী জাপান যাচ্ছে দু’দেশের বাণিজ্য চুক্তি করতে। ভালো কথা। সব প্রধানমন্ত্রী যান। শেষ রেজাল্ট জানা যায় না। কারণ বেকারের লাইনটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর।

এখন এই লাইনটা ধীরে ধীরে চলছে। পিঁপড়ের মতো। সিকিউরিটি গার্ডটি মাঝে মাঝে আমাকে দেখছে। দেখুক। বুঝতে পারছি ওর কথা অমান্য করে কেন আমি লাইনে দাঁড়ালাম।

এবার চলে গেলাম ভিতরের পাতায়।

বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাতে নাকি দেশের বিপদ। মানুষের সংখ্যা কমে গেলে দেশের উন্নতি। কি আশ্চর্য।

এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে এখন কাউন্টারের সামনে এলাম।

– নাম বলুন

– মৃদুল সরকার।

– ঠিকানা বলুন।

বললাম।

– বয়স বলুন

– ষাট।

– কি সমস্যা?

– ঘুম নেই, খিদে নেই, মনে হয় এই মরে যাব।

কম্পিউটার থেকে টিকিট বের করে আমার হাতে দিয়ে লোকটি বলল – লাল বাড়ির একতলায় চার নম্বর ঘরে টিকিট জমা দেবেন।

– টিকিট হয়েছে তো?সিকিউরিটি গার্ড টি জিজ্ঞেস করলো।

– হবে না কেন?আমি বললাম।

– সোজা চলে যান। ডানদিকে ঘুরবেন। লাল বাড়ি। টিকিট জমা দিয়ে বসে থাকবেন। সময় লাগবে কিন্তু।

সিকিউরিটি গার্ডটির কথাই ঠিক হল। খবরের কাগজ পুরো পড়া হয়ে গেছে। বসে আছি এক ঘন্টা। সামনে দিয়ে একজন ওয়ার্ড বয় যাচ্ছিল।

তাকে জিজ্ঞেস করলাম – এত সময় কেন লাগছে ভাই?

সে একবার আমাকে মেপে নিয়ে বলল-এই প্রথম?

– হ্যাঁ।

– কতক্ষণ অপেক্ষা করছেন?

– এক ঘণ্টা।

– আরো এক ঘণ্টা অপেক্ষা করুন।

– বলেন কি? আরো এক ঘণ্টা?

– এটা পেটের অসুখ নয়। মাথার অসুখ। দেখতে সময় লাগে। কেস হিস্ট্রি নিতে হয়।

এত লোকের মাথায় গন্ডগোল? বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যারা হাঁটছে, তারা সবাই কি সুস্থ? কে যেন বলেছিল সাইকিয়াটিক ডাক্তারও নাকি সুস্থ নয়। অথচ কাউকে দেখলে বোঝা যাবে না তারা অসুস্থ। তাকে দেখলে কেউ বলবে?

মৃদুল সরকার।

আমি ভিতরে ঢুকলাম। একটা লম্বা টেবিল। দু মাথায় দুজন ডাক্তার। লেডি ডাক্তার

আমার টিকিট তুলে দেখলেন। এবার আমার মুখের দিকে-বলুন কি সমস্যা?

– আমার শুধু মনে হয় আমি মরে যাবো।

– কেন মনে হয়? আপনার কি কোন অসুখ আছে?

– না।

– তাহলে এমন মনে হচ্ছে কেন?

– আমি এখন বেকার।

– আগে কি করতেন?

– টিউশন। কোচিং। হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল।

– কত বছর কোচিং করেছেন?

– তা তিরিশ বছর।

– এত বছরের কোচিং হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল কেন?

– আমার দুটো ছাত্র কোচিং খুলেছে। সব ছাত্র ওদের কাছে ভিড় করছে।

– কেন?

– ওরা স্কুলের প্যারা টিচার। স্কুলের ছাত্ররা স্কুল টিচারের কাছে পড়ে। তা টিচার তাদের প্রোজেক্টে কুড়িতে কুড়ি দিয়ে দেয়। বাইরের টিচারের কাছে পড়লে সেই সুবিধা পায় না।

– আপনি তো বললেন তিরিশ বছর কোচিং করছেন তা সেভিংস করেন নি কিছু ?

– মেয়ের বিয়ে দিতে গেছে অনেক টাকা ।

– আপনার বয়স বললেন ষাট। চাকরি করলে রিটায়ার করতেন। এভাবে ভাবুন।

– ভাবতে পারছিনা তো।

– কেন? অসুবিধা কোথায়?

