আলোর তিরতিরে কাঁপনে দেওয়াল জুড়ে যে-ছায়া অস্পষ্ট দুলছে, বোঝা যায়, সেটি দাঁড়িয়ে-থাকা কোনও-এক নারীশরীরের। পুরোনো কাঠের জানলার জীর্ণ কপাটের ফাঁক গলে যতটুকু দেখা যায়, পিঠ পর্যন্ত নেমেছে খোলা চুলের ঢল, অযত্নের ওই কেশভারের নিচে পোশাক না-থাকলেও ততটা দৃশ্যমান নয় কারণ যেহেতু মেয়েটির সামনের দিক থেকে আলোর উদ্ভাস। এক নজরে হঠাৎ দেবী বলে ভুল হওয়াটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। আপনাকে জানিয়ে রাখি, ওই নগ্নিকার সামনে থেকে আলোর যে-আভাস কিঞ্চিৎ অন্ধকারে তার নিতম্বদেশ মুড়ে রেখে সামান্য হলেও রহস্যময়ী করে তুলেছে তাকে, সেই আলোর উৎসে আছে পঞ্চপ্রদীপ। মেয়েটিকে দেবীজ্ঞানে আরতি করে চলেছে—কপালে তিলক, শরীরে আড়াআড়ি গলানো পৈতে, বাঁ হাত নিচে রাখা ঘণ্টাখানি ধরার চেষ্টায়—এক পূজারি ব্রাহ্মণ।
এইটুকু দেখে কী ভাবছেন? বুঝতে পারছি, আপনার পূর্বজ্ঞান নিশ্চিত আপনাকে মনে পড়িয়ে দিচ্ছে রামকৃষ্ণ পরমহংসের উপাখ্যান : নিজের স্ত্রী সারদামণিকে দেবীরূপে পূজা করছেন পাগল ঠাকুর। এ আর নতুন কী! বাঙালি আজ যা করে, তা আগামীকাল গোটা ভারত করে। আচ্ছা, তেমনটাই যদি হত, তাহলেও কি দেবীর নগ্নরূপ! আসলে বাঙালির একটা বড়ো সমস্যা হল, কথায়-কথায় তুলনা করে! না-মিললেও জোর করে, গলাবাজি করে হলেও, মেলাবেই! সামান্যও যদি মেলানোর মতো কিছু চোখে পড়ে, বাকিটার তখন আর প্রয়োজন পড়ে না, ওইটুকুকেই আড়ে-বহরে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে গালভরা শিরোনামের দুঃসাধ্য সিদ্ধান্তের দুর্ধর্ষ সন্দর্ভ প্রস্তুত করে ফেলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায়। বিষয়ের ন্যূনতম দেখেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাওয়া অনেক বাঙালির নিজস্ব স্বভাব। এত দ্রুত মীমাংসায় পৌঁছনোর মতো আমাদের এই আখ্যানটি সরলরৈখিক নয় মোটেও; বস্তুত, দুনিয়ার কোনও আখ্যানই তা নয়। আমি বরং আপনাকে নিয়ে যাব এই নৈশারতির একেবারে শুরুতে; অবশ্য তারও আগে জানাব ওই পুরোহিতের পরিচয়—।
যজমানের নাম শ্রীদামোদর ওঙ্কারনাথ শাস্ত্রী। বেনারসের পীতাম্বর পুরায়, পৈতৃক ভিটেতে, হিমেল কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে জন্ম। ছেলেবেলায় বাবার কাছে সংস্কৃত ভাষা শিখেছে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে। ঘরের ভিতরে থেকে, অতি অল্প বয়সেই, সকল শাস্ত্র অধ্যয়ন করেছে সে। বংশপরম্পরায় যজমানি তাদের জীবিকা। দামোদরের বাবা ওঙ্কারনাথ ছিল গোধূলিয়ার বৃহস্পতি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত। মাঝে-মধ্যে