মানদাসুন্দরী দাসী ও হাম্পটিডাম্পটি (ষোড়শ পর্ব) – তুষ্টি ভট্টাচার্য

পর্ব ১৫
পর্ব ১৭
পর্ব ১৫
পর্ব ১৭

-১৬-

          পলু ও কলুর টনক তো নড়িল, তথাপি সর্বনাশ যা ঘটিবার ঘটিয়া গিয়াছে। সুবিমলবাবু এই গৃহ বেচিয়া দিবার উপক্রম করিয়াছেন। উকিলের পরামর্শ লইয়াই তিনি এই কর্ম করিয়াছেন, যেই হেতু তিনি এক্ষণে এই গৃহের কর্তা, তাঁহার সহিতেই বিক্রয় সম্পন্ন হইয়া যাইবে। পলু, কলুকে তিনি ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না, বড় বৌদিদিকে হুমকি দিলেই তিনি টিপ সহি প্রদান করিবেন। এই সিদ্ধান্তের বশবর্তী হইয়া একরাত্রে ভোজনের পরে তিনি আগামীকাল প্রত্যূষে সকলকে তাঁহার ঘর সংলগ্ন বারান্দায় আসিতে বলিলেন। ভৃত্যমহলে কিছুদিন হইতেই কানাকানি চলিতেছিল। কী হয়, কী হয় ভাব লইয়া তাহারা উচ্ছেদের আশঙ্কায় ভুগিতেছিল। মানদার কর্ণেও গুজবের আভাস আসিয়াছিল। তথাপি সে তত বিচলিত হয় নাই। যাহা হয় হউক, যাহাদের গৃহ তাহারা ভাবিবেন—এই রকম ভাবনা পোষণ করিয়া চলিতেছিল সে। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও টের পায় নাই, তাহাকে এবং তাহার মতো আশ্রিতদের পুনরায় উৎখাত হইতে হইবে। সুবিমলবাবুর ঘোষণা শুনিয়া মানদা সন্দেহের বশবর্তী হইয়া পলু ও কলুর ঘরে যাইয়া উহাদের  সমস্ত ঘটনা অবগত করিল। সন্দেহ তাহাদেরও জাগিয়াছিল। এইবার তাহারাও কঠোর হইল। মানদাকে কথা দিল, পরদিন তাহারা গৃহেই থাকিবে এবং খুড়ার সম্মুখে হাজির থাকিয়া সকল ঘটনা বিস্তারিত ভাবে শুনিয়া লইবে। পলু ও কলুর বয়োক্রম ত্রিশোর্দ্ধ হইয়াছে। তাহারা হয়ত সংসারী হইবে না। কিন্তু পরিণত বয়সের বুদ্ধির ভার তাহাদেরও হইয়াছে। বৈষয়িকভাবে সচেতন না হইলেও তাহারা দুনিয়াদারি শিখিয়াছে। বাস্তবের এই অভিজ্ঞতা তাহাদের থিয়েটার জগতের জটিলতা হইতেই প্রাপ্ত হইয়াছে। পলু ও কলুর নিকট হইতে আশ্বাস পাইয়া মানদা নিশ্চিন্ত হইয়া সেই রাত্রে শুইতে যাইল। কিন্তু ঘুম আসিল না। কী এক শঙ্কায় তাহার মন দুলিতেছিল। বারংবার অস্থির হইয়া উঠিতেছিল চিত্ত। হাম্পটি ডাম্পটি বারান্দায় নিশ্চিন্তে ঘুমাইতেছে। তাহার বিছানায় কিট্টিও নিদ্রিত। রাতচরা পশুরা যখন ঘুমায়, তক্ষণ বুঝিতে হইবে, উহাদের রাত্রে জাগিবার আর প্রয়োজন নাই। নিশ্চিত আশ্রয়, খাদ্যের সংস্থান পাইয়া তাহারাও রাত্রে সুখনিদ্রায় ঢলিয়া যাইতে পারে। সেই নিদ্রা আজ মানদার অপ্রতুল। অনিশ্চিৎ কোনো জগত যেন তাহাকে হাতছানি দিয়া ডাকিতেছে। বারান্দা হইতে নামিয়া ঘাসে পা রাখিল মানদা। দূরে প্রাচীরের উপর আরেক