“জনবাদ”-এর ব্যবহার – প্রভাত পট্টনায়ক

১লা মার্চ ২০২০ তারিখে ‘Peoples Democracy’ পত্রিকায় ‘The uses of “populism” ‘ শিরোনামে এই প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে ‘Monthly Review’ পত্রিকায় এটি পুনঃপ্রকাশিত হয় (১২ ই মার্চ ২০২০)।
প্রচ্ছদ ঋণ: Monthly Review (Wikimedia Commons File-Bryan, Judge magazine, 1896.jpg – Wikimedia Commons)

লিংক: https://mronline.org/2020/03/12/the-uses-of-populism/

তত্ত্বের জগতেও শ্রেণীসংগ্রাম ঘটে থাকে। যেমন বিশ্ব ব্যাংক একটা অভিনব কৌশলে বামপন্থী ধারণাগুলির নিয়মমাফিক বিরোধিতা করে থাকে: তারা (অর্থাৎ বিশ্ব ব্যাংক) বাম শিবিরের ব্যবহৃত ধারণাগুলিকেই কাজে লাগায়, কিন্তু তারা সেই ধারণাগুলির সম্পূর্ণ আলাদারকম একটা অর্থ খাড়া করে। ফলত বামেরা যা বোঝাতে চেয়েছিলেন তার থেকে একদম ভিন্নার্থক কোন একটা জায়গায় সেই ধারণাটি উপনীত হয়, অথবা সেটি এমনই অস্পষ্টতা লাভ করে যে বামপন্থীদের জন্য আর ব্যবহারযোগ্য থাকেনা। অর্থাৎ দুটো ক্ষেত্রেই এই উপায় অবলম্বনে বামপন্থী প্রত্যয়গুলির যাথার্থ্যতাকে প্রশমিত করে দেওয়া যায়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একদা ‘কাঠামোগত’ (স্ট্রাকচারাল) শব্দটি বাম অভিধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। দক্ষিণপন্থী বুর্জোয়া মতবাদ যখন তৃতীয় বিশ্বকে এইটা বোঝাতে ব্যস্ত যে- “বাজারের হাতে সবকিছু ছেড়ে দাও”, তৃতীয় বিশ্বের বামপন্থীরা বরাবর এর সক্রিয় বিরোধিতা করে গেছেন। এক্ষেত্রে বামেদের যুক্তি ছিল যে তৃতীয় বিশ্বের এই দেশগুলির সমস্যার ধরণ মূলত ‘কাঠামোগত’ (তাদের বক্তব্য ছিল যে- এই কাঠামোর আমূল পরিবর্তন দরকার আর ভূমিসংস্কারের পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ জমির পুনর্বণ্টন)। আজকে বিশ্ব ব্যাংক নানারকম কৌশল করে ঘুরপথে ‘কাঠামোগত মীমাংসা’ (স্ট্রাকচারাল অ্যাডজাস্টমেন্ট) শব্দটিকে নিজেদের স্বার্থের উপযোগী করে নিতে পেরেছে; ইতিহাস সত্যিই পরিহাসপ্রিয়, বিশ্ব ব্যাংক এখন কৃষিকাঠামোর পরিবর্তনে নয় বরং বাজারমুখী ‘সংস্কার’ পদ্ধতিকে মান্য করে তোলার জন্য এই শব্দবন্ধকে ব্যবহার করে।

