থার্ড লেনঃ বাংলা সাহিত্যে অ্যাবসার্ড নাটকের প্রসঙ্গে আসার আগে যদি অ্যাবসার্ড নাটকের শুরুর ইতিহাসটা সংক্ষেপে বলেন…
রুচিরাঃ 1961 সালে গবেষক মার্টিন এসলিন প্রথম ‘অ্যাবসার্ড নাটক’ শব্দটি ব্যবহার করেন। তিনি স্যামুয়েল বেকেট, আর্থার অ্যাডামভ, ইউজেন আয়োনেস্কো, জা জেঁনে ও হ্যারল্ড পিন্টার এর বেশ কয়েকটি পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত নাটককে অ্যাবসার্ড নাটক বলে চিহ্নিত করেন। নাটকগুলি রচিত হয়েছিল ঠিক তার আগের দশক (1950-1960) ধরে। এক্ষেত্রে বেকেটের Waiting for Godot (1952), Endgame (1957), আয়োনেস্কোর The bald prima donna (1950), The chairs (1951), Amedee (1953), The killer (1957), পিন্টারের The birthday party (1960)ইত্যাদি নাটকের নাম করা যায়। কাকতালীয় ভাবে হলেও এইসব নাটককারেরা বেশির ভাগই ফরাসি ভাষায় লিখেছেন। অথচ সবাই জন্ম সূত্রে ফরাসি নন। বেকেট আইরিশ, অ্যাডামভ রুশ। তবু বলা যায় যে অ্যাবসার্ড নাটকের জন্ম ফ্রান্সে।
থার্ড লেনঃ অ্যাবসার্ডিট নাটকের মূল সুরটির বা অন্তর্গত দর্শনের দিকে তাকালে কি একে আধুনিক ধনতান্ত্রিক সমাজকাঠামোর ফলশ্রুতি বলে মনে হয়?
- অ্যাবসার্ড নাটক মূলত ‘অদ্ভুতত্ব’ এর কথা বলে। অস্তিত্ববাদী দার্শনিক সাত্র জীবনের শূন্যতার কথা বললেও তাকে রূপ দিয়েছেন চিরায়ত গল্পের পরিবেশে। কিন্তু অ্যাবসার্ডিস্টরা শূন্যতাকে অদ্ভুতত্বের মধ্যে দিয়ে রূপায়িত করলেন। অধ্যাপক পবিত্র সরকার এই অদ্ভুতত্বকে আবার নানাদিক (অদ্ভুত বিষয়, অদ্ভুত সংলাপ, অদ্ভুত ক্রিয়া) থেকে দেখিয়েছেন নাটমঞ্চ নাট্যরূপ গ্রন্থে। যাইহোক, জীবন অর্থহীন, ভাষা মানুষের মনোভাব ব্যাখ্যায় অসমর্থ, দৈনন্দিন জীবন পৌনঃপুনিকতায় ভর্তি – এইসব বিষয়ে বিশ্বাস অবশ্যই উনিশ-বিশ শতকের উগ্র ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থারই নেতিবাচক ফলশ্রুতি। অনেক নাটকে সরাসরি ধনতান্ত্রিক পরিবেশের প্রতি ব্যঙ্গ করা হয়েছে। যেমন Waiting for Godot এ লাকি ও পোজো এর মাধ্যমে ধনী ও দরিদ্র শ্রেনির মধ্যেকার টানাপোড়েনের কথা বলা হয়েছে।
থার্ড লেনঃ একই প্রসঙ্গে- রাজনৈতিক অস্থিরতার সাথে অ্যাবসার্ডিটির কোনো যোগ আছে? (যদি থাকে) যুদ্ধ বা রাজনৈতিক অস্থিরতা তো মানুষের ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। তাহলে বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই কেন অ্যাবসার্ড নাটক সংহত রূপ নিচ্ছে? রাজনৈতিক অস্থিরতা ছাড়া অ্যাবসার্ডিটির আর কি কি প্রিকন্ডিশন থাকতে পারে?