ছায়ামার্জার তাহার জ্বলন্ত চক্ষুদ্বয় লইয়া মানদাকে লক্ষ্য করিতেছে। বিড়ালটি পাটকিলে রঙের বৃদ্ধ হুলো। তাহাকে সকলে ভোলা বলিয়া ডাকিয়া থাকে। ভোলার কোনো সন্তানাদি নাই, স্ত্রী নাই, তাহার হয়ত কামোদ্রেক হয় না। তাহাকে সন্ন্যাসী বলিয়া ভ্রম হয়। যেন এক গেরুয়া বসনধারী বয়স্ক সন্ন্যাসী সকলের খেয়াল রাখিতেছেন। সকলের প্রতি তাহার তীক্ষ্ণ নজর। তিনি কাহারও বিপদ হইতে দিবেন না। তথাপি এই ভোলারই সম্মুখে হাম্পটির এক ছানা হারাইয়া গিয়াছিল। এই কারণে ভোলা হাম্পটির বাকি দুই সন্তানের উপর দিনভর খেয়াল রাখিত। এমনকি এই হাম্পটি ডাম্পটিকেও সে ছোটবেলায় সঙ্গে লইয়া ঘুরিত। তাহাকে ডাকিলে আসে, খায়, আবার চলিয়া যায়। হাম্পটির দুই ছানাকে দিবারাত্র পাহারা দিতেছে সে এক্ষণ। উহাকে কেহ মাথার দিব্যি দেয় নাই, এই হাম্পটি ডাম্পটি, কিট্টি বা তাহার দুই ভ্রাতা, ভগিনীরা ভোলার কেহ নহে। তথাপি সমস্ত পৃথিবীকে দেখভাল করিবার জন্য ভোলা সদা প্রস্তুত। আজ মানদা ভোলাকে ডাকিয়া এই মধ্যরাত্রে কত কথাই না বলিল। ভোলা নিষ্পলক চাহিয়া রহিল। চন্দ্রমার আলোয় উহাকে স্পষ্ট দেখা যাইতেছে। ভোলা শুধুমাত্র অবলাই নহে, আক্ষরিক অর্থেই মূক সে। তাহার কণ্ঠ হইতে মিয়াঁও-এর পরিবর্তে এক অদ্ভুত ফ্যাসফেসে শব্দ বাহির হয়। ভোলার সহিত মানদার পাঁচ-সাত বৎসরের নির্বাক সহবাস। এঁটোকাঁটা খাইয়াই সে এতকাল জীবন ধারণ করিয়া আসিয়াছে। আজ এই মধ্যরাত্রে মানদার আদর সম্ভাষণ পাইয়া সেই বোবা জীব কীরূপে প্রত্যুত্তর দিবে বুঝিতে পারিল না। তাহার ফ্যাসফেসে স্বর লইয়া প্রায় নিঃশব্দে তাহার প্রীতি জানান দিল। মানদার স্মরণে আসিল, হাম্পটি ডাম্পটি যখন ছোট ছিল, দুষ্টামি করিত, এদিক ওদিক পলাইয়া যাইত, ভোলাকে ডাকিয়া মানদা উহাদের ফিরাইয়া আনিতে নির্দেশ দিত। ভোলা অম্লানবদনে সেই আদেশ পালন করিত। উহাদের খুঁজিয়া না পাইলে মানদার নিকট আসিয়া হতাশা ব্যক্ত করিত নিঃসাড়ে। মানদা আজও এই রাত্রে ভোলাকে নির্দেশ দিল—শোন ভোলা। যদ্দিন বেঁচে আছিস, হাম্পটি ডাম্পটি আর কিট্টির দেখভাল করবি। হাম্পটির ছানাগুলোকেও দেখবি। বাচ্চারা ভগবান, বুঝলি? আর তুই তো নিজেইসাক্ষাৎ সন্ন্যাসী। এ জন্মে মরলে তোর মুক্তি নিশ্চিত। তাই যতক্ষণ শ্বাস পড়বে, তোর জাতভাইদের অবোধ শিশুগুলোকে রক্ষা করে চলবি আগের মতোই। আমার বোধহয় ডাক এসেছে। আজ আছি, কাল নেই। এভাবে ফুরিয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত আমরা অন্যের সেবা করে যাব।

