থার্ড লেনের পক্ষ থেকে নাজমুল সুলতানের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছেন
অর্ণব চক্রবর্তী
থার্ড লেন~ ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধকে বলা হয় স্বাধীনতা সংগ্রাম (ফ্রিডম স্ট্রাগল)। আর পাকিস্তানের আধিপত্য থেকে বাংলাদেশের বেরিয়ে আসার যুদ্ধকে বলা হয় মুক্তিযুদ্ধ (লিবারেশন ওয়ার)। ফ্রিডম আর লিবারেশনের মধ্যে পার্থক্য কি? এই দুটি শব্দের পার্থক্য কি শুধু এর ব্যবহারে (ঔপনিবেশিক/উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রসঙ্গনির্ভর) নাকি কিছুটা মূলগত অর্থেও?
নাজমুল সুলতান~ চমৎকার প্রশ্ন। শব্দের ইতিহাস নিয়ে চিন্তাভাবনার যেমন বিশেষ কিছু ফায়দা আছে তেমনি কিছুটা বিপদও আছে। বিশেষত রাজনৈতিক ক্ষেত্রে। শব্দ তো কেবল পূর্বঘটিত অর্থের বাহক নয়। তারা একদিকে নির্দিষ্ট একটা ভাবজগতের মুদ্রা। আবার আরেকদিকে নতুন অর্থের জন্মপ্রক্রিয়ার স্মারকও বটে। শব্দ আর ধারণার মাঝখানের জায়গাটা সমতল নয়। কোথায় কোন শব্দ কেবল একটি সংকেত আর কোথায় তাদের অর্থের মোচড় ঘটছে সেটা প্রসঙ্গ ও চিন্তার ইতিহাস ব্যতিরেকে বোঝা দুষ্কর। শব্দকে বস্তু আকারে দেখলে তাই নানা বিপত্তি তৈরি হয়।
এবার আপনাদের মূল প্রশ্নে আসা যাক। ভারতবর্ষের সুদীর্ঘ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলকে “স্বাধীনতা সংগ্রাম” হিসাবে অভিহিত করাটা যত চিরন্তন মনে হয় আদতে তা নয়। ব্রিটিশ আমলের শেষদিকে এসেই এই অভিধা প্রতিষ্ঠিত হয়। তার কারণ একাধিক। কিন্তু দুইটা কথা না বললেই নয়।
প্রথমত, বিদেশী শাসন অবসান করার যে আন্দোলন বা বাসনা তার নাম কি হওয়া উচিত সে নিয়ে অবিভক্ত ভারতবর্ষে নানা তর্ক জারি ছিল। বিশ শতকের পয়লা তিনদশক জুড়ে যে শব্দ উপনিবেশবিরোধী ভাবুক ও রাজনৈতিক কর্মীদের আবিষ্ট করে রেখেছিল তা স্বাধীনতা নয় বরং স্বরাজ। স্বরাজ শব্দের জোরটা ছিল “রাজ” বা rule-এর প্রতি। এই শব্দ ও ধারণা যাদের হাতে বিকশিত হয় তাদের একটা বড় অংশ স্বরাজ বলতে ভারত-নিয়ন্ত্রিত সরকার বলে ভাবতেন। আবার মহাত্মা গান্ধীর প্রস্তাবের (অর্থাৎ ব্রিটিশবিতাড়ন-কেন্দ্রিক স্বরাজভাবনা “English rule without the English man”-এর শামিল) প্রভাবও কম ছিল না। স্বরাজ শব্দের একটা শক্তি ছিল, কারণ আত্মশাসনের প্রতিশ্রুতি ও দ্বন্দ্ব তা ধারণ করতে পেরেছিল।*
আপনারা জানেন যে স্বাধীনতা শব্দের স্ফূরণ তার আগের শতকেই অর্থাৎ উনিশ শতকে ঘটেছিল। কিন্তু সেই শতকের শেষদিকে এসে স্বাধীনতার অর্থের একটা সংকট তৈরি হয়। স্বাধীনতা মানে যদি নেহাত স্বজাতির শাসন হয় তবে তার দার্শনিক সার তুচ্ছ। আবার স্বাধীনতা মানে যদি গণতান্ত্রিক শাসন হয় তবে তার অর্থ নেহাত ব্রিটিশ খেদানোর থেকে বেশি। Independence ও freedom এই দুই অর্থের সংমিশ্রণ বা অপমিশ্রণ খেয়াল করেই বঙ্কিম বলেছিলেন বাংলায় স্বাধীনতা শব্দের ব্যবহারকে আরও সুনির্দিষ্ট করে তোলতে। স্বরাজের যুগে “স্বাধীনতা” শব্দটি হারিয়ে যায়নি কিন্তু আবার চাবিশব্দও ছিল না।
তিরিশের দশক থেকে স্বাধীনতা শব্দের পালে আবার কেন হাওয়া লেগেছিল সেটাও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। তার একটা বড় কারণ ছিল পূর্ণ-স্বরাজ-পরবর্তী কংগ্রেসে independence ধারণার পুনরুত্থান। মূলত নেহেরুর বরাতে ভারতীয় রাজনৈতিক পরিসরে একটা ধারণা বদ্ধমূল হতে থাকে: independence অর্জন না হলে সামাজিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা (তথা freedom) তো দূরের কথা তার প্রস্তুতিও নেওয়া সম্ভব নয়। এই আর্গুমেন্ট একাধারে independence-র সাথে freedom-র তফাত নির্দেশ করে ও তাদের পূর্বপ্রচলিত ক্রমবিন্যাসকে (অর্থাৎ আগে স্বাধীনতার প্রস্তুতি পরে সার্বভৌম রাষ্ট্র) উল্টে দেয়। স্বাধীনতা মানে আর নেহাত ব্রিটিশ খেদানো বা আত্মশাসন রইলো না। তা হয়ে দাঁড়ালো ইতিহাসের চাকাকে ত্বরান্বিত করার সমান। এই সূত্রে freedom অর্থে স্বাধীনতার পালেও লাগলো নয়া হাওয়া।