ওঙ্কারনাথ ছেলেকে নিয়ে যেত মন্দিরে। গর্ভগৃহের একটা কোণে বাধ্য হয়ে বসে থাকত দামোদর; চোখে মায়া নিয়ে দেখত পূজার্চনার বিবিধ পদ্ধতি। পুজো যতক্ষণ চলত, প্রণামের ভঙ্গিতে হাতজোড়া এলিয়ে থাকত তার কোলে। পুজোর পর প্রণাম শেষ হলে লীলাকমল পাপড়ি মেলত; সেবকের হাত ঘুরে দেবতার প্রসাদ এসে পড়ত সেখানে।
যে-বছর হাইস্কুলে ভর্তি হয় দামোদর, তার ঠিক আগের বছর টিভি এসেছিল তাদের বাড়িতে। সাদা-কালো ছবি। ছাদের উপর অ্যান্টেনা। ঘুড়ি কেটে গেলে হাওয়ায় ভাসতে-ভাসতে কখনও-বা সুতো আটকে ঝুলে থাকে তাতে। মেকানিক অ্যান্টেনা ঠিকমতো লাগিয়ে দিয়ে চলে গেলে পর মা আর বাবার আলগা কথাবার্তা থেকে সেই সময় সে জেনেছিল, দূরদর্শনে নতুন কী-একটা ধারাবাহিক শুরু হতে চলেছে, আর ওঙ্কারনাথ শাস্ত্রীও তাই ধার-দেনা করে কিনে এনেছে টিভিখানা। তারপর তো এক রবিবারের সকালে বাবা তাকে পড়া থেকে ছুটি দিয়ে দিল আর ডেকে এনে বসাল টিভির সামনে। দামোদর দেখেছিল, সব কাজ ফেলে তার মা পর্যন্ত এসে বসেছে মেঝেয়। টিভিতে ধনুর্ধারী এক যুবকের স্থিরচিত্রের পাশে কিছু-একটা লেখা, ছোটো পর্দায় সেভাবে বুঝতে পারেনি দামোদর; তারপর সেই ছবি সরে গিয়ে নাম দেখানো শুরু হলে বেজে ওঠে আবহসঙ্গীত :
সীতারামচরিত অতি পাবন
মধুর সরস অরু অতি মনভওন
পুনি পুনি কিত্নে হো শুনে শুনায়ে
হিয় কি প্যায়াস বুঝত না বুঝায়ে
সেই প্রথম দিন থেকেই সে খেয়াল করত, রামায়ণ সম্প্রচারের সময় হাতের সব কাজ ফেলে ঠিক নিয়ম করে বসে পড়ত মা; আর যখন গান ভেসে আসত টিভির ঘোরানো চ্যানেলের ঠিক নিচের জালির ওপার থেকে, তালে-তালে তালি দিয়ে দুলত মা-বাবা—দু’জনেই।
মা-বাবার থেকে এই সকল ভক্তি-শ্রদ্ধা দামোদর সেইভাবে গ্রহণ করতে পারেনি কখনওই। বড়ো হওয়ার পথে যেহেতু মনে-মনে বাবাকে ভয় পেতে শুরু করেছিল, তাই সমঝে চলত সর্বদা। তাছাড়া এটুকু ততদিনে সে বুঝে ফেলেছিল, যজমানি ছাড়া পেট চালানো তার পক্ষে অসম্ভব। অতএব, মহাজনো গতঃ সঃ পন্থাঃ। বাবা মারা যাওয়ার পর মা চলে গেল স্থানীয় আশ্রমে। বিধবা ব্রাহ্মণীদের জন্য কাশী তোফা জায়গা।
ওঙ্কারনাথের মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। পুলিশের গুলি নাকি এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিয়েছিল ছাতি। অন্তত তেমনটাই শুনেছিল দামোদর, বাবার চিতাভস্ম নিয়ে এসেছিল যারা, তাদের মুখে। শুধু তার বাবারই নয়, পুলিশের গুলিতে মারা যাওয়া আরও অনেকের ভস্ম ছিল ওদের কাছে। বিভিন্ন মহল্লায় ঘুরে-ঘুরে বলেছিল ওরা, কীভাবে শুধুমাত্র ধার্মিক হিন্দু হওয়ার কারণে মুলায়মের সরকার গুলি করে মেরেছে সেইসব সাধু-সন্তদের।