এই পর্যন্ত বলিয়া মানদা যেন হাঁফাইয়া উঠিল। ভোলা কী বুঝিল কে জানে, গম্ভীর মুখ করিয়া বসিয়া রইল। আর মানদার এতক্ষণে নিদ্রা আসিল। গভীর ঘুমে তলাইয়া যাইতে লাগিল। যেন এক পাতালপুরীতে প্রবেশ করিতেছে সে। ভারী জলের ভিতর তাহার হালকা শরীর ততোধিক ভারী হইয়া ডুবিয়া যাইতেছিল। বহু চেষ্টা করিয়াও মানদার হাত, পা নাড়াইবার ক্ষমতাটুকু ছিল না। যেন অনন্তকাল ধরিয়া তাহার বুকের ভিতর অদেখা, অজানা অলকানন্দা কুলুকুল স্রোত লইয়া মৃদঙ্গ বাজাইতেছিল। কতক্ষণ আচ্ছন্ন হইয়া পড়িয়াছিল, সে নিজেও জানে না। প্রত্যূষে মানদার জ্ঞান ফিরিলে দেখিল, তাহার মুখে উপর এক দেবশিশু ঝুঁকিয়া রহিয়াছে।  সারা অঙ্গে ভীষণ ব্যথা হাত, পা নাড়িতে পারিতেছে না। একটু যে পাশ ফিরিবে, তাহার জো নাই। শরীর বিদ্রোহ করিতেছে। বেবো শুকনা মুখ লইয়া একপাশে দাঁড়াইয়া আছে। মদন দাদা দুই একবার আসিল, মানদাকে চক্ষু মেলিতে দেখিয়া আশ্বস্ত হইয়া ফিরিয়া যাইল। কিছুক্ষণ পরে এক ডাক্তারবাবুকে সঙ্গে করিয়া ফিরিল। ডাক্তারবাবু গম্ভীর মুখে মানদার নাড়ী টিপিয়া, বক্ষ, উদর টিপিয়া পরীক্ষা করিলেন, তাহার পর মানদাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘কী কষ্ট আপনার? কোথায় অসুবিধে হচ্ছে?’ মানদা কোনোক্রমে ঘাড় হেলাইয়া বলিল, ‘না ডাক্তার বাবু, আমার কোনো কষ্ট নেই, অসুবিধেও নেই।’ ডাক্তারবাবু খানিক অবাক হইলেন। তাহার পর কাগজে খসখস করিয়া কী যেন লিখিয়া চেয়ার হইতে উঠিয়া পড়িলেন। মদন দাদা ডাক্তারবাবুর ব্যাগ হাতে ধরিয়া তাঁহার পিছে চলিল। কাগজখানি রাখিল তাহার ফতুয়ার পকেটে। বেবো আসিয়া বলিল, ‘পলু আর কলুদাদা ডাক্তার ডেকে এনেছে। মদন দাদাকে এবার ওষুধ কিনতে পাঠাল, আমি নিজের চোখে দেখে এলাম। আর ডাক্তার বাবু বললেন তোমার এখন বিছানা থেকে ওঠা চলবে না। একমাস বিশ্রাম নিতে হবে। কাল রাত্রে তোমার …কী যেন বলল, হ্যাঁ হালকা ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এটার মানে কী গো?’ মানদা নিজেও ইহার মানে স্পষ্ট বুঝিল না, তবে তাহার মুখ নিষ্প্রভ হইয়া আসিল। এক মাস বিশ্রাম লইবে কী করিয়া সে? তাহার সারা দিনের কাজকর্ম করিবে কে? বিশ্রাম লইলে ইহারাই বা তাহাকে খাওয়াইবে, পরাইবে কেন? হায় ভগবান! ইহার চাইতে একেবারে তুলিয়া লইল না কেন! বেবো যেন তাহার মনের কথা পড়িয়া ফেলিয়াছে এমন ভঙ্গি করিয়া বলিল, ‘তুমি কিচ্ছু চিন্তা কর না। সারাদিন নিয়ম মেনে চলবে, কাজ করা বারণ তোমার। পলুদাদা সব্বাইকে বলে দিয়েছে একথা।’