মুক্তি ও লিবারেশনের মামলাটা একটু আলাদা। রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন “এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়” সেখানে মুক্তির যে অর্থ তা তার দার্শনিক ইতিহাস বৈ বোঝা যাবে না। ভারতীয় দর্শনের একটা মৌলিক ধারণা আকারে মুক্তি নিয়ে নানা মুনির নানা মত তো আছেই। কিন্তু সংসারের বন্ধন ছিন্ন করে অসীমে পৌঁছানোর বাসনা যে অর্থে মুক্তি চিহ্নায়িত করে তা স্বাধীনতা করে না (আবার সেই রবীন্দ্রনাথই বলেছেন “বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি, সে আমার নয়”। তবে মনে রাখা দরকার যে এখানে রবীন্দ্রনাথ মুক্তির পথ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও মুক্তির দার্শনিক অর্থের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছেন)। লিবারেশন বা মুক্তি ভারতবর্ষের উপনিবেশবিরোধী আন্দোলনের কালে বিশেষ কল্কে পায়নি। তার একটা কারণ সোজাসুজি ঐতিহাসিক। এই ধারণার রাজনৈতিক অর্থ অনেকটাই তৈরি হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে। তার চেয়েও বড় কারণ ছিল ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের একটা গভীর পূর্বানুমান: ভারতবর্ষের দুর্দশার জন্য ব্রিটিশরা দায়ী হলেও তাদেরকে খেদালেই এই সংকটের সমাধান ঘটবে না। স্বদেশের জনগণই জনগণ হয়ে উঠতে পারার সক্ষমতা এখনও অর্জন করতে পারেনি। ব্রিটিশ না হয় গেল, কিন্তু বর্ণব্যবস্থা, দারিদ্র্য, জাতিগত দাঙ্গা এইসব তো যাবে না। লিবারেশনের ঋণাত্মক অর্থ আত্মসংকটের ধনাত্মক অর্থকে উস্কে দিত। তার মানে এই নয় যে রাজনৈতিক জীবনে মুক্তি শব্দের একদমই ব্যবহার ছিল না। চল্লিশের দশকের “মুক্তির মন্দির সোপানতলে” গানটির কথা অনেকেই জানবেন।
লিবারেশন তথা মুক্তির অর্থে একটা মৌলিক পরিবর্তন ঘটে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে। এই রূপান্তরে কিন্তু উত্তর-ঔপনিবেশিক মুহূর্তের একটা বড় অবদান আছে। উনিশ শতকের অভূতপূর্ব ইয়ুরোপীয় সাম্রাজ্যগুলোর প্রগতির প্রতি যে দাবি ছিল তা ধূলিসাৎ হয় এই সময়ে। সাম্রাজ্য হয়ে দাঁড়ায় কেবল দখলদারি বা ওকুপেশন। এই জায়গায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ভিয়েতনাম ও আলজেরিয়ারও একটা বড় প্রভাব আছে। পাকিস্তান যদিও একটি উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ছিল, কিন্তু পূর্ববঙ্গের রাজনৈতিক প্রকল্প একটি বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভাষার উপর ভর করে আপন পথরেখা রচনা করে। কোন পাদটীকা ছাড়া এমতে সার্বভৌমত্বের দাবি হাজির করা অনেকটাই লিবারেশন বয়ানের প্রভাব। নেহেরু একদা বলেছিলেন “independence is not a happy word”। জাতিরাষ্ট্রের বিভেদ রচনার মধ্য দিয়ে আত্মশাসনের অধিকার পাওয়ার প্রেক্ষিতে কথাটা বলা। লিবারেশন বা মুক্তির যুগে independence একটা নির্ভেজাল “happy word” হয়ে উঠে বটে। তার মানে এই না যে বাংলার দীর্ঘ স্বাধীনতা-সংজ্ঞায়নের ইতিহাস একাত্তর সালের পূর্ববঙ্গে এসে লোপ পেয়েছিল। ভারতবর্ষের ইতিহাসে জারিত রাজনৈতিক স্বাধীনতা/অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বিভেদও সমানতালে উপস্থিত ছিল। সেই কথায় একটু পরেই আসছি।
থার্ড লেন~ বাংলায় স্বাধীনতা শব্দের ব্যবহারে কি কিছু লক্ষ্যণীয় বৈশিষ্ট্য দেখা যায়? ধারণাটি ঐতিহাসিকভাবে কিভাবে বিবর্তিত হয়?
নাজমুল সুলতান~ এই শব্দের ইতিহাসের মধ্যে আধুনিক বঙ্গের রাজনৈতিক ইতিহাস অনেকটাই ঘাপটি মেরে আছে। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যাহ্নে উঠতি বঙ্গের সুধীসমাজে স্বাধীনতার অর্থ নির্ধারণ নিয়ে ব্যাপক গোলযোগ তৈরি হয়েছিল। স্বাধীনতা শব্দটি গাঠনিকভাবে অচিন কিছু নয়— সর্বনাম “স্ব,” “অধীন” মূল, আর “তা” প্রত্যয়ের সন্ধিযোগে গঠিত। তবে “স্বাধীনতা”-র ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শব্দটি যত চিরপরিচিত বলে মনে হয় আদতে তা না। মধ্যযুগের বাংলায় স্বাধীনতা শব্দের ব্যবহার বিশেষ দেখা যায় না। উনিশ শতকের গোড়া থেকে বাংলা ভাষায় স্বাধীনতা একটি ধারণা ও শব্দ আকারে বিস্তৃত হতে শুরু করে। ইয়ুরোপীয় রাজনৈতিক চিন্তাজগতের সাথে সংঘর্ষিক মোলাকাতের পর বঙ্গে যেসব “ধারণা” হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল “লিবার্টি”। “লিবার্টি”র সেই স্ফূরণ যে বঙ্গের ইয়ুরোপ-সংঘর্ষ থেকে উদ্ভূত ছিল তা নিয়ে সমকালীন ভাবুকেরা ওয়াকিবহাল ছিলেন। উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে লিবার্টির মোটামুটি বাংলা প্রতিশব্দ দাঁড়ায় স্বাধীনতা। এই নতুন ধারণার বদৌলতে উনিশ শতকে ভারতবর্ষের গোটা ইতিহাসই নতুন করে পাঠ করার চর্চা শুরু হয়। বাংলা কি কভু স্বাধীন ছিল? স্বাধীনতার মানে কি? এমনতর নানা প্রশ্ন দানা বেঁধে উঠতে থাকে।