তখন সদ্য গোঁফের রেখা উঁকি দিয়েছে দামোদরের নাক আর ঠোঁটের মাঝখানে, মন্দির থেকে পুজো সেরে একদিন একটু দেরি করেই ফেরে ওঙ্কারনাথ। দুপুরে খেতে বসে স্ত্রী আর ছেলেকে জানিয়েছিল, দিন চারেক পর কাশী থেকে পুরোহিতদের একটা দল রামপুজোর জন্য অযোধ্যা যাচ্ছে; সেও যাচ্ছে ওই দলের সঙ্গে। ‘আদবানিজি রথ সে আয়েঙ্গে। সোমনাথ মন্দির সে নিক্লা হ্যায় ও রথ। উন্কে আনে কে বাদ শুরু হোগা রামলালা কা পূজন।’
টেলিভিশনে রামায়ণ শুরু হওয়ার পর থেকে, কিংবা তার সামান্য আগে-আগেই, নিজেকে বদলাতে শুরু করেছিল কাশী। রমরমিয়ে চলতে-থাকা রেন্ডিখানা সরকারি নির্দেশে তখন চলে যায় শিবদাসপুরে। দশাশ্বমেধ ঘাটে ক্রমেই জাঁকালো হয়ে উঠতে থাকে গঙ্গারতি। দিনে বৃহস্পতি মন্দিরের পুজো সেরে সন্ধ্যায় গঙ্গারতি করতে শুরু করে ওঙ্কারনাথ শাস্ত্রী।
রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রামের পুজো করতে অযোধ্যা গিয়ে আর ফেরেনি ওঙ্কারনাথ। ধাক্কাধাক্কিতে বাবরি মসজিদের কাছাকাছি চলে এসেছিল, পুলিশের গুলি তার শরীর ভেদ করে যাওয়ার আর কিছুমাত্র দেরি ছিল, তার ঠিক আগে সে শুনে ফেলেছিল, রথ থামিয়ে দেওয়া হয়েছে বিহারে আর লালকৃষ্ণ আদবানি গ্রেপ্তার। মাইকে বারবার বারণ করছিল পুলিশ, ওঙ্কারনাথও ফিরতে চেয়েছিল সেই মুহূর্তে, কিন্তু কাঁদানে গ্যাসের কারণে ঝাপসা দৃষ্টি আর লোকজনের ধ্বস্তাধ্বস্তি তার পথ আটকে দাঁড়ায়। পীতাম্বর পুরার নিজস্ব মকানে আর ফেরা হয় না তার।
বৃহস্পতির মন্দিরে ওঙ্কারনাথের যে-আসন ছিল, সেই স্থান না-পেলেও ভালোমতো মাথা গোঁজার জায়গাটুকু মিলে যায় দামোদরের। সঙ্গে প্রতি সন্ধ্যায় গঙ্গারতির সময় তন্ত্রধারকের কাজও।
এর বছর দুয়েক পর যখন আবারও বেনারস জুড়ে সেবকদের একজোট করার কাজ শুরু হয়, তখন সেও গিয়ে ভিড়েছিল সেখানে। বাবা যা পারেনি, ছেলে তাই করবে। মসজিদের ভিতর থেকে, বিধর্মীদের কারাগার থেকে মুক্তি দেবে রামলালাকে; পুজো করবে ধূমধাম করে। যদিও যখন অযোধ্যায় যাওয়ার দিন আসে, পাশের বাড়ির ছোটো ছেলেটাকে দিয়ে নিজের অসুস্থতার খবর দলের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল সে। জন্মদিনের আগেই এসেছিল সংবাদ : ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া গেছে বাবরি মসজিদ। স্নান করে নতুন ধুতি আর উত্তরীয় পরে বাবার ছবির সামনে প্রদীপ জ্বেলেছিল দামোদর, পরে আশ্রমে গিয়ে দেখা করেছিল মায়ের সঙ্গে।
