ক্ষুধার্ত পৃথিবীর প্রতিনিধি
আমি কেনো ফুল হতে যাবো? দেখেছি মাটির নির্যাসে মিশে আছে মাটি। কালের গর্বে অন্তর্লীন হয়ে গেছে কতো মহাকাল। কতো মহামায়া হারিয়েছে চোখ, কালের আয়নায়।
আমাকে কি করে বেঁচে থাকতে বলো? চেপে গেছি মৃত্যুর বোবামুখ। লাশেদের মিছিলকে নিমেষে করেছি দূর। দূর হতে দূরে আমি ছায়া হয়ে গেছি।
আমাকে কি করে হতে বলো রোদ? মানবিক বোধ সব বেচাকেনা হলো ভালো দামে। কামে গন্ধে মাতাল থেকেছি অসহায় সুখে। কে জানতো এতো ক্ষিদে, এতো ক্ষিদে ধরণীর বুকে?
নজরুল, নজরুল
সকাল থেকেই ভেতরটা ছটফট ছটফট করছে। শেক্সপিয়রের সাথে একগ্লাস মরীচিকা খেয়ে আমরা উঠে পড়লাম। তাবু গুটাতে বললাম নজরুলকে। নাহ, এ অসহ্য অরণ্য, থাকার জায়গা নয়। আমরা তল্পিতল্পা গুছিয়ে ফিরে আসছি। কে যেনো গেয়ে উঠলো করুণ সুরে, মুসাফির ফির আয়েনা….
রাতভর তিন-চারটি কোকিল ডেকে গেলো অবিস্মৃত। সকালে আদুনিস বললেন, তুমি নাহয় চলো আমার সাথে। আমি বললাম, আর নজরুল? তিনি বললেন, সে তো আমাদের হৃদয়েই থাকে; যাকে বলে এক্কেরে সেয়ানা। স্বয়ং ইকবাল আমাকে বললো– তুমি চাইলে ফুল ও নজরুলের তফাৎ করতে পারো। শেখ সাদী বললেন, যে সুবাস ছুঁয়ে থাকে মাটির অন্তর, তারও গভীরে প্রোথিত আছে নজরুল।
একটা বৃক্ষকে কেটে ফেলা হলো। আমাজন চেঁচিয়ে বললো– নজরুল, নজরুল। একটি দর্শনের অপমৃত্যু হলো। সভ্যতা চেঁচিয়ে উঠলো– নজরুল, নজরুল। কিংবা গণ বিপ্লব হলে কোনো দেশে, গুয়েভারা চিৎকার করে উঠে– নজরুল, নজরুল। আমি আর নেরুদা পান খেতে খেতে একটি গল্প জুড়ে দিলাম। বলা হলো, আসছে বসন্তেই দেখা দেবে অমিয় কানন। শুধু তুমি ফুল তোলো নিমগ্ন রেখায়।
তুমি আলো
না, সতর্ক। রাত নিঝুম । তুমি চোর
সবুজ আঁধার। তুমি একা। ঘোর রাত
খুব রাত। তুমি একা। তুমি আলোক
নিজেতে আবির্ভাবের সময়
আমি আমার দুচোখকে প্রচণ্ড রকম বন্ধ রাখি। নিজের চোখে সেঁটে দেই ধারাপাত। আমি আমার অহংকারকে স্থাপন করছি নিয়ত লজ্জায়। আর আমি আমার প্রার্থনাগুলো সযত্নে রেখেছি, একান্ত শয্যায়।
আমি আমার মন্ত্রমুখ দুই নয়নের জলে ভাসিয়ে দিয়েছি। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে, পরাজিতের বিবর্ণ মুখ আর গোখরোর চপল লতা। কানের দুল, ফাগুন সব ভেসে গেছে যমুনার জলে, চপল করোনাকালে।
আর নিজেকে আবির্ভাবের সময় আমি দেখলাম আমার চোখগুলো উল্টে যাচ্ছে অবলীলায়, উল্টে যাচ্ছে নেমকহারামের মতো। আর আপন নিষ্ঠায় আমি ঠিক নিষ্পাপী হয়ে নরকে জ্বলি, মানবের ভূগর্ভস্থ অগ্নিকাণ্ডে।
প্রচ্ছদঃ পাল রেশমী
*****