তবে সেই “স্বাধীনতা”-ভাব তর্জমা করা বিলাতি আয়নায় দেশী মুখ দেখার মত সহজ কোন ব্যাপার ছিল না। সেই সময়ের বাংলা-ইংরাজি অভিধানগুলো ঘাঁটলে তর্জমার জটিল ইতিহাস খানিকটা বোঝা যেতে পারে। বিশেষ করে উনিশ শতকের শেষার্ধ এসে বঙ্গের বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক পরিসরে স্বাধীনতার ভাব ও ধারণা নিয়ে নানারূপ জল্পনাকল্পনা শুরু হয়। বঙ্গের সেই “ইতিহাসবুভুক্ষা”-র যুগে স্বাধীনতাচর্চা নানাভাবে প্রকাশিত হয়: কাব্যে স্বাধীনতা বন্দনা, বিভিন্ন দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস লেখার প্রয়াস, পত্রপত্রিকায় স্বাধীনতার চরিত্র বিচার ইত্যাদি। বাবুসমাজের উঠতে-বসতে স্বাধীনতার নাম জপা নিয়ে ব্যঙ্গ দেখা যায় পরিপক্ব বঙ্কিম ও নওল কিশোর রবীন্দ্রনাথ দুইয়ের লেখায়ই। স্বাধীনতা বন্দনা নিয়ে তামাশার মূল দোহাই ছিল বাবুসমাজের ভাসাভাসা স্বাধীনতাদর্শন। যেমন ধরুন বঙ্কিমের লোকরহস্য। ইংরেজি বুলি ও চালচলনে অনুরক্ত এক “নব্য বাবু”র সাথে বনবিহারী হনুমানের সাক্ষাত নিয়ে লিখিত “হনুমদ্বাবুসংবাদ” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বনমধ্যে হনুমান-কর্তৃক এক বেনামা বাবুর হয়রানির শিকার হওয়া এই লেখার বিষয়বস্তু। কৌতূহলী হনুমানের হাতে (বা লেজে) অপদস্থ হয়ে সেই বাবুর আত্মাভিমানে ঘা লাগে। অতঃপর সেই বন্যপশুকে নবযুগের একটি টোটকা প্রদর্শন করার প্রলোভন তিনি সামলাতে পারেননি। কিন্তু হনুমানকে “স্থানীয় আত্মশাসন” ও “স্বাধীনতা”-র সন্দেশ দিতে গিয়ে ইংরেজি কপচানো বাবু উল্টো বেকায়দায় পড়ে যান। ঔপনিবেশিক আমলের সার্বভৌমত্বহীন আত্মশাসনের দার্শনিক ধোঁকাবাজিটা হনুমান মশকরা করতে করতে দেখিয়ে দেয়: “তুমি নিজে রাজা না হইলে আত্মশাসন করিবে কি প্রকারে?” কোণঠাসা হয়ে বাবুমশাই অতঃপর স্বাধীনতার সওগাত দিতে যান। তাতে খানিকটা বিরক্ত হয়ে হনুমান বলেন, “আমি বনের পশু, স্বাধীনতা জানি না ত কি তুমি জান?” হনুমানের বিচারে স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাধীন থাকা। বাবুর করা দাবি— সভ্য মানুষই কেবল স্বাধীন ও সুখী হতে পারে— এক ফুঁতে উড়ে যায়। সভ্যতাবিবর্জিত পশু স্বাধীনতা বোঝবে না এই সান্ত্বনা নিয়ে বাবু ও হনুমান অতঃপর “কদলী ভোজনে” একাত্ম হন।
লোকরহস্যের সমসাময়িক কালেই বঙ্কিম “ভারতবর্ষের স্বাধীনতা ও পরাধীনতা” নামে একখানা প্রবন্ধ রচনা করেন। এই নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধের ব্যক্ত অভিপ্রায় ছিল “প্রাচীন”যুগ ও “আধুনিক”যুগের স্বাধীনতা ও পরাধীনতার তুলনামূলক পর্যালোচনা। লেখার গোড়াতেই বঙ্কিম খানিকটা শ্লাঘাসহকারে বলেন, “বাঙ্গালি ইংরেজি পড়িয়া…দুইটি কথা শিখিয়াছেন—“Liberty” “Independence”…অনেকেরই মনে বোধ আছে যে, দুইটি শব্দে এক পদার্থকে বুঝায়। স্বজাতির শাসনাধীন অবস্থাকেই ইহা বুঝায়, এইটি সাধারণ প্রতীতি। রাজা যদি ভিন্নদেশীয় হয়েন, তবে তাঁহার প্রজাগণ পরাধীন, এবং সেই রাজ্য পরতন্ত্র।” এই ধারণার গলদ একাধিক। শাসকের পরিচয় দিয়ে স্বাধীনতা বিচার করতে গেলে উদ্ভট কিছু ফল পাওয়া যায়। স্বয়ং মহারাণী ভিক্টোরিয়ার পূর্বপুরুষেরা —যথা প্রথম বা দ্বিতীয় জর্জ— জাতিতে ইংরেজ ছিলেন না। তাই বলে সেকালের বিলাতকে কেউ পরাধীন বলে বিবেচনা করে না। বঙ্কিম তাই শুধান, “তবে শাহাজাদা-শাসিত ভারতবর্ষকে বা আলীবর্দ্দি-শাসিত বাঙ্গালাকে পরাধীন বলি কেন?” কদাচ পাঠক এই দাবিকে উপনিবেশ শাসনের পরোক্ষ সমর্থন ভাবতে পারেন তা আন্দাজ করে বঙ্কিম গোড়াতেই তৎকালীন ভারতবর্ষকে পরতান্ত্রিক ঘোষণা করে দেন। বঙ্কিম তাঁর বিকল্প স্বাধীনতা তত্ত্ব পেশ করার আগে বলে রাখেন স্বাধীনতা (লিবার্টি) ও স্বাতন্ত্র্যের (ইন্ডিপেন্ডেন্স) মধ্যে একটা তফাত আছে। যদি শাসক শাসিত রাজ্যে বসবাস করেন তবে সেই রাজ্য স্বতন্ত্র। শাসকের জাতপরিচয় দিয়ে তাই স্বতন্ত্র ও পরতন্ত্রের ভেদ বিচার সম্ভবপর নয়। স্বাধীনতার বিশেষত্ব তাহলে কি? বঙ্কিমের মতে, “যেখানে দেশীয় প্রজা এবং রাজ্যের স্বজাতীয় প্রজার…তারতম্য, সেই দেশকে পরাধীন বলিব। যে জাতি পরজাতিনিপীড়নশূন্য, তাহা স্বাধীন।” তাঁর স্বাধীনতাদর্শন যে বিলাতি স্বাধীনতা তত্ত্ব থেকে আলাদা সে ব্যাপারেও বঙ্কিম পরিষ্কার। এই জায়গায় বঙ্কিম যে মিল সাহেবের অন লিবার্টি নামক পুস্তকের কথা ভাবছিলেন তা মুখ ফুটে না বললেও আন্দাজ করে নেওয়া যায়।