একই রকমভাবে আরেকটা শব্দ নেওয়া যাক- ‘উদারীকরণ’ (লিবারালাইজেশন)। তাদের সংস্কারমুখী কর্মসূচীগুলোকে ‘উদারীকরণ’ নাম দিয়ে দক্ষিণপন্থী বুর্জোয়া মতবাদ প্রচার করে যিনিই (বা যাঁরা) এর বিরুদ্ধাচরণ করবেন তিনিই নীতিগতভাবে অনুদার বা ইললিবারাল; অতএব সন্দেহাতীতভাবে ‘স্বৈরাচারপ্রিয়'(অথোরিটেরিয়ান) এবং ‘গণতন্ত্রবিরোধী'(অ্যান্টি-ডেমোক্রেটিক)। অথচ এটা নজরে আসেনা যে এই উদারীকরণের প্রভাব যেভাবে পড়ে সেটা উদারবাদের প্রচলিত অর্থের সম্পূর্ণ বিপরীত। এই প্রভাবের মধ্যেই আছে পুঁজির লাগামছাড়া আদিম সঞ্চয়। জনগণের বঞ্চনা, ছোট উৎপাদকের (পেটি প্রোডিউসার) অধিকার খর্ব হওয়া ইত্যাদি যার অনিবার্য পরিণতি। এছাড়াও এই প্রত্যেকটি ঘটনা যে তীব্র গণতন্ত্রবিরোধী তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। ঠিক এইজন্যই ব্যঙ্গ করে এমনটাও বলা হয় যে – “বোলসোনারো(প্রকৃতপ্রস্তাবেই যিনি একজন নির্মম অ্যান্টি-ডেমোক্র্যাট) দেশে ‘উদারনৈতিক কর্মসূচি’ গ্ৰহণ করেছেন।”

কিন্তু এই পদ্ধতির সবচেয়ে স্হূল এবং ক্ষতিকারক ব্যবহার দেখা যায় ‘জনবাদ’(পপুলিজম) শব্দবন্ধকে ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে , যার অন্যতম কারণ বামপন্থীদেরও একটা উল্লেখযোগ্য অংশ এর দ্বারা প্রভাবিত হন। রাশিয়ায় বৈপ্লবিক পরিবর্তনের রণকৌশল সম্পর্কে নারোদনিকদের অভিমত কী? – এই বিতর্ক উঠলে রাশিয়ান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক লেবার পার্টির সদস্যরা (মূলতঃ বলশেভিকরা) ‘পপুলিজম’ এর উল্লেখ করতেন। নারোদনিকরা চাইতেন রাশিয়ার সনাতন গোষ্ঠীজীবন অর্থাৎ গ্ৰামীণ কমিউন বা মির থেকে সরাসরি সমাজতন্ত্রে উত্তরণ। অন্যদিকে বলশেভিকদের যুক্তি ছিল মিরগুলির আর অপৃথকীকৃত অস্তিত্ব থাকতে পারে না কারণ রাশিয়ায় খুব দ্রুতগতিতে পুঁজিবাদের বিকাশ ঘটার ফলে মিরগুলি ধ্বংসপ্রাপ্ত হচ্ছে । সুতরাং শহরের নবগঠিত শ্রমিকশ্রেণীকেই হতে হবে বিপ্লবের অগ্ৰদূত। লেনিন ‘রাশিয়ায় পুঁজিবাদের বিকাশ’(১৮৯৯) বইতে এই বিষয়ে বিস্তৃত পর্যালোচনা করেছেন।

‘জনগণ’(পিপল) কে একরকম বৈষম্যহীন ব্যক্তিসমষ্টি হিসেবে দেখার যে প্রবণতা তাকে ব্যাখ্যা করতেই ‘জনবাদ’ বা ‘পপুলিজম’ শব্দের আমদানি। মার্ক্সীয় সমালোচকদের মতে জনগণের মধ্যে যখন বৈষম্য ক্রমশঃ উর্ধ্বমুখী , ঠিক তখনই এই প্রবণতা কাজ করতে শুরু করেছিল। যদিও এটা অস্বীকার করা যাবেনা যে মার্কসবাদীরাও ‘জনগণ’ শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন,যেমন ‘জনগণের গণতান্ত্রিক একনায়কত্ব’; কিন্তু তারা ‘জনগণ’কে দেখেছিলেন নির্দিষ্ট শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে- নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস অনুসারে, কোন সমসত্ত্ব জনপিন্ড হিসেবে নয়।