তথাপি মানদা মরমে মরিয়া যাইল। এইরূপ ভগ্ন শরীর আর কোন কাজে আসিবে এরপর? ইহারাই বা কদ্দিন সেবাযত্ন করিবে? ঔষধ জোগাইবে? তাহাকে মরণ কেন দিলেন না ঈশ্বর! ভাবনার রেশ বেশিক্ষণ স্থায়ী হইল না। ঔষধের প্রভাবেই হউক বা ক্লান্তি, নিদ্রা তাহাকে মুক্তি দিল। এইরূপে দিন কতক কাটিল। ধীরে ধীরে শরীরে বল ফিরিয়া পাইতে লাগিল মানদা। অনর্থক শুইয়া থাকিবার মানুষ সে নহে। ফলে সে প্রায়শই টুকিটাকি কর্মে নিজেকে পুনরায় ব্যস্ত করিয়া রাখিল। এই কর্মই তাহার সুখ, তাহার ঔষধ। পথ্য বলিতে বেবো ও হাম্পটি, ডাম্পটি, কুট্টুস তো রহিয়াছেই। দিন দশেকের ভিতরেই মানদা পুনরায় রান্নাঘরে প্রবেশ করিল। তাহার তদারকিতে নতুন করিয়া মুখরিত হইয়া উঠিল এই গৃহ। তবে এই গৃহের আয়ুষ্কাল যে ফুরাইয়া আসিয়াছে, ইহাতে সকল বাসিন্দাদেরই কোনোরূপ সন্দেহ নাই আর। এক মধ্যাহ্নে আচার রৌদ্রে দিবার সময়ে, বেবোর মুখে তাহার অসুস্থতাকালীন সময়ের বিবরণ শুনিল মানদা। ‘জানো তো পিসী, এই কদিনে খুব চেঁচামেচি হচ্ছিল বাবা আর পলু, কলুদাদার মধ্যে। বাবা এই বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে এক সাহেবের কাছে। আমরা এবার নতুন বাড়িতে চলে যাব নাকি!’ মানদা আভাস ইঙ্গিতে বাড়ি বিক্রয়ের খবর শুনিয়াছিল বটে, কিন্তু তাহাতে শরিকদের ভিতর অশান্তির হেতু কী, এই লইয়া সংশয়ে পড়িল। বেবোর মুখের দিকে তাকাইয়া বুঝিল, সে কিছু যেন লুকাইতে চাহিতেছে। বেবোকে মানদা এইবার চাপিয়া ধরিল। ‘আর কী হয়েছে আমাকে খুলে বল। কিছু লুকোস না!’ বেবো যেন মরমে মরিয়া যাইল, অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে বলিতে লাগিল, ‘বাবা তোমাকে আর কাকে কাকে যেন নতুন বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছে না। পলুদা আর কলুদাকে বলেছে, বাড়তি খরচ কমাতে হবে এবার। সেই নিয়েই তো দাদারা চেঁচামেচি করছে। ওরা এ বাড়ির সকলকে নিয়ে যেতে চায়।’ মানদার বুকের ভিতর ছ্যাঁত করিয়া উঠিল। এই অশনি সঙ্কেত কি সে পূর্বেই বুঝিয়া ফেলিয়াছিল? সেই কারণেই বোধহয় তাহার ঐরূপ মানসিক বৈকল্য আসিয়াছিল, আর তাহাতেই অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিল! আকাশে সিঁদুরে মেঘ দেখিলেই সে ঝড়ের পূর্বাভাস ধরিয়া লয়। ইহা যে তাহার কল্পিত ভীতিমাত্র নয়, আজ পুনরায় তাহাই প্রমাণিত হইল।

