প্রতিকৃতি
চোখের সম্মুখে তুমি অনতিপ্রবীণ বটগাছ,স্বতঃপ্রণেতা
পিতৃপুরুষের দুর্লঙ্ঘ্য আবেগে ভর করে
সমস্ত বিন্যাসময় ছড়িয়ে পড়েছো যেন মুগ্ধালোক
আন্তরিক প্রতিটি বিরোধে।
কোথাও উন্মুক্ত মাঠ পেরিয়ে সে বিহ্বলতা গ্রাস করে নেয়
অতিবর্ষী নীলিমায় অন্ধ যেমন আজ শোকের অতীত
স্থির,দেওয়ালের শুভ্র স্তব্ধতায় চেয়ে থাকে
সম্ভ্রান্ত মৌনের মাঝে ততটুকু তুমিও দেখেছো।
তোমার সন্তান যারা তাদের নিরবকাশ বসতি এখানে শুরু হয়।
অসমাপ্ত পথের আভাসে একটি সঙ্গীতবহুল অন্ধকার
এখানে মধ্যরাতে নতমুখ শস্যের প্রান্তরে
শাশ্বত দরজা খুলে জেগে থাকে অতিথি-বৎসল।
কীভাবে বন্দনা করি সর্বাংশে গ্রহণ করেছো
অন্তঃকরণে মুক্তি হে আমার অগ্রগামী পিতা
স্বগৃহের ক্ষয়ক্ষতি,যন্ত্রণার সমস্ত হিসেব তুলে রেখে
আমি যে তোমার মতো নির্বিকল্প বুড়ো সারারাত
ভালোবাসি প্রগাঢ় ঘুমের মাঝে জেগে থাকতে,উৎকন্ঠাবিহীন।
দ্বিজ
এতটা অপূর্ণতা অথচ প্রবীণ দুটি শাখা মেলে এখানে বিষাদগাছ
অতলান্ত ঘুমের ভিতরে শুধু প্রতিটি শরীরী আশ্বাসে
সাড়া দেয়,নিষ্পলক তার মুখোমুখি
বসে দেখি বিতৃণ প্রান্তরে কোন হেঁটে যাচ্ছি অনতিকালীন
তবুও সম্বৎসরব্যাপী এই দিগন্তমহিমা
প্রচারিত হবে ভিন্ন মুখ হতে মুখে।
বলা হোক স্বগৃহে আমার জেগে আছে এখনো অতিথি
ফিরে পেতে হবে সেই নামপরিচয়ের আলোক
যেখানে অপরিমেয় কথা বলবো দিনান্তে কেবল
কথায় কথায় এই সুদীর্ঘ অতীতে মুক্ত হবে
যতটা অবশিষ্ট ছিলো করতলে আয়ুর সংকেত।
প্রকৃত সান্নিধ্যে তবু একদা নিবিড় শ্যামলিমা বেঁচে ওঠে
যা কিছু বিগত তার প্রাণদ ঐশ্বর্যে ভরপুর
শরণার্থী পুরুষের অন্তঃকরণে ছায়া দেয়,ঠিকানাবিহীন এই
পরবাসে আনে বৃষ্টির আভাস।
এখনো বয়স ডাকে,কুয়োতলা নীরবে তাকায়,
স্বগতকথনে স্থির,অচঞ্চল কোথাও দাঁড়ালে
অন্ধের প্রকৃতি এই – মনের দর্পণে দেখি অনিঃশেষ,উদ্ধত আকাশ
ফেলে আসা যোগাযোগ, যত পূর্বস্মৃতি তার কাছে তুচ্ছ মনে হয়।
নিয়তি
অচিরসম্ভব কিছু, যেমন ঈশ্বরের পরিণত মুখে
প্রকৃত শোকের বলিরেখা, নতুনতর বাসনা-সঞ্চার
অথবা আশ্চর্য পেশা, নিজেকে বিকিয়ে খাওয়া মধ্যবিত্ত সৎ
মানুষের সঙ্ঘবোধ, জগতের লুব্ধ উপস্থিতি
নিয়ত আশ্রয় পেলে একদিন কবোষ্ণ, নরম হয়ে যায়!
তখন আকাশবীথি, শুঁড়িপথ, অন্ধ দরজায় তালাচাবি
যেখানে যাওয়ার নেই তার প্রতি সন্ধিৎসু আয়াসে
অভিশপ্ত ব্যথা হয়ে বুকের ভিতরে সাময়িক
ঢেউ তোলে – অথচ কি সাড়াহীন, অন্বয়বিহীন শৈশব।
যদিও বিকল্প ভালো এবং অনভিজ্ঞ সেরে ওঠা আছে
মাটিতে মদির ঠোঁট এঁকে দিয়ে শুধু তার ইস্তেহার লেখা
কবিতার সৌন্দর্যবিচার – সব আছে, গুহ্যদেশ এবে গাঁড় হলো।
প্রচ্ছদঃ সুমন মুখার্জী
*****