অনেক পরে, ১৯২০ সাল নাগাদ এইরকম একটা ধারণার পুনরুত্থান ঘটে যে রাশিয়ার গ্ৰামাঞ্চলে নাকি কৃষকদের মধ্যে শ্রেণীবৈষম্য ছিলনা। মূল পার্থক্য ছিল তাদের পরিবারপিছু সদস্যসংখ্যায়, কিন্তু মাথাপিছু সম্পত্তির পরিমাণে খুব বেশি তফাৎ ছিলনা। এই মতবাদের অন্যতম প্রণেতা ছিলেন এ ভি শায়ানভ (A V Chayanov), যাকে ‘নব্য জনবাদী’ বা ‘নিয়ো পপুলিস্ট’ বলা হতো। তার কারণ- কৃষিজীবিরা যে তাদের শ্রেণীঅবস্থানজনিত কারণে পৃথকীকৃত ছিলনা এই পুরনো জনবাদী ধারণাটির তিনি নতুন করে পুনরুত্থান ঘটান।

আজকাল অবশ্য ‘জনবাদ’ শব্দটি প্রায়শই একদম ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থানুসারে ‘জনগণ’ এর সামাজিক অবস্থান তথাকথিত ভদ্রলোক বা ‘এলিট’ শ্রেণীর একদম বিপরীতে। যে পদক্ষেপগুলি ‘জনগণ’কে স্পর্শ করে কিন্তু এলিটদের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে খাপ খায়না সেগুলিই সামাজিক সমর্থন লাভ করে। জনবাদের এই ধারণাটি এতটাই ধোঁয়াটে যে অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টন ব্যবস্থা থেকে আরম্ভ করে বিশেষ কোন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে উন্মত্ত সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো- সবকিছুই এই জনবাদের আওতায় ঢুকে পড়ে।

বিভিন্ন বিপরীতধর্মী ধ্যানধারণার জগাখিচুড়ি ,অতীব স্থিতিস্থাপক এই ধারণাটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তোলার জন্য তাই ‘বামপন্থী জনবাদ’ আর ‘ডানপন্থী জনবাদ’- এই দুইয়ের মধ্যে তফাৎ করা শুরু হল। অর্থনৈতিক পুনর্বণ্টন ব্যবস্থাগুলিকে বামপন্থী জনবাদের অন্তর্ভুক্ত করা হল,অন্যদিকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ উসকে দেওয়ার নাম দেওয়া হল ‘দক্ষিণপন্থী জনবাদ’।
সেইহেতু আপাতদৃষ্টিতে এরকমটা মনে হতে পারে যে এই শূন্যগর্ভ বামপন্থী ও দক্ষিণপন্থী জনবাদের মাঝামাঝি ‘জনবাদ’মুক্ত একটা নৈতিক মধ্যপন্থা আছে। কিন্তু অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে যেটা বেরিয়ে আসে সেটা হল এই মধ্যপন্থা প্রকৃতপ্রস্তাবে অর্থনীতির আঙিনায় ধ্রুপদী নয়া উদারবাদী পলিসিগুলোর অনুবর্তন মাত্র যা রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্ষেত্রে উদারনৈতিক বুর্জোয়া আদর্শগুলোর বশ্যতাবাহী। সংক্ষেপে বলতে গেলে এভাবেই ‘জনবাদ’ নামক ছোট্ট শব্দটিকে উদারনৈতিক বুর্জোয়া সন্দর্ভের অন্তর্গত করে নেওয়া হয়।
এই সন্দর্ভ অনুসারে পুনর্বণ্টনবাদী কর্মসূচীগুলো ‘জনবাদী’ (অতএব অপরিণামদর্শী) কারণ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির (economic growth) ক্ষতির বিনিময়ে এই কর্মসূচীগুলো রাষ্ট্রীয় সংস্থানের অপচয় ঘটায়; অর্থাৎ এই তত্ত্বের আড়ালে যে কথাটা নিহিত থাকে তা হল অর্থনৈতিক বৃদ্ধি শেষপর্যন্ত গরিবদের জন্য হিতকর। সংক্ষেপে বলা যেতে পারে যে বৃদ্ধির ‘চুঁইয়ে পড়া’ প্রভাব যেভাবে কাজ করে এই তত্ত্ব তাকেই সমর্থন যোগায়।  যদিও এই ‘চুঁইয়ে পড়া’ তত্ত্ব যে একেবারে ভুয়ো একটা ধারণা, সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ সেইদিকেই অঙ্গুলিনির্দেশ করে। 