এরপর সময়, নিস্তরঙ্গ, বয়ে যায় নিজের খেয়ালে। মাঝে মায়ের মৃত্যু বাদে বলার মতো আর একটি ঘটনাই ঘটে দামোদরের জীবনে : তন্ত্রধারকের বেশ ছেড়ে সে এখন পুরোদস্তুর পূজারি। প্রতি সন্ধ্যায় গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে নিজে আরতি করে। তার এপাশে-ওপাশে সার দিয়ে একসঙ্গে নেচে ওঠে আরও কত-কত প্রদীপদান। নিঃসীম অন্ধকারে ডুবে থাকে গঙ্গাবক্ষ, তার পশ্চিমে তখন আলোর খেলা। দশাশ্বমেধের ঘাটে তখন আরতি করে চলে অকৃতদার দামোদর শাস্ত্রী।
বৃহস্পতির মন্দিরের কাজও, ওঙ্কারনাথের মতোই, বজায় থাকে তার হাতে।
গঙ্গারতির পর মাঝে-মধ্যে ক্লান্তি গ্রাস করে তাকে; বিশেষ করে সেইসব দিনগুলোয়, যেদিন ঘুম হয় না দুপুরে। আরতির শেষে ঘরে ফিরে দামোদর ক্লান্তি অপনোদনের উপায় খুঁজত প্রথম-প্রথম। খুঁজে না-পেয়ে অস্থির হয়ে পায়চারি করত ঘরের ভিতর, বসে পড়ত খাটে, মাথা চুলকোত, হাই তুলত ঘন-ঘন। তারপর ঘুমিয়ে পড়ত একটা সময়। রাতের খাবার পড়ে থেকে-থেকে নষ্ট হয়ে যেত। এমনই এক ক্লান্তি দূরীকরণের বৃথা চেষ্টার রাতে তার মনে পড়ে গিয়েছিল ওঙ্কারনাথ শাস্ত্রীর কথা।
গঙ্গারতির পর বাড়ি ফিরে, মুখ-হাত ধুয়ে, ভিতরের ঘরে ঢুকে যেত ওঙ্কারনাথ। দামোদর তখন ছোটো, দেখত, গ্লাসে জল নিয়ে মা সেই ঘরে ঢুকত। দরজা বন্ধ হয়ে যেত ভিতর থেকে। জলশূন্য গ্লাস নিয়ে মায়ের বেরিয়ে আসতে লেগে যেত আরও অনেকটা সময়। ওই ঘরের ঠিক বাইরে, দেওয়ালের পাশে, জড়ো করে রাখা লেপ-তোশকের উপর একদিন উঠে পড়ে জানলার ফোকরে চোখ রেখেছিল সে, দেখেছিল, মা শুয়ে আছে বিছানায়, শাড়ি ও শায়া উঠে গেছে পেটের কাছে, দু’ পা দু’ দিকে ছড়ানো আর বাবা উঠে আসছে তার উপর। মায়ের মুখ চেপে ধরে তারপর হাপরের মতো বাবার ওঠা এবং নামা।
ছেলেবেলায় লুকিয়ে-দেখা ঘটনাটি মনে পড়ে যেতেই ক্লান্তি কাটানোর পথ পেয়ে যায় দামোদর। অথচ অকৃতদার সে, বাঁধা মেয়েমানুষ নেই তার ঘরে; ফলত, শিবদাসপুর। ফলত, রেন্ডিখানা।
গঙ্গারতি শেষ হলে পর বাঙালিটোলার গলিতে না-ঢুকে এরপর থেকে দামোদর চলে আসত গোধূলিয়া চকে। বড়ো রাস্তার উপর মুন্না বানারসির পানের দোকান। দোকানের নামও তেমন : বেওকুফ পানওয়ালা। ভালো করে সাজা একখানা পান মুখে পুরে বটুয়া থেকে বের করত মোবাইল ফোন, পরিচিত দালালের নম্বর ডায়াল করত, তারপর মালের অর্ডার দিয়ে মাইল খানেক পথ হেঁটেই ফিরে আসত পীতাম্বর পুরায়। যথাসময়ে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে যেত মেয়ে; তার বলবর্ধক।