– চাকরি শেষে এক লপতে অনেক টাকা পাওয়া যায়।

– টিউশনে এই সুবিধা নেই, আপনি তো তা জানতেন।

– সেই জন্যই তো চিন্তা হচ্ছে। খাবো কি? বাঁচবো কি ভাবে? ঘুম নেই। হঠাৎ করে কোচিং বন্ধ হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি।

– কেন ভাবেন নি?

– ভেবেছি এভাবে আরো দশটা বছর  কেটে যাবে। হঠাৎ যে…।

– এই হচ্ছে আপনাদের দোষ। এই যে বসে আছেন হঠাৎ আপনার হার্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

– হয়েছে তো তাই।

– আপনার?

– না। ওয়াইফ। তার চিকিৎসা করতে গিয়ে দুটো FD ভাঙাতে হলো। শেষ সঞ্চয়টা  চলে গেল। তাই বড় চিন্তা। ঘুম নেই। একটা নিঃসঙ্গতা পেয়ে বসেছে?

– কেন নিঃসঙ্গতা?

– মেয়ে ছিল বন্ধু। দোসর।

– দোসর মানে।

– সঙ্গী। এখন আমি একা।

– কেন আপনার স্ত্রীর সঙ্গে সুখ দু:খ শেয়ার করতে পারেন তো?

– ওয়াইফ একটা ছোট্ট নার্সিং হোমে চাকরি করেন। সামান্য বেতন পান। বারো ঘন্টা ডিউটি। সংসারের কাজ। দুবেলা ঠাকুর পুজো কিছু বলতে গেলে বলে, আমি এখন ব্যস্ত। আমার সময় নেই।  তোমার মেন্টাল ক্রাইসিস তোমার কাছে রাখ। আমাকে বলবে না। তারপর কিছু সময় চুপ থেকে বলেন, ’এটা সংক্রমণ ব্যাধি। আমাকে এর থেকে দূরে থাকতে দাও।‘

-আপনি কেন উল্টো পাল্টা চিন্তা করছেন?ওয়াইফ তো ঠিকই বলেছেন। নেগেটিভ কথা বার বার বললে একটা পজিটিভ মানুষ নেগেটিভ হয়ে যায়।

-তাহলে আমি কি করব?

-দুটো ওষুধ দিচ্ছি। পনেরো দিন পর আসুন।

হাসপাতালের মেডিসিন শপ থেকে ওষুধ নিয়ে রাস্তায় আসি। ফাঁকা ট্রামে উঠে জানলার ধারে বসি। এই ট্রামটা যাবে শ্যামবাজার গুমটি। আমি নামবো হাতিবাগান।তারপর ধরব উল্টো ডাঙার অটো। ট্রামটা বুড়ো মানুষের মতো চলছে। চলুক। আমার বেশ লাগে ট্রাম। লাইনের ওপর দিয়ে যখন যায় তখন একটা ছন্দোবদ্ধ শব্দ হয়। ট্রামে ঘন্টার শব্দটাও লাগে মধুর। ড্রেসপড়া কন্ডাক্টর কাটে টিকিট। সব মিলিয়ে একটা আভিজাত্য। বেশি দিন থাকবে না। এই মুহুর্তে আমার হঠাৎ খারাপ লাগল। কেন ডাক্তারের কাছে আমার দুই ছাত্রর নাম করলাম? ওরা মেধাবী। ওরা আমার সন্তান। কেন ওদের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুললাম ! চিরকাল একজ্ন মাস্টার ছাত্র পাবে, তা কখনো হয়? নতুন তো জায়গা করে নেবেই। তারা আমার ছাত্র। এ তো গর্বের। ছি ছি ছি। মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে। শুধু ছাত্র কেন? সব কিছু সময় হলে ফুরোয়। যেমন সন্ধ্যা হলে দিনের আলো ফুরোয়।

এখন হাঁটছি। অটো ধরিনি। দশটাকা। গায়ে লাগে। হঠাৎ চোখে পড়ল একটা হোডিং।

কন্যাশ্রী প্রকল্প। বৃদ্ধদের জন্য কোন প্রকল্প নেই?

– আছে তো। তুমি খোঁজ নাও। ভেতর থেকে কেউ একজন বলে উঠলো। এটা আমার মাঝে মাঝে হয়। নিজের ভিতর প্রশ্ন জাগে। ভিতর থেকে কেউ উত্তর দিয়ে দেয়।

-কোথায় খোঁজ নেব? কার কাছে যাবো?

শ্যামল পাত্র মনে পড়েছে। ফোন করি। রিং হচ্ছে। ও প্রান্ত থেকে কথা ভেসে এলো, ‘কে বলছেন? ‘

-আমি মৃদুল বলছি।

-কোন মৃদুল? মুরারি পুকুর, না মুচি বাজারের মৃদুল?