প্রাচীন ও আধুনিক ভারতের স্বাধীনতা বিচারে এহেন স্বাধীনতাদর্শনের ফলাফল যা দাঁড়ালো তাতে বঙ্কিমের অসংখ্য অসাবধানী পাঠকেরা চমকে যেতে পারেন বৈকি। প্রাচীন ভারত স্বতন্ত্র হলেও তার ফল যে ষোলআনাই মঙ্গলজনক ছিল এমন নয়। স্বতান্ত্রিক রাজ্যে “স্বেচ্ছাচারী” কিংবা “ইন্দ্রিয়পরতন্ত্রে” নিমজ্জিত রাজার দুঃশাসনের ভার অধিক। বঙ্কিম বিচারে এমন নজির প্রাচীন ভারতবর্ষে কম ছিল না। বঙ্কিমের বিশ্লেষণে পরাধীনতার প্রকাশ মূলত দুইভাবে ঘটে। প্রথমত, রাজ্যব্যবস্থা তথা আইন ও শাসনকলের মধ্যে জাতি বা বর্ণগত বৈষম্য জারি থাকে বলে সকলের সমান অধিকার থাকে না। ভারতবর্ষে ইংরেজ ও দেশীয় লোকদের মধ্যে বৈষম্য নিয়ে বঙ্কিম—যার পেশা ছিল ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট—ভালোই ওয়াকিবহাল ছিলেন। তা স্বীকার করে নিয়ে বঙ্কিম প্রশ্ন তোলেন, প্রাচীনযুগে ব্রাহ্মণ-কর্তৃক শূদ্রহনন হলে তার আইনি প্রতিকার কেমন ছিল? দ্বিতীয়ত, রাজপদে পরাধীন জাতির বিশেষ জায়গা হয় না। ইংরেজ আমলের রাষ্ট্রযন্ত্রে যেমন বিলাতি লোকের সর্বাধিকার। ভারতবর্ষীয়রা তাতে অল্পবিস্তর জায়গা পেলেও তা নগণ্য। বঙ্কিম তারপর যোগ করেন, তবু নিম্নবর্গ ইংরেজ আমলে যতটুকু সুযোগ পায় তা “ব্রাহ্মণরাজ্যে ততটা ঘটিত কি না সন্দেহ।” মোটের উপরে, ইংরেজ আমলে ভারতবর্ষ একাধারে পরতান্ত্রিক ও পরাধীন। প্রাচীন যুগে স্বতন্ত্র হলেও ছিল স্বাধীনতার ঘাটতি। আকবরের আমলে মোটের উপর স্বতন্ত্র ও স্বাধীন। এই প্রবন্ধের আরেকটি নেপথ্য বস্তু ছিল সেযুগের চলতি হিতবাদ বা ইউটিলিটারিয়ানিজম। প্রাচীন ভারতের প্রজাবৃন্দ এইযুগের তুলনায় সুখী ছিল এমনটা বলার কোন অবকাশ বঙ্কিম দেখেন না। তাঁর মীমাংসায়, আধুনিক কালে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয় শ্রেণীর অবনতি ও “শূদ্র তথা সাধারণ প্রজার” খানিকটা সুখবৃদ্ধি হয়েছে। বঙ্কিমের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা তার পরের দুই দশকে নানা পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় কিন্তু স্বাধীনতার এই সংজ্ঞায়নকে তিনি পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেননি।
বিশ শতকের বঙ্গে ও ভারতবর্ষে এই ধারণার বিবর্তন নিয়ে কিছুটা আমার সদ্যপ্রকাশিত EPW-র লেখায় বিস্তারিত করেছি। তাই আবার পুনরুক্তি করতে চাই না। তবে এটা বলে রাখা যায় যে বঙ্কিম-নির্দেশিত স্বাধীনতা ধারণার সমীকরণ নানাভাবে পাল্টালেও পূর্বানুমানগুলো হারিয়ে যায়নি। বঙ্কিমের মসনদ-কেন্দ্রিক স্বাতন্ত্র্যচিন্তা তেমন গৃহীত হয়নি। কিন্তু নেহাত ইন্ডপিন্ডেন্স স্বাধীনতার সমার্থক নয় তা ভারতবর্ষের রাজনৈতিক চিন্তার একটা বুনিয়াদি অনুমান হয়ে উঠে। বিশ শতকের স্বাধীনতার ইতিহাস বোঝাপড়ায় উনিশ শতক তাই অপরিহার্য।
থার্ড লেন~ ফ্রিডম বা লিবার্টি শব্দগুলি কি সমষ্টি (কমিউনিটি/রাষ্ট্র) ও ব্যক্তির ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য? একটি বাক্য ধরা যাক- ‘উত্তমপ্রদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র’। এই বাক্যটি কি নির্দেশ/imply করে যে ‘উত্তমপ্রদেশের আবাসিকরা স্বাধীন?’ উল্টোটার ক্ষেত্রেই বা কি বলা যায়- দ্বিতীয় বাক্যটি কি প্রথম বাক্যকে সূচিত করে?
নাজমুল সুলতান~ সাতের শতকের রাজনৈতিক দার্শনিক টমাস হব্স বলেছিলেন যে “লিবার্টি” শব্দটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে গেলে প্রায়শই অর্থের গোলমাল ঘটে। কারণ লিবার্টি মানে যদি বাধাহীনতা হয় তবে তা বস্তুর ক্ষেত্রে যেমন খাটে ব্যক্তির ক্ষেত্রে তেমন নয়। রাজনৈতিক সমাজে অংশগ্রহণের মানেই হচ্ছে আইনের শৃঙ্খলকে কবুল করে নেওয়া। বাধাহীনতা অর্থে যে স্বাধীনতা তা অর্থবহ সেইসব জায়গায় যেখানে আইন উহ্য বা অনুপস্থিত। এক অর্থে, হব্স বলেছিলেন, সার্বভৌমই কেবল সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, প্রজাবৃন্দ নয়। ঠিক একই কারণে রাজ্যবিজয়ের ফলে সার্বভৌমের স্বাধীনতাহানি নয়, প্রজাদের নয়।
উনিশ শতকে এসে, ফরাসি বিপ্লবের ছায়াতলে বসে, এইভাবে স্বাধীনতাদর্শন বিশ্বব্যাপীই অচল সিকি হয়ে যায়। ঔপনিবেশিক বিশ্বে এই পাটাতনবদলের রেশটা দেখা যায় তথাকথিত কোন রিপাবলিকানিজম বা প্রজাতন্ত্রবাদে নয়। বরং বৃটিশ শাসনের অর্থ নির্ধারণ-সংক্রান্ত তর্কের মধ্যেই তার রেশটা পাওয়া যায়। উনিশশতকের বঙ্গীয় ভাবুকেরা ক্রমেই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে ভারতবর্ষের পরাধীনতা কোন রাজরাজড়ার নয়, মূলত তার জনসাধারণের পরাধীনতা। এই চিন্তাভাবনার একটা স্ফুরণ ঘটে ভারতবর্ষের মুসলমানযুগের ইতিহাস লেখালেখিতে।
রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের বরাতেই এই কথাটা বিস্তারিত করি। ১৮৫৮ সালে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় পদ্মিনী উপাখ্যান নামে একখানা কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। তা এখন মোটামুটি বিস্মৃত— বাংলা সাহিত্যের কালোত্তীর্ণ কলবরে তার জায়গা হয়নি। তবে এই গ্রন্থের চারটি লাইন আজও চাউরঃ “স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে,/কে বাঁচিতে চায়? দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,/ কে পরিবে পায়।” রঙ্গলাল এই কাব্যগ্রন্থ লেখায় হাত দেন স্বাধীনতা নিয়ে এক বিতর্কের প্রেক্ষিতে। ১৮৫২ সালে কলকাতার বীটন সভায় এক “নববাবু” বাঙালির মধ্যে কবিত্বশক্তির অভাব শনাক্ত করেন। রঙ্গলাল প্রথমত এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে সেই সভায়ই আরেকটি প্রবন্ধ পাঠ করেন, যা পরে “বাঙ্গালা কবিতা বিষয়ক প্রবন্ধ” নামে ছাপা হয়। অতঃপর তিনি নিজেই স্বাধীনতা নিয়ে একটি কাব্যগ্রন্থ রচনা করে পরাধীনজাতির কবিত্বহীনতাকে হাতেকলমে ভুল প্রমাণিত করতে উঠেপড়ে লাগেন। রঙ্গলালের “সোর্স” টড্ সাহেবের পদ্মিনী আখ্যান মূলত কনক্যুয়েস্ট বা রাজ্যবিজয়ের কাঠামোর ছাঁচে বর্ণিত। আলাউদ্দিন খিলজীর চিতোর বিজয় টড্ সাহেবের নানাগল্পের একটি। টড্ সাহেবের বয়ানে, নেহাত রাজ্যবিজয় নয়, পদ্মিনী বিজয়ের বাসনায়ও খিলজী তাড়িত ছিলেন। আপন জাতি ইংরেজকুলও যে এই রাজ্যবিজয়ের আদি বাসনায় শরিক তার সরল স্বীকারোক্তি বার কয়েক চলে আসে।
টড্ সাহেবের জন্য সকল রাজ্যবিজয় সমান নয়। রাজ্যবিজয়ের বাসনা ভালো নাকি মন্দ সে নিয়েও সেই বহু আগে থেকে নানাবিধ অভিমত জারি ছিল। কিন্তু এর সাথে প্রজাসাধারণের স্বাধীনতার সম্পর্ক কি এই প্রশ্ন তখনও অর্থময় হয়ে উঠেনি। টড্ সাহেব যখন চিতোরবিজয়ের কাহিনী লেখছেন তখন রাজ্যবিজয়ের অর্থও পাল্টে যাচ্ছিল। উনিশ শতক থেকে শুরু করে ইংরেজ চিন্তায় উপনিবেশবাদের অর্থ রাজ্যবিজয় থেকে ক্রমে আলাদা হতে থাকে। বিজয়ী-বিজিতের সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেয় ইতিহাসের অগ্রপশ্চাদে অবস্থানের বয়ান। কেবল রাজ্যবিজয়ের যশগৌরব কিংবা বিজিত সমাজ লুঠ করে চলে যাওয়ার মধ্যে তাই আধুনিক উপনিবেশবাদের বিশেষত্ব খোঁজে পাওয়া যাবে না।
সেই পুরাতন পদ্মিনী কাহিনী রঙ্গলালের উনিশ শতকীয় কল্পনায় নতুন এক মাত্রা গ্রহণ করে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ উলুখাগড়ারও যুদ্ধে পরিণত হয়। আলাউদ্দিন খিলজীর জয় শুধু রত্নসিংহ সাম্রাজ্যের পরাজয় নয়, গোটা হিন্দু জনসাধারণের পরাধীনতার নামান্তর হয়ে দাঁড়ায়। উপরিউক্ত স্বাধীনতাবন্দনার চতুর্পদীখানা চিতোর রাজার মুখনিঃসৃত, সৈন্যসামন্তকে উৎসাহ দেওয়ার প্রেক্ষিতে বলা। রঙ্গলালের বর্ণনায় খিলজী-কর্তৃক রত্নসিংহের পরাজয় হয়ে দাঁড়ায় একাধারে সমগ্র রাজপুত দেশের পরাধীনতা: “আমাদের মাতৃভূমি রাজপুতানার হে, রাজপুতানার…সার্থক জীবন আর বাহুবল তার হে, বাহুবল তার।/ আত্মনাশে যে করে দেশের উদ্ধার হে,/ দেশের উদ্ধার।” চিতোরের পতন তাই কেবল রাজার পতন হিসাবে থাকলো না। হয়ে দাঁড়াল সামষ্টিক পরাধীনতার নামান্তর। রাজ্যবিজয়ের সাথে স্বাধীনতার এই অভিন্নতা ঠাহর করা চিন্তার ইতিহাসে নতুন জিনিস। ফলাফল দাঁড়ালো এই যে রাজা বা শাসক স্বজাতির লোক হলে তাকে স্বাধীনতা বলা যায়। পরজাতির হলে পরাধীনতা।
এই সরল ধারণার পেছনে আছে উনিশ শতকের ভারতবর্ষের চিন্তাজগতের নানাবিধ রূপান্তর। তার পুরোটা এখানে ব্যাখ্যা করার অবকাশ হবে না। সংক্ষেপে বলতে গেলে: উনিশ শতকের পয়লা সিকি থেকেই ভারতের উপর ব্রিটিশ অধিকারের নতুন একটা বয়ান দাঁড়ায়। এই নতুন ভাষ্যমতে ভারতবর্ষ পরাধীন কারণ তা এখনো গণতন্ত্রের উপযোগী হয়ে উঠতে পারেনি, কারণ তার জনসাধারণ এখনো নাগরিকচরিত্র অর্জন করতে পারেনি। রাজ্যবিজয়ের ভাষা তারপর অন্তর্হিত হয়। জন্ম নেয় উপনিবেশবাদের নতুন এক প্রগতিনির্ভর ধারণা। গণতন্ত্রের যুগে এসে তাই যেকোন অঞ্চলের বিদেশী শাসন হয়ে দাঁড়ায় অত্র জনগণের স্বাধীনতাহীনতার সমার্থক। তার কারণ জনসাধারণকে আমরা আর প্রজা আকারে দেখি না। সার্বভৌম আকারে দেখি। তাই যেকোন রাষ্ট্রের বা অঞ্চলের পরাজয় জনগণের সার্বভৌমত্বের মাপকাঠি দিয়ে মাপা উনিশ শতক থেকে রেওয়াজে পরিণত হয়েছে।
থার্ড লেন~ মুজিব ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মুহূর্তে মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্রের দাবিকেই যথাযথ মনে করেছিলেন। সেক্ষেত্রে সম্ভবত ধারণাটি ছিল এই যে সামাজিকভাবে অনগ্রসর মুসলমানরা ক্ষমতাকেন্দ্রের থেকে দূরে থাকায় স্বাধীন ভারতবর্ষে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত হতে পারে। ১৯৭১-এ আমরা আবার দেখি তিনি পাকিস্তানের মধ্যেই বাঙালিদেরকে একটি পৃথক জনগোষ্ঠী হিসেবে কনসেপচুয়ালাইজ করছেন। একধরণের পৃথক জাতিচেতনার জন্ম দিচ্ছেন।
ক্ষমতাহীন মানুষের লড়াইয়ে অন্যতম হাতিয়ার হিসেবেই কি এই ‘জনগোষ্ঠী’র (পিপল) রেটোরিক বারে বারে বানিয়ে তোলা হয়? আরও একটু বাড়িয়ে বললে- বঞ্চনা ও হীনমন্যতাই সেই সুতো যা আপাতভাবে বিচ্ছিন্ন মানুষকে গেঁথে গেঁথে একটি সমগ্র জনগোষ্ঠীর মালা তৈরি করে?