দালালের কাছে দাবি থাকত দামোদরের : মেয়েটি শুধু ডাগর হলেই চলবে না, সঙ্গে মুসলমানও হতে হবে। যখন যে-মেয়ে আসবে, হিজাব কিংবা বোরখা যেন না-পরে; হিন্দুদের মহল্লায় তাতে নজরে পড়ে যাওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা। প্রতিবার এই এক কথা শুনে-শুনে দালালেরও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল খরিদ্দারের চাহিদা। তার মোবাইলে যখনই ফোন আসত দামোদরের, সে ‘জি হাঁ, মিল যায়ে গা এক সে বড়্কর এক’ বলে শিবদাসপুরের বেশ্যাপট্টিতে ঢুকে হাঁক পাড়ত আর তারপর নিজের মোটরবাইকের পিছনে বসিয়ে মেয়েটিকে ছেড়ে দিয়ে আসত পীতাম্বর পুরায় ঢোকার ঠিক মুখটায়। অতঃপর মৌজ করে একটা পান মুখে ভরে সিগারেট জ্বালাত। পুরো সিগারেটটা শেষ করে ফিরে আসত শিবদাসপুরে। কাজ শেষ করে, দামোদরের থেকে হিসাব বুঝে নিয়ে, অটো কিংবা টোটোয় ফিরে আসত মেয়েরা।
আজ গঙ্গারতির সময় থেকেই দামোদরের শরীর নুয়ে আসছিল ক্লান্তিতে। এই ক্লান্তি শুধুই শরীরের, না মনেরও—অতশত না-ভেবে কোনওমতে আরতি শেষ করেছিল সে। মুন্নার দোকানে গিয়ে পান খেতেও মন চায়নি। বাঙালিটোলার পাথুরে গলিপথ দিয়ে ফেরার পথে, হাঁটতে-হাঁটতেই, ফোন করেছিল দালালকে।
সময়মতো দরজায় শিকলের আওয়াজ শুনে দরজা খুলেছিল দামোদর। উগ্র প্রসাধন ওর না-পসন্দ্, দরজায় দাঁড়ানো মেয়েটিকে দেখে সে বুঝেছিল, দালাল পরিচিত হলে আদতে খদ্দেরেরই সুবিধা।
মেয়েটিকে ঘরের ভিতর নিয়েছিল ও। সব ক’টা জানলার পর্দা টেনে দিয়ে শালোয়ার-কামিজ খুলতে বলেছিল। এসব কাজে মেয়েটি বেশ পটু, পোশাক খোলার ধরনেই বুঝতে পেরেছিল দামোদর।
সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে গেলে পর মেয়েটিকে বিছানার উপর ঠেলে ফেলেছিল সে। চেপে বসেছিল পেটের উপর। তার শরীরও নিরাবরণ তখন; সুতোমাত্র নেই গায়ে।
‘নাম ক্যায়া হ্যায় তেরা?’ মেয়েটির বুক দুটো ডলতে-ডলতে জিজ্ঞাসা করেছিল দামোদর।
কেঁপে-কেঁপে উঠছিল মেয়েটি : ‘জি, গুলাবোঁ।’
‘আস্লি নাম বোল্।’
‘হেনা। আহ্!’ শিউরে উঠে বলেছিল মেয়েটি।
‘হিনা! বড়িয়া নাম!’ মেয়েটির বুকে মুখ ডুবিয়ে দিয়েছিল দামোদর।
‘হিনা নেহি, হেনা। ম্যায় বঙ্গাল সে হুঁ।’
মুখ তুলেছিল দামোদর : ‘হেনা! পুরা নাম ক্যায়া হ্যায়? হেনা খান? হেনা খাতুন? হেনা পারভিন? ক্যায়া হ্যায়?’
‘হেনা সান্যাল।’
মেয়েটির পুরো নাম শুনে তার শরীরের উপর থেকে ছিটকে সরে গিয়েছিল দামোদর। ঘরের ভিতর পাগলের মতো খুঁজে চলেছিল গঙ্গাজলের বোতল। খুঁজে পেয়ে পুরোটা ঢেলে দিয়েছিল নিজের মাথায়। তারপর আগামীকালের জন্য সাজিয়ে-রাখা পঞ্চপ্রদীপের সলতেগুলোয় আগুন দিয়েছিল কাঁপা হাতে আর বারবার বলে চলেছিল : ‘হা রাম’।
এরপর কী ঘটেছিল, তা আপনার জানা।
~~~
প্রচ্ছদ : শিমুল সরকার