  রাত্রের আহার লইয়া মানদা আজ বহুদিন বাদে কলু, পলুর কক্ষে প্রবেশ করিল। তাহাকে দেখিয়া উহারা একযোগে হাঁহাঁ করিয়া উঠিল। ‘তুমি কেন এসেছ এই অসুস্থ শরীর নিয়ে? তোমাকে বিশ্রাম নিতে বলেছি না আমরা?’ ‘বিশ্রাম অনেক নিয়েছি বাবারা। আজ একটা কথা জানতে এলাম।’ কলু, পলু সবটুকু বুঝিয়া অধোবদনে দাঁড়াইয়া রহিল। ‘এইবার তাহলে এই বাড়ি থেকে আমার পাট উঠল, তাই তো? ভগবান আমাকে চিরবিশ্রাম নিতে দিল না। এবার বল বাবারা, আমি এই বয়সে কোথায় যাই?’ এই বলিয়া মানদা সকল ভয়, ভীতি ভুলিয়া ডুকরাইয়া উঠিল। পলু তাহাকে হাত ধরিয়া চেয়ারে বসাইয়া দিল। তাহার মুঠিতে ধরিয়া রাখা মানদার কবজিতে চাপ বাড়িতে লাগিল উত্তেজনায়। মানদার চক্ষে চক্ষু রাখিয়া সে বলিল, ‘শোন ছোটমা, আমি বেঁচে থাকতে তোমাকে আর কাঁদতে দেব না। এতদিন হয়ত সেভাবে তোমার যত্ন করতে পারিনি, কিন্তু আজ তোমায় কথা দিলাম—তোমাকে এই বাড়ি থেকে উৎখাত হতে হলে হবে। কিন্তু সহায়-সম্বলহীন, আশ্রয়হীন হতে হবে না।’ মানদার বুকের ভিতরটা কাঁপিয়া উঠিল। কলু আসিয়া যোগ দিল দাদার সহিত। সেও বলিল, ‘তোমার কোনো ভয় নেই, আমরা আছি। আমরা না থাকলেও যেন বাকি জীবনটা তোমাকে কারুর দয়ায় চলতে নাহয়, সেই ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি।’ মানদা এইবার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হইয়া হাদের বাক্যে তাহার ভরসা হইতেছে ঠিকই, কিন্তু ইহারা তাহাকে লইয়া কী করিতে চাহে, তাহা বুঝিতে পারিতেছে না। দুই ভাই খাইলে মানদা নিজের ঘরে চলিয়া যাইল ধীরে ধীরে। তাহার পর যথারীতি ভাবনা পাইয়া বসিল। এই গৃহ ছাড়িতে হইবে ভাবিলেই বুকটা মোচড় দিয়া ওঠে। না জানি, আবার কোথায়, কীরূপে অবস্থান হইবে! না জানি কী আছে কপালে! যেইখানেই যাক, তাহার হাম্পটি, ডাম্পটি, কুট্টুসকে লইয়া তো যাইতে পারিবে না! বেবোর সহিত বাক্যালাপ হইবে না! উহারা ব্যতীত তাহার আর আছে কে? নিজ বাসস্থান ও প্রিয়জনের বিচ্ছেদ বেদনায় ভারাক্রান্ত হইয়া রহিল সে। ঔষধের প্রভাবে দীর্ঘক্ষণ ভাবনা স্থায়ী হইল না, ছিন্ন নিদ্রা হইল বটে কিছুক্ষণ। মধ্যরাত্রে ঘুম ভাঙিয়া দাওয়ায় বসিয়া রহিল সে। মনে হইল, আকাশের চন্দ্রমাও তাহাকে যেন বিদ্রূপ করিতেছে, নক্ষত্রগুলি যেন চক্ষু টিপিয়া তাহার সহিত মস্করা করিতেছে। ঝিমুনি আসিলে মানদা ঐখানেই আঁচল পাতিয়া শুইয়া পড়িল। সে ঘুমাইলে হাম্পটি, ডাম্পটি আর কিট্টি আসিয়া তাহাকে ঘিরিয়া, তাহার গাত্র সংলগ্ন হইয়া শুইয়া পড়িল। আকাশের চন্দ্রমা ইহাদের দেখিয়া আর বিদ্রূপ করিল না, নক্ষত্রেরা ইহাদের প্রেম দেখিয়া মুগ্ধ হইয়া চাহিয়া রহিল। ধীরে ধীরে শুকতারা আসিয়া উহাদের সঙ্গে যোগ দিল। ভোরের আলো ফুটিলে চেনা পরিচিত বায়সবৃন্দ মানদাকে সমস্বরে ডাক দিল—ক্কা! (ক্রমশ)

প্রচ্ছদঃ সুমন মুখার্জী

পর্ব ১৫
পর্ব ১৭
পর্ব ১৫
পর্ব ১৭