-মুচিবাজার।

-হ্যাঁ বল।

-আমি ষাট পূর্ণ করেছি। বার্ধক্য ভাতা পাব না?

-কেন পাবি না?

-কি করতে হবে?

-দেখ। কর্পোরেশন ও রাজ্য সরকার দুই সংস্থাই দিচ্ছে। তুই কোনটা নিবি?

-কোনটা ভালো?

-ভালো মন্দ বুঝি না। রাজ্য সরকারের টাকা বেশি, কর্পোরেশনে কম।

-তাহলে রাজ্য সরকারটা নেব।

-তাহলে বিকাশ ভবন চলে যা।

– আমার তো কোন চেনা জানা নেই। চেনা লোক না থাকলে হয় না।

– কথাটা ঠিক বলেছিস। তবে একেবারে যে হয় না, তা কিন্তু নয়। এই একটু বেশি ছোটাছুটি করতে হয়।

-আমি অতো ছোটাছুটি করতে পারবো না। তুই কর্পোরেশনেরটা করে দে।

-কাল সব কাগজে নিয়ে কাউন্সিলরের অফিস চলে আয় দশটার মধ্যে। যদি দেখিস আমি অফিসে নেই, চুপচাপ বসে থাকবি। কেউ কিছু জিগ্যেস করলে বলবি, আমি শ্যামলের কাছে এসেছি। আর কোন কথা বলবি না।

– জিজ্ঞেস করতে পারে কেন? কি জন্য?

– একটা রোড ইন্সপেকশন আছে। আমার সঙ্গে থাকবে কাউন্সিলর। কাজটা সেরে অফিসে আসবে। ততক্ষণ বোবার মতো বসে থাকবি। বুঝলি কিছু ? তুই তো মাস্টার। তোদের স্বভাব বক বক করা। তোরা সব মানুষকে ছাত্র ভাবিস আর জ্ঞান দিস। দিন পাল্টে গেছে। এখন সবাই সেয়া্না। বুঝলি কিছু? ।

-বুঝেছি। বোবা কালা হয়ে থাকতে হবে। তা কাজ যদি হয়, বোবা থাকতে অসুবিধা কি?

পরে মনে হল শ্যামল কেন গোপন করতে চাইছে ব্যাপারটা। আমি তো কোনদিন পার্টি করিনি। মিটিং মিছিলে যাই নি। তবে সমর্থন করি। কাঠি দেবার লোক তো অনেক আছে। এমন লোকও আছে কাঠি করে তার কোন সুবিধা হবে না। তবু কাঠি করবে। এটাই ওদের স্বভাব। শ্যামলের বাইকে আজকাল কাউন্সিলরকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। একদিন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কি শ্যামল তুই দেখি আজকাল কাউন্সিলরকে নিয়ে ঘুরছিস। LIC কখন করছিস?’

-LIC তো আর করছি না।

-ছেড়ে দিয়েছিস? তোর তো কি সব ক্লাব মেম্বারশিপ ছিল। ভালোই তো আয় করছিলি। ছেড়ে দিলি কেন?

-একটা পলিসি করুন- একটা পলিসি করুন- কতদিন কুকুরের মতো পিছন পিছন ঘোরা যায় ! অনেক ঘুরে শেষে করলো একটা ছোটো পলিসি। কেউ করলোই না। শুধু ঘোরালো। এভাবে কতদিন চলতে পারে বল? আমরা তো মানুষ।

-এতদিন করে এলি তখন মনে হয়নি? আজ হঠাৎ মনে হলো?

-হ্যাঁ। অনেক কিছু অনেক সময় হঠাৎ হঠাৎ হয়। এখন ভালো কাজ পেয়েছি তাই LIC করছি না।

-ভালো কাজ মানে?

-রোড কনস্ট্রাকশনের কাজ। পনের নম্বর ওয়ার্ডে মত রাস্তার কাজ হবে তার কন্ট্যাক্ট আমি পাবো।

–কেন? আর কেউ পাবে না?

-এতো দিন তা হলে কেন পার্টি করলাম?

-তুই রোড কনস্ট্রাকশনের কি বুঝিস?