- যদিও গবেষকদের মতে অ্যাবসার্ড নাটকের জন্মদাতা আলফ্রেড জারি, নাটক Ubu roi (1888); তবু বলা যায় আয়োনেস্কোর The bald prima donna (1950) নাটকের মাধ্যমে এই জাতীয় নাটকের মূল ধারাটি শুরু হয়েছে। দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ ইউরোপের মানুষের বিজ্ঞান-যুক্তি সবকিছুর থেকে বিশ্বাস ভঙ্গ করে দিয়েছিল। শিল্প বিপ্লব, যন্ত্র বিপ্লব, ডারউইনের Theory of Existentialism, ফ্রয়েডের মনোবিকলন তত্ত্ব মানুষের মননকে করে তুলল জটিলতর। আধুনিকতা আমাদের দেববাদ থেকে যুক্তিবাদের উপর স্থাপন করেছিল। উত্তর আধুনিকতা মানুষকে বিশ্বাসহীনতায় পৌঁছে দিল। রাজনৈতিক অস্থিরতা, টাকার মানের অবনমন, মৌল অধিকার লঙ্ঘন মানুষকে করল দিশাহীন। তাই inner reality কে রূপ দিতে প্রতীকায়িত করতে হল ভাবনাকে। আর ক্রমাগত তা হয়ে উঠল দুর্বোধ্য। আর এইসব কারণেই বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অ্যাবসার্ড নাটকের ধারাটি পুষ্ট হয়।
থার্ড লেনঃ বাংলায় কোন কোন নাট্যকারের নাট্যভাবনায় অ্যাবসার্ডিটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল?
- বাংলা বললে যদি আমরা এপার বাংলা আর ওপার বাংলা দুটোই বুঝি, তাহলে বলা যায় এপার বাংলার মোহিত চট্টোপাধ্যায়, ইন্দ্র উপাধ্যায়, নভেন্দু সেন, দীপক মজুমদার আর ওপার বাংলার সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্, সাঈদ আহমেদ প্রমুখের উপর অ্যাবসার্ডিটির প্রভাব আছে।
থার্ড লেনঃ (বাংলায়) কোন কোন নাটককে অ্যাবসার্ডধর্মী বলে চিহ্নিত করা যায়?
- মোহিত চট্টোপাধ্যায় – কণ্ঠনালীতে সূর্য (1963), নীলরঙের ঘোড়া (1964), মৃত্যুসংবাদ (1965), গন্ধরাজের হাততালি (1966), চন্দ্রলোকে অগ্নিকাণ্ড (1966)
ইন্দ্র উপাধ্যায় – টেরোড্যাকটিল (1966)
নভেন্দু সেন – নয়ন কবিরের পালা (1971)
দীপক মজুমদার –বেদানার কুকুর ও অমল
সাঈদ আহমদ – কালবেলা (1963), মাইলপোস্ট (1976)
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ – উজানে মৃত্যু (1963), তরঙ্গভঙ্গ (1964)
মোটের উপরে দুই বাংলায় এইসব নাটকগুলোই অ্যাবসার্ড নাটক।
থার্ড লেনঃ বাংলায় ৬০-৭০ এর দশকে যাঁরা ভিন্নধারার নাটক লিখছেন তাঁদের মধ্যে বাদল সরকার অন্যতম। তাঁর কোনো নাটককে কি অ্যাবসার্ড নাটক বলা যায়?