অথচ এর পরেও সারা পৃথিবীর অধিকাংশ পন্ডিত এমনকি বামপন্থীদের একটা বড় অংশ এই উদারনৈতিক বুর্জোয়া অর্থেই ‘জনবাদ’ শব্দটাকে ব্যবহার করেন। আরো নির্দিষ্ট করে বললে বিশ্বব্যাপী দক্ষিণপন্থী উত্থানের ধারাবাহিকতাকে বৈশিষ্ট্যায়িত করতেই তারা এই শব্দটিকে ব্যবহার করে থাকেন। সুতরাং ধর্মীয় বা জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের দাবিতে সোচ্চার সবরকম ফ্যাসিস্ট, আধা-ফ্যাসিস্ট ও আপাত-ফ্যাসিস্ট আন্দোলন ‘জনবাদী’র মতো শব্দের দৌলতে ছাড়পত্র পেয়ে যায়; যেসমস্ত প্রগতিশীল আন্দোলন ও সরকার জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব নয় বরং গরিবদের স্বার্থে পুনর্বণ্টন প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানায় পরোক্ষভাবে তাদের সাথে একাসনে বসিয়ে এই আন্দোলনগুলোর বিচার করা আরম্ভ হয় |

এই চরিত্রায়ন সুচারুভাবে আন্দোলনগুলোর শ্রেণীচরিত্রকে বিলুপ্ত করে, আন্দোলন বা শাসনব্যবস্থার শ্রেণীসত্তাটিকে অস্পষ্ট করে দেয় এবং সেগুলির শ্রেণীবিশ্লেষণের উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করে। মনে করা হয় যে একটা ধর্মীয় বা জাতিগোষ্ঠীর ক্ষমতায় উঠে আসা আর সমাজে ঘৃণার চাষ শুরু হওয়া- এসবই একটা আকস্মিক ও ব্যাখ্যাতীত (বড়োজোর কিছু শর্তসাপেক্ষ) ঘটনাক্রম যার সাথে নাকি পুঁজিবাদ বা বিদ্যমান সামাজিক রূপরেখার কোন সম্পর্ক নেই।

এছাড়াও এই আন্দোলনগুলোর আরেকটা সমান্তরাল চরিত্রায়ন ঘটে, যাকে নাম দেওয়া যায় ‘জাতীয়তাবাদী’ চরিত্রায়ন। যেটা আবারও গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলোকে (যেমন ‘উপনিবেশ-বিরোধী জাতীয়তাবাদ’ এবং ‘আধিপত্যকামী জাতীয়তাবাদে’র মধ্যের সূক্ষ্ম ভেদরেখাকে) সম্পূর্ণভাবে অন্তর্হিত করে দেয়।। এই ধরনের আন্দোলনগুলোকে ‘জাতীয়তাবাদী’ তকমা দেওয়া এবং ‘জাতীয়তাবাদ’ ধারণাটাকেই আধিপত্যবাদী হিসাবে দেখানো পক্ষান্তরে তাই উপনিবেশবিরোধী ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয়তাবাদের লড়াইকেই নস্যাৎ করে। এই দর্শন তাই পরোক্ষে সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নেরই গুণকীর্তন করে, বিশ্বায়নের ধারণা থেকে নূন্যতম বিচ্যুতি অথবা আন্তর্জাতিক লগ্নিপুঁজির আগ্ৰাসনকে অগ্ৰাহ্য করে যে কোনরকম স্বাধীন পলিসি অনুসরণের উদ্যোগকে ‘জাতীয়তাবাদী’ (সুতরাং প্রতিক্রিয়াশীল) বলে দেগে দেয়।