-আমার বোঝার তো কোন দরকার নেই। কাজ করবে তো ইঞ্জিনিয়ার। LIC পুরো ছেড়ে দিই নি। একটা ছেলে রেখেছি সে প্রিমিয়াম কালেক্ট করে জমা দেয়। প্রিমিয়ামের জন্য পার্টিকে কতবার ফোন করতে হয় জানিস। ওর যখন টাকা পাওয়ার সময় হবে তখন আমাকে বার বার ফোন মারবে। জ্বালিয়ে খাবে। আরো খারাপ লাগে যখন বলে LIC র এজেন্ট মানে দালাল। মরে গেলে পরিবারটা কতো লাখ লাখ টাকা পাবে সে কথা ভাবে না একবার। প্রিমিয়ামের জন্য বার বার ফোন করা । এখন নয়। পরে। শালা , ভিখিরির মতো কে ছুটবে ? এখন রোড কনস্ট্রাকশনের কাজ করছি। একটা ছেলেকে রেখেছি, ও টাকা তোলে। জমা করে। এ দেশেই ইনসিওরেন্স এজেন্টরা ভিখিরির মত ঘোরে নতুন পলিসির জন্য। তাও আবার কমিশন ছেড়ে কাজ করতে হয়।পার্টি কমিশনের টাকায় ভাগ বসায়। কি থাকে বল। তার ওপর সরকার ট্যাক্স কাটে। হাতে আর কত পাই। বিদেশে এজেন্টরা অফিস করে বসে থাকে। একটা পলিসি করতে গেলে তিন মাস অপেক্ষা করতে হয়। কারণ ও দেশের মানুষ সন্তান হলে আগে ইনসিওরেন্স করে। তাই ডেট পেতে তিন মাস লাগে। বিদেশে একশো জনের মধ্যে একানব্বইটা মানুষের ইনসিওরেন্স আছে;

আর এখানে? মুখ দিয়ে রক্ত ওঠে যায় একটা নতুন পলিসি করতে। LIC আমাকে কতো কমিশন দেবে ? এখানে আমি মাসে লাখ টাকা আয় করি। কেন করতে যাবো ঐ ভিখিরির কাজ?

পোল পার হয়ে চলে এলাম ফ্ল্যাটে। বউ ডিউটি তে, একা ঘরে শুয়ে ভাবছি। কোচিং এর রমরমার সময় সস্তায় এই ফ্ল্যাট কেনা। শ্যামল বলেছে কথা বলবি না। সত্যি জীবনে নীরবতারও দরকার আছে।

  দুই

দিন পনেরো পর আবার মেডিকেল কলেজ। সেই লেডি ডাক্তার। সেই নির্বিকার গলা

-কেমন আছেন?

-ভাল না।

-কেন? ওষুধ খান নি?

-খেয়েছি তো। সারা দিন ঘুম আর ঘুম। বাজার যাচ্ছি ঘুম। রেশন যাচ্ছি ঘুম। সেদিন বৈশাখী যাচ্ছি  ঘুমিয়ে পড়েছি বাসে। কন্ডাক্টর ডেকে তুলল। দেখি করুণাময়ী বাস স্ট্যান্ড। কতটা পথ হেঁটে বৈশাখী এলাম। তা আপনি কি আমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়েছেন?

-তা একটু ঘুম তো পাবে।

-একটু মানে। বেশ ঘুম পাচ্ছে।

-প্রথম কয়েক মাস ঘুম পাবে।

-ক মাস?

-ছ মাস। তারপর কেটে যাবে।

-এই ছ মাস আমি কি করবো? ঘুমিয়ে থাকা তো একরকম মরা। আমি তো বাঁচতে এসেছি আপনার কাছে। মরতে নয়।

-আপনি এক কাজ করুন, স্যারের সঙ্গে কথা বলুন। ভিতরে যান।

ভিতরটা বড় ঠান্ডা। এ সি চলছে। চারপাশে ঘন সবুজ পর্দা। বড় টেবিল। ছড়ানো কাগজপত্র। ছড়ানো ফাইল। দুটো ল্যান্ড ফোন ঘুমোচ্ছে। মোবাইলটা জ্যান্ত। কানে। অনর্গল কথা। একটা পেশেন্ট ঢুকেছে, হুঁশ নেই। কথা বলে চলেছেন। আমি বসে পড়লাম চেয়ারে। বসে আছি বসেই আছি। ফোন কানের সঙ্গে ফিট হয়ে গেছে। আর নামছে না।

এবার বলি- স্যার আমি কি চলে যাব?

-কেন? চলে যাবেন কেন? বসুন।

 বসেই তো আছি। একটা ছেলে চা বিস্কুট দিয়ে গেল। স্যার চা খাচ্ছেন। হঠাৎ হেসে উঠলেন। কে যেন বলেছিল সাইকিয়াটিক ডাক্তাররা একটু পাগল হয়। আমি কি পাগলের ডাক্তারের  পাল্লায় পড়লাম নাকি? উঠে আসছি

-কোথায় যাচ্ছেন?

মিথ্যে বললাম – বাথরুম পেয়েছে।

-দিন টিকিট। কি প্রবলেম?