নাজমুল সুলতান~ মোক্ষম প্রশ্ন। জনতা আকারে জনগণের আবির্ভাবের সাথে বঞ্চনা ও বৈষম্যের যোগ অস্বীকার করার উপায় নেই। আধুনিক যুগে তার সাথে এসে মিলেছে সার্বভৌমত্বের রাজনীতি। জনগণ কেবল একটি বর্গ বা শ্রেণি হওয়ার দাবি নয়। তা একাধারে নিজেকে সকল ক্ষমতা ও আইনের (আইন-বহির্ভূত) উৎস হিসাবে দেখে। আবার চূড়ান্ত রাজনৈতিক কর্তৃত্বও জনগণের নামের সাথে জড়িত। এইসব ভাবের জগতে জনগণ নামের চিহ্ন হলেও রাজনৈতিক জীবনে তাদের প্রভাব ফেলনা নয়। রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে আবার বিচ্ছিন্ন বর্গকে এক অবিভাজ্য জনগণের নামাধীন করা।
তবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের সরাসরি ফল জনগণ তা বলা একটু essentislist হবে। সকল বঞ্চনা জনগণের সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশে পর্যবসিত হয় না। কিন্তু সকল জনগণ-দাবি বঞ্চনার একটা ভিত্তিপ্রস্তর রচনা না করে পারে না। কোন কোন ভাবুক এই দাবিটাকেই গণতান্ত্রিক রাজনীতির শাঁস বলে ভাবেন। সেই ভাবনার ভিত্তি যে একদমই নেই তা নয়।
এবার বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গে আসা যাক। সাতচল্লিশ ও একাত্তরের তফাতটা ঠিক জনগণ ধারণার অন্তর্গত দ্বন্দ্বসংঘাত দিয়ে বোঝা যাবে না। আপনি যেমনটা বললেন, মুজিবের বয়ানে “পাকিস্তান” বাঙালি মুসলমানের সামাজিক অনগ্রসরতা অতিক্রমের পন্থা ছিল। সেটা এক হিসাবে একাত্তর সালও ছিল। কিন্তু সাতচল্লিশের মুহূর্ত বাঙ্গালি মুসলমানের জনগণ-চরিত্রের তুলনায় তাদের গোষ্ঠী পরিচয় মুখ্য হয়ে উঠেছিল। এই জায়গায় বাঙালি হিন্দুর সাথে বাঙালি মুসলমানের বিচ্ছেদ কেবল আলাদা জাতিসত্তার নামে সিদ্ধ হয় তা না। সামাজিক প্রগতির জন্য রাজনৈতিক বিচ্ছেদের একটা সমান্তরাল যুক্তিও ছিল। তবে মনে রাখতে হবে এই কথা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না। সাতচল্লিশের মুজিবের (সামাজিক) প্রগতিশীল পাকিস্তানবাদের বিপরীতে আপনি চাইলে আবুল মনসুর আহমেদের মত সাংস্কৃতিক পাকিস্তানবাদীদের দাঁড় করাতে পারেন। মুজিবের জন্য পাকিস্তান অনেকটাই demographic যুক্তিতে সিদ্ধ ছিল। আর একাত্তর সাল demos হয়ে ওঠার রোমাঞ্চ দ্বারা তাড়িত। জাতিচেতনা দ্বারা সাতচল্লিশ ও একাত্তর দুইই তাড়িত ছিল। তবে বলতে পারেন এই দুই রাজনৈতিক গোড়াপত্তনের কল্পিত জনগণসত্তা আলাদা ছিল। পাকিস্তান নামক প্রকল্প জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনগণকে আত্তীকৃত করতে চেয়েছিল।
পাকিস্তান রাষ্ট্রের সাথে উদীয়মান বাংলাদেশী জনগণের দ্বন্দ্বের মূলসূত্র হয়ে দাঁড়ায় এই: পাকিস্তান রাষ্ট্র পূর্ববঙ্গের জনগোষ্ঠীর জনগণচরিত্রকে ধারণ করতে অক্ষম। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের ঘোষণা উৎসারিত হয় এই জায়গা থেকে। কিন্তু জনগণের সার্বভৌমত্বকে সব প্রশ্নের আদি উত্তর ধরে নেওয়া সহজ কোন ব্যাপার নয়। এই বোধে জনগণ একটি নিরালম্ব সত্তা। বিশেষত উত্তর-ঔপনিবেশিক প্রেক্ষিতে যেখানে দারিদ্র্য, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদিই ছিল মূল প্রশ্ন। তাই দেখা যায় যে স্বাধীনতা অর্জনের পরে পরেই রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মধ্যে একটা বিভেদ রচিত হয়। এই ব্যাপারটা কেবল বাংলাদেশের ব্যাপার নয়। এইখানে এসে বাংলাদেশের কাহিনী একটা বৈশ্বিক কাহিনীর সাথে একাকার। এই পাটাতনের দ্বন্দ্ব কোথাও কোথাও সামরিক শাসনের অজুহাত হয়েছে, আবার কোথাও কোথাও রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে উন্নয়নের উচ্চতর দাবির কাছে মাথা নত করতে হয়েছে।
থার্ড লেন~ আপনি দেখিয়েছেন ঔপনিবেশিক শক্তির কবলমুক্ত হয়ে স্বাধীনতা পাওয়ার পর প্রায় সমস্ত রাষ্ট্রই প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়। বহুকৌণিক স্বাধীনতার অর্থ ও পথ অনুসরণ করতে না পেরে অনেক সময়েই দ্বন্দ্ব ও সংশয়ে আচ্ছন্ন হয়েছে (বানডুং কনফারেন্সে সুকর্ণের উক্তি)। রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত উন্নয়নে (যা প্রধানত অর্থনৈতিক) নিয়োজিত হতে গিয়ে ক্রমশ মুক্তির অন্যান্য মার্গগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। আপনার কি মনে হয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দায়িত্ব রাষ্ট্র না নিয়ে বাজারের হাতে ছাড়লে স্বাধীনতার সহায়ক প্রতিষ্ঠানগুলি তৈরি হতে পারতো?