- যদিও অধ্যাপক পবিত্র সরকার তাঁর নাটমঞ্চ নাট্যরূপ এ বাদল সরকারের এবং ইন্দ্রজিত্ কে অ্যাবসার্ড নাটক নয় বলে প্রমাণ করেছেন তবু একথা বলতেই হয় যে বাদল সরকারের এবং ইন্দ্রজিত্ ও বাকি ইতিহাস নাটক দুটি অ্যাবসার্ড নাটকের লক্ষণাক্রান্ত। ইন্দ্রজিত্ চরিত্রের ব্যাখ্যায় বাদল বাবু নিজেই বলছেন, ‘ইন্দ্রজিত্ কোনো চরিত্র নয়, একটা প্রোটোটাইপ’। দুটি নাটকই well made play নয়। পারিবারিক ছকে বাঁধা সম্পর্কে শূন্যতা, জীবনের অর্থহীনতা, স্বপ্ন বাস্তবতার মাঝে দোদুল্যমান মানব চেতনা এই দুটি নাটককে অ্যাবসার্ড নাটকের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে।
থার্ড লেনঃ বাংলায় অ্যাবসার্ড নাটকের জনপ্রিয় না হওয়ার কারণ কি এই যে ৬০-৭০ এর দশকে বামপন্থী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে একপ্রকার মুক্তিকামী আশাবাদ শিল্পীদের আচ্ছন্ন করেছিল, যার ফলে শূন্যতা বা অর্থহীনতার দর্শন তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি?
- মোহিত চট্টোপাধ্যায় বলেছ, “এটা ঘটনা কোনো কোনো নাটককার নতুন ধারায় নাটক লিখতে চেয়েছেন, নাটক লিখেছেন। কিন্তু তাঁরা বাংলা থিয়েটারকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। দু একজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকে গেছে। সেটা স্বাভাবিকভাবে সঞ্চারিত হতে পারেনি। এই অন্যধারার অভিনব পথে যে নাটকের পরীক্ষা নিরীক্ষা আরও হতে পারে, তাই প্রয়োজনীয় আরও নাটক দেখার সেটা হয়নি। বাংলা থিয়েটার গ্রহণ করেনি এই পথকে। ফলে এই ধারা একটি ব্যতিক্রমী ধারা হিসেবে থেকে যায়। মূল ধারার বিষয় হয়ে উঠতে পারে না।” আসলে ভারতীয় দর্শন ‘চরবৈতি’ তে আস্থা রাখে। বিপন্নতা, বিষন্নতার অন্তিমে থাকে মুক্তি। থাকে পুনর্জন্ম এর আশ্বাস। তাই বিচ্ছিন্নতাবাদ এখানে চিরসত্য নয়। তার উপরে আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে যেখানে নিত্য দিনের জীবন সংগ্রামই একমাত্র সত্য; সেখানে শৌখিন অবসন্নতার থেকে বামপন্থী রাজনীতির সংগ্রাম চেতনা ও আশাবাদ অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আর অ্যাবসার্ড নাটক হয়ে রইল Intellectual exercise এর একটি নিদর্শন।
থার্ড লেনঃ পাশ্চাত্যের অ্যাবসার্ড নাটকের সাথে বাংলার অ্যাবসার্ড নাটকের কোনো মূলগত পার্থক্য আছে?
- প্রথমেইবলে রাখি যে বাংলায় বিশুদ্ধ অ্যাবসার্ড নাটক লেখা হয়নি। এখানে যে নাটক লেখা হয়, তা অ্যাবসার্ডধর্মী। তাই পাশ্চাত্য নাটকের মানদণ্ডে যাচাই করলে বাংলা নাটকের বহিরাঙ্গিক এবং অন্তরঙ্গের পার্থক্য খুব স্পষ্ট। অবশ্য সাদৃশ্যও কিছু কম নয়।
- প্লটের গঠনের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যে পাশ্চাত্যে কোনো গল্প বলার দিকে তেমন আগ্রহ দেখি না (Waiting for Godot, The Lesson, The Chairs)। তুলনায় প্রাচ্য নাটককারেরাগল্প সাজিয়েছেন ( নল রঙের ঘোড়া, টেরোড্যাকটিল)
- পাশ্চাত্যে মৃত্যুর মোটিফটিকে অর্থহীন বলে প্রমাণ করেছেন (The Chairs), আর বাংলায় মৃত্যু মুক্তির উপায় (উজানে মৃত্যু)।
- স্বপ্নদৃশ্য Metaphysical থেকে হয়ে উঠেছে Psychological ।
- যৌনতা থাকলেও মানব মানবীর ভালোবাসা এ জাতীয় নাটকে দেখানো হয় না। বরং সম্পর্কের ভাঙন, শূন্যতা ইউরোপীয় নাটকের মূল (Amedee, The bald prima donna)। অথচ বাঙালি নাটককারেরা মানব প্রেমে আস্থাশীল (চন্দ্রলোকে অগ্নিকাণ্ড, গন্ধরাজের হাততালি)।
এরকম বেশ কিছু পার্থক্য আছে তো বটেই।
থার্ড লেনঃ বাংলা অ্যাবসার্ড নাটকের মঞ্চসজ্জা বা আলোর ব্যবহারে কি কোনো বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখা যায়?