বললাম।

-এক নম্বর ওষুধ টা দিনের বেলা খাবেন  না। রাতে খাবার আগে খাবেন। সোশ্যাল অ্যাকটিভিটি করুন। এক মাস পরে আসবেন।

আজ ট্রামে জানালার ধারে সিট পেলাম না। পাশের সিটে বসে বাইরেটা দেখছি। হেদুয়া পার্ক। বেথুন কলেজ। স্কটিশ চার্চ স্কুল। ক্ষুদিরাম কলেজ। ছেলেবেলার মতো একই আছে। আমার বয়স বাড়ল। পৃথিবী কি বুড়ো হয় না?

হাতিবাগান নেমে আজ আর হাঁটা নয়।ফাঁকা বাস। উঠে সিটে বসে ফোন করলাম শ্যামলকে।

-হ্যাঁ বল মৃদুল।

-আমার কেসটা কত দূর?

-সময় লাগবে। তুই তো কোনদিন পার্টি করলি না। মিটিং মিছিলে গেলি না। ছাত্র পড়ালি আর কবিতা লিখলি। কি পেলি জীবনে?

-কথাটা মিথ্যে নয়। ঠিক বলেছিস। তাহলে আমার হবে না। তাই তো?

-কে বলছে হবে না? আমি তো রয়েছি। সময় লাগবে।

সত্যি তো সময় লাগবে। কোনদিন একটা মিছিলে হাঁটলাম না। শ্লোগান দিলাম না। নীরব সমর্থন প্রথমে কংগ্রেস, পরে বাবার তৃণমূলে ডিগবাজি, আমারও তাই। নেবো। দেব না কিছু। তোমার নীরব সমর্থন কে দেখছে ? নিজের ভিতর সেই মানুষটা বললে-‘এই সামান্য সত্যটা বুঝতে ষাট বছর পার করে দিলে।’

       তিন

 একমাস পর বাস স্টপে আমি। যাব মেডিকেল কলেজ। মাথার ওপর ঝুলে আছে বিপন্ন মানুষের মতো এক খন্ড মেঘ। চারপাশটা কেমন বিকেল বিকেল। ঘড়িতে বেলা এগারোটা। হঠাৎ বুকের ভিতর সেই মানুষটা বলে উঠল-অর্থের নিরাপত্তাহীনতা, হতাশা, অবসাদ, একাকীত্ব, মানসিক শূন্যতা – এসব ওষুধে কমবে না। ওষুধ তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখবে যেমন রাজনৈতিক নেতারা মূল সমস্যা চাপা দিয়ে রাখে। ওষুধ সেই কাজ করবে। কিন্তু কতদিন তুমি ভুলে থাকবে এই সমস্যা? চোখের সামনে দিয়ে দুটো বাস চলে গেল। মেডিকেল কলেজ যাবার। আমি বাসস্টপে । ডানদিকে ছেলেটি মুরগি কাটছে। মুরগির সারা শরীর যন্ত্রণায় কাঁপছে। গলাটা চেপে ধরে আছে ছেলেটা। ছেড়ে দিলে লাফিয়ে উঠবে তিনতলা সমান। আমারও ইচ্ছে হয় তিন তলা থেকে লাফ দিতে। সাহসের অভাব। কটা টাকার জন্য বউয়ের কাছে হাত পাততে হয় ভিখিরির মতো। ভিখিরির সেটা পেশা। করে অনাত্মীয়র কাছে। আর আমাকে? নিজের বৌয়ের কাছে। লজ্জা। বড় লজ্জা। বুকের ভিতর একটা যন্ত্রনা নিঃশব্দ হেঁটে যাচ্ছে। কখনো বড় বড় পা ফেলে হাঁটে। তখন বুকের ভিতরটা বড্ড লাফায়, যেন খাঁচায় পোরা কোন পাখির ছটফটানি। যেন একটা দৈত্য নিষ্ঠুর পায়ে হাঁটছে। তখন মুক্তির জন্য কারো সঙ্গে কথা বললে বুক পাখির মতো হালকা হয়ে যায়, কিন্তু কার সংগে কথা বলবো? দু একদিন বউকে বলতে গেছি , বউ বলেছে-তোমার এই বানানো অসুখের  কথা আমাকে বলবে না। আমার টাকায় খাচ্ছ বলে যন্ত্রণা হয়, অসম্মান হয়, তবে তুমি একটা কাজ দেখ। ষাট বছর বয়সে কে তোমায় কাজ দেবে? কিন্তু নেগেটিভ কথা বলবে না। ওটা ভয়ঙ্কর সংক্রামক ব্যাধি!