নাজমুল সুলতান~ না, আমার তা মনে হয় না। ভারত, বাংলাদেশ ও অন্যান্য উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের স্বাধীনতা অর্জনের প্রকল্পগুলো পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত ছিল। এইসব রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনকারীদের কাছে রাজনৈতিক স্বাধীনতা মানে ছিল অসমাপ্ত অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রগতির উপর সার্বভৌমত্ব জারি করার সুযোগ পাওয়া। প্ল্যানিং বা পরিকল্পিত অর্থনীতি উপনিবেশবিরোধী যুগের আবিষ্কার নয়। ব্রিটিশ আমলের শেষের দিকে এসে ভারতবর্ষের রাজনীতিবিদেরা সোভিয়েত রাশিয়ার পঞ্চম-বার্ষিকী-পরিকল্পনা ইত্যাদি দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। যদিও তাদের হাতে এই পরিকল্পনাকারী রাষ্ট্রের ধারণার একটু বদল হয়। নেহরু, মুজিব কিংবা সুকর্ণ কমবেশি সমাজতন্ত্র প্রভাবিত ছিলেন। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাদের কাছে কিন্তু কেবল কৃৎকৌশল দিয়ে সমাজতন্ত্রে উত্তরণের মামলা ছিল না। সেই উত্তরণ-প্রক্রিয়ার একটা গণতান্ত্রিক অবয়বও তারা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। পরিকল্পিত ও ত্বরান্বিত অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে সাথে অবিকশিত জনতা আধুনিক জনগণ হয়ে উঠবে এই ছিল তাদের আকাঙ্ক্ষার রাজনৈতিক দোসর। বিশ শতকের কোন বৈশ্বিক ইতিহাসই এই আকাঙ্ক্ষা বাদ দিয়ে বলা যাবে না। এইভাবে গণতন্ত্রকে আরাধ্য গন্তব্য ভেবে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক/সামাজিক স্বাধীনতাকে মেলানোর প্রকল্প স্বাধীনতার বিশশতকীয় অর্থের নামান্তর।
সমাজ বা অর্থনীতিকে অনেকটাই কাদামাটির মত ছাঁচে গড়ে নেওয়া যাবে এই প্রত্যয় বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে অবিরল ছিল। রাজনৈতিক চিন্তায় সমাজ ও অর্থনীতি প্লাস্টিক সত্তা আকারে হাজির ছিল। বৈশ্বিক পর্যায়ে সাম্রাজ্যবাদ প্রতিরোধ করা গেলে জাতীয় পর্যায়ে প্রগতির চাকা ত্বরান্বিত করা সম্ভব এটা দলমতনির্বিশেষে অনেকেই ভাবতেন (মহাত্মা গান্ধীর মতো প্রগতিবাদের কয়েকজন আপোষহীন সমালোচককে বাদ দিলে)। বলতে পারেন এই যে ইতিহাসের সময়ের উপর ছড়ি ঘুরানোর স্বপ্ন তা সমাজের কেন্দ্রবিহীন চরিত্রকে খাটো করে দেখেছিল। ইতিহাসের চাকাকে accelerate বা ত্বরান্বিত করার চিন্তাগুলো একটা বিশেষ সময়ের ইয়ুটোপিয়ানিজমে দুষ্ট। তবু সেই যুগকে একদম ব্যর্থ বলা অন্যায্য হবে। বাংলাদেশ বলুন বা ভারত বলুন, ভালোমন্দ মিলিয়ে আমাদের যা রাজনৈতিক বা সামাজিক বাস্তবতা তার পাটাতন সে যুগেই তৈরি। মুক্তবাজার অর্থনীতির অর্জন সে হিসাবে আরও কম। হ্যাঁ, তবে স্বাধীনতা-পূর্ব প্রতিশ্রুতির নিরিখে স্বাধীনতা-উত্তর যুগ নিশ্চয়ই কিছুটা ব্যর্থ।
আমার জায়গা থেকে আরেকটা কথা বলবো। প্ল্যানিং স্টেট বা পরিকল্পনাকেন্দ্রিক উত্তর-ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের কাছে স্বাধীনতা-উত্তর জনগণ দ্বিধাবিভক্ত ছিল। একদিকে সংসদীয় গণতন্ত্র জনগণের সার্বভৌমত্বের চিহ্ন। আরেকদিকে সেই অবিকশিত জনগণের রূপান্তর করা ছিল পরিকল্পনাকারী তথা সরকারের নির্বাহী বিভাগের কাজ। পরিকল্পনাকারী রাষ্ট্রযন্ত্র ইতিহাসের মধ্যে নয় বরং ইতিহাসের উপরে আরোহণের ঝোঁকে আচ্ছন্ন ছিল। এই ভারসাম্য ছিল নাজুক ও তাত্ত্বিকভাবে প্যারাডক্সিকাল। সার্বজনীন ভোটাধিকার এই ভারসাম্যের ফাঁকি প্রথমেই দেখিয়ে দেয়। কারণ প্রগতির প্রপঞ্চ প্ল্যানিং স্ট্যাটের হাতে ছেড়ে দিতে সদ্য ভোটাধিকার পাওয়া জনগণের কোন রুচি ছিল না। বাংলাদেশ ও অন্যত্র সামরিক শাসনের উৎস এইখানে। বিশ শতকের শেষাশেষি এসে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ডেভেলপমেন্ট প্রাত্যহিক রাজনীতির অধীন। মুক্তবাজার অর্থনীতিও সেই আদলে নিজেকে গড়ে নিয়েছে।
পেছন ফিরে তাকিয়ে দোষ দেখিয়ে দেওয়া খুব সহজ। সাফল্য ব্যর্থতার হিসাব নিকাশে না ঢুকে এটা বলা যায় যে তথাকথিত রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে নেহাত independence বা social freedom-এর ছায়া না ভেবে স্বাধীন স্বতন্ত্র সত্তা আকারে ভাবার জায়গায় আমাদের একটা ঘাটতি পড়েছিলো। সেই ঘাটতির ফল পোহানোর দিন এখনও শেষ হয়ে যায়নি।
থার্ড লেন~ এই প্রসঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন মাথায় আসে। ২০১৬ সালে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কানহাইয়া কুমার বিতর্কের কেন্দ্রে আসেন স্বাধীনতা (আজাদি) শব্দের ব্যবহারকে কেন্দ্র করে। কানহাইয়া কুমার বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনের বক্তৃতায় বলেন তিনি (/তাঁরা) ভারত ‘থেকে’ স্বাধীনতা চান না, কিন্তু ভারতের ‘মধ্যে’ স্বাধীনতা চান। দারিদ্র থেকে স্বাধীনতা চান, অন্যায়, বর্ণাশ্রম থেকে স্বাধীনতা চান ইত্যাদি। এ থেকে মনে হয় তিনি ‘স্বাধীনতা’ শব্দটিকে ‘মুক্তি’ অর্থেই ব্যবহার করেছেন। আপনার কি মনে হয়- স্বাধীনতা নিয়ে যে বিতর্ক ও আলোচনা ঊনিশ শতকে শুরু হয়েছিল, দীর্ঘ বিরতির পর তা আবার আজকের দিনে ফিরে আসছে?