- প্রশ্নটি করার জন্য ধন্যবাদ। আমরা যদি অ্যাবসার্ড নাটকের আঙ্গিক, বিষয় নিয়ে আলোচনা করি তবে অবশ্যই তার প্রয়োগ বৈশিষ্ট্য নিয়েও কিছু বলতেই হয়। মঞ্চসজ্জায় প্রতীকের ব্যবহার অ্যাবসার্ড থিয়েটারের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। আরও একটি বিষয়কে আমরা গুরুত্ব পেতে দেখব, তা হল উদ্ভটত্ব। এক্ষেত্রে উপকরণ বা props এর পাশাপাশি দৃশ্যায়নের অসঙ্গতিও চোখে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শূন্য মঞ্চ, শূন্য প্রেক্ষাপটে কিছু প্রতীকী উপকরণের বহুমাত্রিক ব্যবহারের মাধ্যমে এইসব নাটকগুলি মঞ্চস্থ করা হয়। রিয়ালিস্টিক বা অতিরিক্ত সাজসজ্জা এখানে প্রয়োজনীয় নয়। তবে প্রতিটি উপকরণ নাটকের অর্থ প্রকাশে সহায়ক। যেমন Waiting for Godot এ মঞ্চে আছে একটা মেঠো পথ, একটা বট গাছ। আবার আবার Endgame এ একটি আর্ম চেয়ার আর দুটো ashbin দেখানো হয়েছে। দুটো জানলা পর্দা দিয়ে ঢেকে নাট্যকার প্রমাণ করতে চাইলেন ‘there is no more nature….’
আলো এখানে ব্যবহার করা হয় অভিনেতা ও উপকরণকে স্পষ্ট করার জন্য। যেমন The dumb waiter এ আগাগোড়া স্বল্পালোকে চরিত্ররা রহস্যজনকভাবে সংলাপ বিনিময় করছে। কণ্ঠনালীতে সূর্য তে স্বপ্নদৃশ্যে মায়াবী আলো ব্যবহৃত। আবার সাঈদ আহমদের মাইলপোস্ট –এ রয়েছে gray light এর কাজ। আলোর জটিল প্রয়োগ অ্যাবসার্ড নাটককে করে তোলে মোহময়। যদিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আলোর পরিবর্তে অন্ধকারাচ্ছন্নতা inner reality কে রূপ দিয়েছে।
থার্ড লেনঃ আজকের বিচারে বাংলায় লেখা কোন নাটককে কালজয়ী/ ক্লাসিক বলে মনে হয়?