একের পর এক মুরগি কাটছে ছেলেটা – আমি দাঁড়াতে পারলাম না। গর্ভবতী মেয়ের মতো ধীর পায়ে কর্পোরেশন অফিস পার হয়ে ঢুকে পড়ি সি আই টি পার্ক। সময়টা এক একদিন এত শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে ওর মুঠিতে চেপে ধরে হৃদপিন্ড। তখন কারো একজনের সঙ্গে কথা বললে ধীরে ধীরে নিষ্ঠুর মুঠি থেকে বেরিয়ে আসা যায়। একটা সময় কত বন্ধু ছিল। জীবনের এই প্রান্তে এসে দুর্ভিক্ষের মতো বন্ধু যে কমে যায় কে জানত?

বুক পকেটে হঠাৎ বেজে ওঠে ফোন। মেয়ে। আনন্দ হচ্ছে। বললাম – বল মা কেমন আছিস?

-ভালো আছি। মা কি ডিউটিতে?

-হ্যাঁ

-তুমি কেমন আছো বাবা?

-কবরে যেভাবে শুয়ে থাকে মানুষ।

-আজেবাজে কথা বল কেন তুমি।

-আমার দাদুভাই কেমন আছে?

-খুব দুষ্টু হয়েছে। এটা ভাঙছে ওটা ভাঙছে।

-বেশ করেছে। ভাঙুক। এই পৃথিবী কি দিয়েছে মানুষকে? ভেঙে চুরে ওরা নতুন পৃথিবী গড়ুক।

-কি বলছ তুমি? শোন তোমার জামাই এখানে তোমাকে একটা কাজ ঠিক করে দেবে।

-কল্যাণীতে? ঐ গ্রামে?

-কল্যাণী গ্রাম ? তুমি যে কি বল না বাবা! কলকাতায় কি আছে? দূষণ ভীড় হৈচৈ মিছিল।

-জামাইকে চিন্তা করতে না করবি। আজ কাজ নেই, কাল হবে। মিছিলের শহরে থাকি। মিছিল মানে লড়াই। আমি লড়াইতে আছি।

 চার

     রবিবারের কর্ম খালির পাতা। কত কর্ম খালি। এর মধ্যে একটা কাজ জুটে যাবে। উৎসাহ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লাম।

প্রথম ফোন—সিকিউরিটি গার্ডের লোক নেওয়া হচ্ছে?

-হ্যাঁ। বয়স কত?

-ষাট।

ফোন কেটে গেল।

দ্বিতীয় ফোন—উকিলের সহকারী নিচ্ছেন?

-নিচ্ছি। বয়স কত?

–ষাট।

ফোন কেটে গেল।

তৃতীয় ফোন-  ক্যুরিয়ার এর কাজে লোক নিচ্ছেন?

–হ্যাঁ। সাইকেল জানেন?

–জানি।

-কোথায় থাকেন?

-বিধাননগর।

-বয়স কত?

–ষাট।

-হবে না। তিরিশ চাই।

চতুর্থ ফোন—নিজে সুস্থ হোন। ব্যবসা করুন।

– কথাটা বুঝলাম না।

-আপনার কোন অসুখ আছে। আমাদের প্রোডাক্ট ব্যবহার করে আপনি সুস্থ হলেন। এবার আমাদের এজেন্সি নিলেন।

-ধরুন আমার কোন অসুখ আছে, আমি কোন ডাক্তার না দেখিয়ে ওষুধ খাবো?

-হ্যাঁ। খাবেন। সব রোগের জন্য আমাদের প্রোডাক্ট আছে। আপনি খেলে সুস্থ হবেন।

-ডাক্তার না দেখিয়ে… তারপর যদি কিছু হয়?

-কিছু হবে না। আমাদের প্রোডাক্ট সম্পূর্ণ হারবাল।

-ড্রাগ লাইসেন্স  আছে?

এবার ফোন কেটে গেল। বুঝলাম জালি মাল।

পঞ্চম ফোন—কমার্স গৃহশিক্ষক চাই?

-আপনার যোগ্যতা?

-বি. কম. অনার্স।

-হবে না। এম. কম. চাই।

 অন্ধকার। সামনে অন্ধকার। হঠাৎ চোখ গেল কর্ম প্রার্থী কলমে-যে কোন কাজ চাই যে কোন পারিশ্রমিকে। বয়স ৭০। মো 9830….