নাজমুল সুলতান~ কানহাইয়া কুমারের উদাহরণটি ইন্টারেস্টিং। তবে এ ক্ষেত্রে মুক্তি ধারণার তুলনায় স্বাধীনতার আর দুই অর্থ—অর্থাৎ freedom এবং independence অধিকতর প্রাসঙ্গিক বোধ হয়। স্বাধীনতার এই দুই অর্থের দ্বন্দ্বের গ্যাঁড়াকলে ঔপনিবেশিক ও উত্তর-ঔপনিবেশিক বিশ্বের বামপন্থীদের ফেলার (বা নিজে থেকে পড়ার) ইতিহাসও নতুন নয়। উপনিবেশায়িত জনগণের ইতিহাসে সার্বভৌম রাষ্ট্র সংস্থাপনের অর্জন ফেলনা কোন ব্যাপার ছিল না। কিন্তু স্বাধীনতার অর্থকে রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের বাইরে থেকে ভাবার ইতিহাসও নতুন নয়। একসময়কার মার্ক্সবাদীরা স্তরবাদী চিন্তার বরাতে ভাবতেন সার্বভৌমত্ব সত্যিকারের স্বাধীনতা তথা সমাজতন্ত্র আনয়ন না করলেও তার সোপানস্বরূপ। বুর্জোয়া সমাজের বিকাশ না হলে যেহেতু সমাজতন্ত্রের সম্ভাবনা নেই। কেউ কেউ আবার independence-কেন্দ্রিক ভাবনাকে আসল স্বাধীনতার উপর থেকে নজর ফেরাবার নামান্তর ভাবতেন। বাংলাদেশ যুদ্ধের সময়েও কিছু মাওবাদীরা সেই ঘটনাকে সাম্রাজ্যবাদী “দুই কুকুরের লড়াইয়ের” অধিক কিছু ভাবেননি। আর বামবিরোধী রাজনীতিবিদদের কাছে “ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়/লাখো ইনসান ভুখা হ্যায়” স্লোগান (যার অভীষ্ট অর্থ ছিল সামাজিক স্বাধীনতা বা freedom) অনায়াসে হয়ে দাঁড়াতো independence-কে অস্বীকার করার সমান। এই ইতিহাসের প্রেক্ষিতে কানহাইয়া কুমারের বক্তব্যটি বোঝা দরকার।
এই খণ্ডচিত্রটি আর যা ইঙ্গিত করে সে হল স্বাধীনতা ধারণার অসমাপ্ত ইতিহাস। তা কদাচ নাটকীয় কায়দায় রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে আসে। কিন্তু রাজনীতির ভাষায় তার স্থান প্রতিদিনকার। আধুনিক রাজনীতির বুনিয়াদি চাবিশব্দের একটি এই স্বাধীনতা। তার অর্থ নিয়ে রাজনৈতিক দর্শনে এন্তার মতবাদ। সেই প্রসঙ্গে এখানে ঢোকার জো নেই। তবে এটা বলা যায় যে স্বাধীনতা (তা যেভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হোক না কেন) আধুনিক রাজনৈতিক জীবনের দার্শনিক ভিত্তি হিসাবে ক্রিয়াশীল থাকে। স্বাধীনতা ধারণা একটা মৌলিক ভিত্তির সমান কেননা তার উপরে রাজনৈতিক জীবনের আরও অনেক ভাবই পরজীবী। পশ্চিমা বিশ্বের সাথে উত্তর-ঔপনিবেশিক জগতের এই ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অমিল আছে। যেমন ধরুন freedom আর independence এই দুইয়ের মধ্যের দ্বন্দ্বের মামলা। এটা প্রধানত ঔপনিবেশিক জগতের দ্বন্দ্ব। স্বাধীনতা আর স্বাতন্ত্র্যের বিরোধ (বঙ্কিমের ভাষায়) এখনও মাঝে মাঝে উঁকি দিয়ে যায়। একদা independence ছিল অর্থনৈতিক বা সামাজিক উন্নয়নপ্রকল্পের নিশানা। এখন তার অর্থ নিয়ে একটা অনিশ্চিয়তা বিরাজ করছে। পশ্চিমের মতন আমাদের রাজনীতির প্রাত্যহিক জীবনে স্বাধীনতার প্রাবল্যও ঠিক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ভাষায় প্রকাশিত হয় না। কিন্তু তার মানে এই না যে স্বাধীনতার ভাষার শেকড় আমাদের বিশ্বে কোন অংশে অগভীর। সে যাই হোক।
স্বাধীনতা শব্দের মধ্যে যে একটা প্রত্যাশার দিগন্ত ছিল সেখানে আজকাল একধরনের শূন্যতা বিরাজ করছে। উপনিবেশবিরোধী আমলের দীর্ঘ ছায়া যত আবছা হয়ে আসছে ততোই freedom ও independence একসূত্রে মেলানোর ready-made সমীকরণগুলো অপসৃয়মাণ হচ্ছে। এই আস্তিত্বিক সংকট স্বাধীনতার ধারণা কীভাবে কাটায় তার উপরেই স্বাধীনতার ভবিষ্যৎ ইতিহাস নির্ভর করছে।
* স্বরাজের ইতিহাসের ব্যাপারে আগ্রহী পাঠকবৃন্দ আমার এই প্রবন্ধটি দেখতে পারেন: Nazmul S. Sultan, “Self-Rule and the Problem of Peoplehood in Colonial India,” American Political Science Review 114, no. 1 (2020): 81-94।
প্রচ্ছদঋণঃ মুক্তিযুদ্ধ ই আর্কাইভ
*****