তাই ‘জাতীয়তাবাদ’কে একটা সমসত্ত্ব বর্গ হিসেবে বিবেচনা করা একেবারেই অযৌক্তিক। হিটলারি ‘জাতীয়তাবাদ’ আর গান্ধীবাদী ‘জাতীয়তাবাদে’র মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। বিবিধ পরস্পরবিরোধী ঘটনাবলীকে একটিমাত্র সমগোত্রীয় বর্গের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার এই নজির মুক্তিকামী, প্রগতিশীল আন্দোলনগুলোর সামনে একটা দুরূহ সমস্যা হাজির করে। অথচ বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ এমনকি বামপন্থী শিবিরেরও অনেকে সবরকম ‘জাতীয়তাবাদ’কে একীভূত করে দেখবার এই ছেঁড়া জুতোয় পা গলান।

কখনো কখনো সারা পৃথিবী জুড়ে ঘটে চলা আধিপত্যবাদী দক্ষিণপন্থী আন্দোলনগুলোকে অভিহিত করতে ‘জাতীয়তাবাদী-জনবাদী’ এই শব্দদ্বৈত প্রয়োগ করা হয়। এটা দ্বিগুণ মাত্রায় আপত্তিকর কারণ জাতীয়তাবাদ এবং জনবাদ এই দুইয়ের অপৃথকীকৃত ক্ষতিকারক সত্তাকে এই শব্দবন্ধ মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দেয়।

অতএব এটা দেখা গেল ‘জনবাদ’ শব্দের যে মৌল অর্থ, অর্থাৎ ‘জনগণ’কে তাদের শ্রেণীবৈশিষ্ট্যানুসারে অপৃথকীকৃত ভাবে দেখা তার বিশেষ রূপান্তর ঘটে গেছে। এই রূপান্তর একদিকে দক্ষিণপন্থী অনৈতিক আগ্ৰাসনকে আড়াল করে, অন্যদিকে স্বার্থশূন্য উদ্যোগের ভেক ধরে গরিবদের স্বার্থবাহী বিভিন্ন পুনর্বণ্টনবাদী অর্থনৈতিক উদ্যোগের সাথেও গাঁটছড়া বাঁধে। এছাড়াও তীব্র অর্থনৈতিক সংকট কালে পুঁজিবাদ লালিত ফ্যাসিস্ট, আধা-ফ্যাসিস্ট, প্রোটো-ফ্যাসিস্ট এবং আধিপত্যকামী প্রবণতাগুলোর ক্রমশঃ শক্তিশালী হয়ে ওঠা কীভাবে পুঁজিবাদের ঢাল হয়ে ওঠে সেই সম্পর্কে মার্ক্সীয় বিশ্লেষণের যে ঐতিহ্যবাহী ইতিহাস আছে , এই পদ্ধতিতে তাকে পিছনের সারিতে ঠেলে দেওয়া হয়। উদারনৈতিক বুর্জোয়ারা বলাই বাহুল্য মার্ক্সীয় বিশ্লেষণকে গ্ৰহণ করবেন না, কিন্তু মার্ক্সবাদী বিশ্লেষণকে অগ্ৰাহ্য করে উদারনৈতিক বুর্জোয়া তত্ত্বে আশ্রয়গ্ৰহণ বামপন্থীদের একাংশের মতাদর্শগত দৈন্যতার পরিচয় বই কিছু নয়।।

*****

অনুবাদ: চিরায়ত কুশারী