বিজ্ঞাপনটা আমাকে বাধ্য করল সোজা হয়ে বসতে। শুধু তাই নয় বছরের লোকও কাজ খুঁজছে। ৭০ বছর বয়সে পাঁচশো টাকা খরচ করে বিজ্ঞাপন দিয়েছে। তার মানে লোকটা বড় বিপন্ন। এই শহরে এইরকম কত বিপন্ন মানুষ আছে? ভাবতে পারছি না। মাথাটা টাল খাচ্ছে।

        পাঁচ

   আজ সকাল থেকে ফোন। একটার পর একটা। রিং হচ্ছে। ধরলাম। উকিলের সহকারী। ডিউটি বারো ঘন্টা। বেতন দু হাজার। কেটে দিলাম। পরের ফোন মিশনের বাগান দেখাশোনা। বেতন আড়াই হাজার। চতুর্থ ফোন সার্ভে- দিনে ৫০ টাকা পঞ্চম ফোন হ্যান্ড বিল ছড়ানো। সেই ৫০ টাকা। ষষ্ঠ ফোন হতাশা নিয়ে ধরলাম। হঠাৎ মেরুদণ্ড সোজা করে বসতে হল। একজন বৃদ্ধা বলেন, তাকে সকালে বাংলা ও ইংরেজি কাগজ রোজ পড়ে শোনাতে হবে। বিকেলে ধর্ম গ্রন্থ পড়ে শোনাতে হবে। মাসে পাঁচ হাজার। আমি লাফিয়ে উঠে বললাম – আমি কাজটা করব।

আপনার বাড়ি কোথায়?

–রাধাকান্ত জিউ স্ট্রীট।

-জায়গাটা কোথায়?

-দেশবন্ধু পার্কের কাছে।

-আমার বাড়ির কাছে। মুচি বাজার। হেঁটে গেলে পনেরো মিনিট।

-কবে আসছেন?

-কাল সন্ধ্যায়।

      রাতে বউকে সব বললাম। শুনে চুপ করে আছে রমা। আমি বললাম – কি হল কিছু বলছনা যে?

রমা বলে-কি বলবো? যে মানুষটি কোনদিন ঈশ্বরে বিশ্বাস করলো না। আমি পুজো করি বলে নানা ব্যঙ্গবিদ্রূপ করে। একবার ঠাকুরের সিংহাসন লন্ডভন্ড করে ছিল সেই মানুষ আজ ধর্ম কথা পাঠ করে টাকা আয় করবে।

-তাহলে কি করবো?

-অন্য কাজ কর।

-আমি তো কথা দিয়েছি তাকে।

-তাহলে আমাকে জিগ্যেস করছো কেন? 

-তোমার একটা ওপিনিয়ন—

-কথা দেবার আগে ভাবা উচিত ছিল। তুমি তো না খেয়ে নেই। মাথার ওপর ছাদ আছে। এই বয়সে আর কি চাও তুমি? অনেকের এটুকু নেই।

তোমার উদ্ধত আচরণ, হিটলারি মেজাজ। টাকা চাইতে হয় তোমার কাছে। তোমার মর্জি হলে দিলে, না হলে নয়। আমার নিজেকে তখন ভিখিরি মনে হয়-  এসব কথা বলতে পারলাম না।

-মনে হয় কাজটা তুমি করতে চাইছো। পাঁচ হাজার টাকার হাতছানি তোমাকে ডাকছে। যাও। কর। আমি জানবো আমার স্বামী ভন্ড।

         ছয়

সারাটা দিন নিজের সঙ্গে যুদ্ধ। একদিকে রমার আদর্শ অন্যদিকে  অসম্মানে বাঁচা। এক তীব্র জ্বালা। সন্ধ্যা পার করে রাত নামল।

মোবাইল বাজল-বলুন।

-আপনি তো এলেন না।

-একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে।

-সমস্যাটা কি শুনতে পারি?

-সকালে কাগজ পড়ায় কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু সন্ধ্যায় ধর্ম…. আমি ধর্মে বিশ্বাস করি না।

-আপনাকে কে ধর্মে বিশ্বাস করতে বলেছে? আমি কি একবারও একথা বলেছি?

-আমার ওয়াইফ চাইছেন না।

-কেন চাইছেন না?

-যেহেতু বিশ্বাস করি না…

-আপনাকে আবার বলছি এখানে বিশ্বাস অবিশ্বাসের কোন প্রশ্ন নেই। আমার চোখের রেটিনা শুকিয়ে গেছে তাই….এতদিন আমি নিজে পড়ে নিতাম।

ফোন নামিয়ে রেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। খালপারের নির্জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি একজন সত্তর বছর বয়সী মানুষ এখনও পৃথিবীর খবর জানতে চাইছে সেই সঙ্গে চাইছে তার ধর্ম যেন তার জীবনের সঙ্গে লিপ্ত থাকে। এ এক আশ্চর্য মানুষ। তার কথা ফেলে দেবার মতো নয়। এটাকে কাজ হিসেবে নিলেই হল। রমাকে সেকথা বললাম। রমা বলল-আমি জানি কর্মই ধর্ম।

-সেই ধর্মই কি এই কর্ম?