- কোনো লেখা কালজয়ী কিনা সেটা একমাত্র সময় নির্ধারণ করতে পারে। আমার ব্যক্তিগত মতামত এই যে নাটকের স্ক্রিপ্ট ভালো হলেই যে তা ভালো থিয়েটার হবে এমনটা নয়। আবার সময়ের চাহিদাও বদলাচ্ছে নিয়মিত। কথাকৃতি 2019 এ নয়ন কবিরের পালা এর সফল মঞ্চায়ন করে। কিন্তু আজকের দর্শক এই নাটকের প্রতীক, দুর্বোধ্য সংলাপ ধৈর্য সহকারে দেখতে ইচ্ছুক নয়। আবার যদি বলি অ্যাবসার্ড নাটক একটি বিশেষ সময়ের ফসল, তবে প্রশ্ন উঠবে তাহলে আজও কেন মৃত্যুসংবাদ এর মতো নাটক মঞ্চস্থ হয়? আবার ব্রাত্য বসু লেখেন ভাইরাস এম। যেখানে The Rinosaurs এর মতো মানুষগুলো সব পশুতে পরিণত হয়। অ্যাবসার্ড নাটকের বাইরে গিয়ে কিছু বলতে হলে অবশ্যই মনোজ মিত্রের কিনু কাহারের থেটার, নরক গুলজার, অরুণ মুখোপাধ্যায়ের মারীচ সংবাদ, ব্রাত্য বসুর উইঙ্কল টুইঙ্কল, রুদ্ধসংগীত, নটসেনার গরুর গাড়ির হেডলাইট , উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের ম্যাকবেথ, এক মঞ্চ এক জীবন প্রমুখের কথা বলাই যায়।
থার্ড লেনঃ বাংলা অ্যাবসার্ড নাটকগুলিতে কি কোনো থিমের বা মোটিফের সাদৃশ্য ও রিপিটেশন দেখা যায়?
- মোটিফের পুনরাবৃত্তি আছে বলেই একটি গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়েছে বেশ কয়েকটি পরস্পর সাদৃশ্য নাটককে।
- ক্লান্তি – প্রায় প্রতিটি নাটকে এই মোটিফটি ব্যবহার করা হয়েছে। কণ্ঠনালীতে সূর্য তে লোকটি বলেছে, “আমি অত ছুটতে পারিনা, বড্ড কুঁড়ে”। আসলে ক্লান্ত। মৃত্যুসংবাদ এ সুশান্ত বলে, “let the tired soul sleep”। আবার আবার কালবেলা এর লোকটি বারবার বলছে ‘একঘেয়ে লাগছে আমার’।
- ঘুম – ক্লান্তি দূর হচ্ছে না কিছুতেই অথচ ঘুমের শান্তিও অমিল। নীল রঙের ঘোড়া এর সোমনাথ, গন্ধরাজের হাততালি এর মীরা কেউই ঘুমোতে পারে না। আবার তরঙ্গভঙ্গ নাটকের জজসাহেব চেতনার অবসন্নতার কারণে ঘুমিয়েই আছেন।
- স্বপ্ন – প্রায় প্রতিটি নাটকে এই মোটিফটি ব্যবহার করে দুটো সমান্তরাল জগতের কথা তুলে ধরা হয়েছে। মানুষের সকল চাওয়া, না পাওয়ার যন্ত্রণা, কখনো ভয় স্বপ্ন বা দুঃস্বপ্নের রূপকে নাটককে পরাবাস্তবের কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে।
- ভয় – যে বিপন্ন সময়ের ধারাভাষ্য এই নাটকগুলি, তাতে চরিত্রের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হিসেবে ভয়ের ব্যবহার খুব স্বাভাবিক। ঈশ্বরে আস্থা থেকে মানুষ যত দূরে সরেছে, অজানার আতঙ্ক ততই তাকে গ্রাস করেছে।
এছাড়াও একঘেয়েমি, বিচ্ছিন্নতা প্রভৃতি বিষয় থিম হিসেবে অনেক নাটকেই ব্যবহৃত হয়েছে।
থার্ড লেনঃ আপনি দুই বাংলার অ্যাবসার্ড নাটক নিয়ে কাজ করেছেন। বাংলা ভাষায় লেখা কোনো উপন্যাসের কথা কি মনে পড়ছে যাকে অ্যাবসার্ডধর্মী বলে বর্ণনা করা যায়?
- সত্যি কথা বলতে কি কাম্যু এর The Outsider (1942), The Plague (1947), The fall(1956) এমন সব উপন্যাস, যা অ্যাবসার্ড দর্শনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু বাংলায় এই জাতীয় উপন্যাস খুব একটা চোখে পড়ে না। মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম জীবনের কয়েকটি কবিতা অ্যাবসার্ড ধর্মী। তবে এই discipline টি আর কোনো জাঁরে বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণে অর্ণব চক্রবর্তী