-এখন ওয়ার্ডে ব্যস্ত আছি। বেশি কথা বলতে পারছি না।

সাত

  পার হয়েছে এক বছর। সকাল আটটায় এসে এক ঘন্টা বাংলা, এক ঘন্টা ইংরেজি কাগজ পড়ে শোনাই। তখন বেলা দেবী চেয়ারে বসেন সোজা হয়ে। আগ্রহী শ্রোতার মতো। নামটা উনি একদিন নিজেই বলেছেন। কাগজ পড়া শেষ হলে টিফিন পর্ব চলে। তারপর আমি চলে আসি। উনি কোনদিন খবর শোনার পর কোন মন্তব্য করেন না। খুব কম কথা বলেন। রান্নার মাসি বলেছেন ওনার দুই ছেলে এক মেয়ে। ছেলেরা থাকে সবচেয়ে বড়লোক দেশটায়, নাম কি গো? আমেরিকা। ঐদেশে থাকে। ছেলেরা নিয়ে গিয়েছিল। উনি একমাস থেকে চলে এল।

-কেন?

-বলেছে আমারে, ঐদেশের লোকগুলি মানুষ না সারা দিন টাকা না কি যেন বলে—দূর ছাই মনে পড়ছে না।

-ডলার ?

-হ্যাঁ ডলার। ওর পিছনে ছোটে। কথা বলার লোক পাবে না তুমি। আমার গরীব দেশ ভাল। এক মাস যায় নি, চলে এল। আমাদের আবার ডাকল।

-মেয়ে কোথায়?

-কানেডারি।

-বুঝেছি। ওটা কানাডা হবে।

সকাল বেলা বেলা দেবী একা। সন্ধ্যায় অনেকে। কাজের মাসি রান্নার মাসি ড্রাইভার পাশের বাড়ির বউ বুড়ি সকলে। কোন বুড়ো আসে না। এ তল্লাটে বুড়ি যখন আছে। বুড়ো থাকতে হবে। তারা সব পার্কে বসে তাস খেলে। বেশ বড় ঘর। মেঝেতে শতরঞ্চি পাতা। তার এক কোণে একটা লাল কাপড়ে ঢাকা জলচৌকি। তার ওপর মোটা মহাভারত। পাশে তুলসী গাছ। আমি জলচৌকির কাছে গিয়ে বসি , এক কাপ চা শেষ করে। দু ঘন্টা পাঠ চলে। আদিপর্ব – সভাপর্ব  বনপর্ব –  বিরাটপর্ব – উদ্যোগপর্ব ভীষ্মপর্ব –  দ্রোণপর্ব –  কর্ণপর্ব-  শল্যপর্ব – সৌপ্তিকপর্ব – শান্তিপর্ব –  অনুশাসনপর্ব – মুষলপর্ব……

পাঠ শেষ হয় রাত আটটায়। তখন আর এক প্রস্থ চা। তারপর নেমে আসি সিঁড়ি দিয়ে।

আজও নামছি।

-শুনুন

আমি ঘুরে তাকাই। চাতালে বেলাদেবী দাঁড়িয়ে।

-একটা কথা আপনাকে বলবো বলবো ভাবছি ভুলে যাই। আপনি এত সুন্দর পাঠ করেন যে আমি ঐ যুগে চলে যাই। আজ বলবো বলে মনে করে রেখেছি।

-কি কথা বলুন?

-ধর্ম গ্রন্থ পাঠ করে আপনার কেমন লাগছে?

আমি রেগে গেলাম। বললাম – আপনি এইরকম প্রশ্ন কখনো করবেন না।

-স্যরি। আমি অজান্তে আপনাকে আঘাত দিয়ে ফেলেছি।

-আজ আমি আপনাকে একটা ভুল ভাঙিয়ে দিতে চাই।

-আমার? কি ভুল?

-আমি এখানে ধর্ম গ্রন্থ পাঠ করতে আসি না।

বেলাদেবী অবাক -কি বলছেন আপনি?

-হ্যাঁ। ঠিকই বলছি।

-তাহলে কি পাঠ করছেন?

-আমি পাঠ করছি মানুষের জীবন যুদ্ধের কাহিনী।

একথা শুনে বেলাদেবীর ঠোঁট মৃদু নড়ে উঠল। তিনি নি:শব্দে বললেন, – আজ কার ভুল ভাঙলো?

তার? না মৃদুল বাবুর?

প্রচ্ছদঃ সুমন মুখার্জী

*****