নির্বাক সময়ের গল্প – রোমেল রহমান

কান পাত গো রাজা

তোমার সিংহাসনে ঘুন পোকাদের গান!

তোমার পতনধ্বনি শুনতে পাচ্ছ না?

তুমি মরবে বোকা রাজা!

[বীজপদ্য]


যা হতে চলেছে


যা হতে চলেছে

(ক)

তিনি করান

আমি করি

তিনি টানেন

আমি দড়ি!

জনতা বলে,

আমরা নড়ি!!

  সকালে ঘুম থেকে উঠেই কল্যাণমন্ত্রী যিনি দুর্ভাগ্যবশত এখন মন্ত্রী, যিনি কিছুদিন আগেও ভোরের ডাকে সাড়া দিতে আগানে বাগানে যেতেন, সেই শেকড় অভ্যাসের উপর শ্রদ্ধাবশত এখনো তিনি প্রভাতের প্রথম মূত্রবিসর্জন কলাটি বাড়ির পুষ্প বাগানে সম্পাদন করে থাকেন। ফলে, সকালে তিনি যখন ঘুম থেকে উঠে বাগানের গোলাপ গাছের গোড়ায় দাঁড়িয়ে মুতে দিলেন এবং তার মুতের অতি উচ্চসারজনিত উত্তাপে এক টগবগে আগুন গোলাপ যেটা রাষ্ট্রীয় স্নেহযত্নকসরতে পুষ্পিত হয়ে নিজমনে হাওয়ায় শোভা ছড়াচ্ছিল…সুবাস ওড়াচ্ছিল…! উৎপাদিত সেই তুমুল গোলাপটি আত্মবিসর্জনকারীর মতো বিষণ্ণ থেকে ক্রমশ করুণ হয়ে ঝরে পড়লো। আর গোলাপের পাপড়িগুলো অকালে ঝরে পড়লো মন্ত্রীর ফেননিভ মূত্রের উপরে! ফলে পুনরায় প্রমাণিত হল, ফুল শুদ্ধসংস্কৃতির পাশাপাশি অপসংস্কৃতি ঢাকতেও ব্যবহৃত হয়। আর ঠিক তখনই মন্ত্রীর খামারের মোরগটা গলা চিরে ডেকে উঠলো। মন্ত্রী ভোরবেলায় এই বিকট প্রাকৃতিক এলার্মের তেজে বিরক্ত হয়ে এক দলা বাসি থু ফেলেন। এবং মন্ত্রীর মোরগ আবার যখন ডাকতে থাকে এবং সঙ্গে সঙ্গে মোরগের আওতাধীন মুরগীগুলোও কক্‌… কক্‌…ক্ক… কোরতে থাকে, ফলে তিনি অতিবিরক্ত হয়ে তার প্রধান চাপরাশিকে ডাকেন। শশব্যস্ত হয়ে চাপরাশি আসতেই তিনি বলেন, চাকু আনো! চাপরাশি পূর্বাভ্যাসবশত কোমরে চাকু গুঁজেই এসেছিল। মন্ত্রী বললেন; মুর্গাটারে ধরো তো! চাপরাশি অনেক দৌড়াদৌড়ির পর মোরগটাকে যখন ধরে ফেলতে সফল হয় তখন মোরগটার চোখে প্রিয়তমা মুর্গিদের ছেড়ে যাবার বেদনা কতোটা প্রকট ছিল তা আমরা জানি না, কেনোনা কণ্ঠনালি কেটে দেবার সঙ্গে সঙ্গেই পুচুৎ(!) কোরে সে পায়খানা করে দেয় এবং তা চাপরাশির হাত লেগে সুয়িং কোরে কিঞ্চিৎ মন্ত্রীর গোঁফে লেগে যায়। মন্ত্রী লাভাতপ্ত হয়ে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে হুকুম দেন, শালারে ছুইলা গ্রীল কইরা ফেলাও!

কল্যাণমন্ত্রী যথেষ্ট বিরক্তি নিয়ে বেসিনে মুখ ধুতে থাকে, তার বিরক্তি রাষ্ট্রপ্রধানের উপর।  নিজের ক্ষমতার উজাড় ব্যবহারের একটা মাত্রা থাকা উচিৎ। কথায় কথায় তিনি নতুন নতুন প্রকল্প নেন আর মুহূর্তে মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলান। সেদিন যখন মিটিঙয়ে ‘আমাদের জামানার জাতীয় পাখি’ প্রসঙ্গ আসলো, এবং সকলে সম্মত হল, কাক প্রসঙ্গে! কেননা সকল শোভন পাখিরা বিদায় নিয়েছে নগর ছেড়ে, রাজাকে ছেড়ে যায়নি শুধুমাত্র কাক। তাছাড়া নাগরিক জীবনকে এ্যাবজর্ভ করতে পেরেছে কাক। এবং রাজধানী সহ সমগ্র দেশে নাগরিক জীবনের চতুর্দিকে কেবল দৃশ্যমান কাক। তারা যেন বিনাবেতনে অনেকটা স্বেচ্ছাসেবকের মতো কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নকর্মী, কিংবা ঘুম ভাঙানিয়া এলার্ম। তাদের নগরপ্রেম মেডেল দেওয়ার মতো। ফলে প্রধানমন্ত্রী এই নাগরিক পক্ষীটিকে জাতীয় পাখি করার আহ্লাদে যখন চুঁই চুঁই এর মধ্যে দুম কোরে তার পদলেহি পশুটি; স্যরি পশুমন্ত্রী বলল, স্যার শেষমুহুর্তে আরেকটা প্রস্তাব আরজ করতে চাই যদি ইজাজাত দেন! ফলে সদয় প্রধানমন্ত্রী বললেন, কহ কহ নির্ভয়ে কহ! পদলেহি মন্ত্রী বললে, কাকের বদলে মুর্গি হইলে ক্যামন হয়?! সাথে সাথে আইডিয়াটা প্রধানমন্ত্রীর মগজে ক্লিক করলো এবং তিনি বললেন, মার্হাবা মার্হাবা তুমুল মার্হাবা…, তুমি শালা হেব্বি আঁতেল, মুর্গিই সহি; কেননা মুর্গির অনেক কোয়ালিটি! ফলে মুর্গিকে জাতীয় পাখি বলে ঘোষণার খসড়া যখন চূড়ান্তপ্রায় তখন খসড়াকারি বলল, মোরগ না মুর্গি কোনটা হবে স্যার? ফলে সকলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হল এবং প্রধানমন্ত্রী বলল, মুর্গিই ঠিক! মুর্গি ডিম পাড়ে, তাছাড়া মায়ের জাতী; ডিম থিকা মুর্গি-মোরগ সবই হইতে পারে, আর মোরগের বিশেষ কোন ক্রেডিট নাই ডাক দেয়া আর ঠাইস্যা ধরা ছাড়া! ফলে হইহই কোরে মুর্গি পাস হয়ে গেলো।  তখন জমিজমা মন্ত্রী ফিসফিস করে বলল, তাও ভালো তেলাপোকা রে বানায় নাই… তার প্রাগৈতিহাসিক অস্তিত্বের নিরিখে। কিন্তু সংকটের শুরু তো তখন না, এর দুদিন পর রাষ্ট্রীয় প্রজ্ঞাপন জারি করা হল, শহরের সকল নাগরিককে মুর্গি পালন করতে হবে। এবং রাষ্ট্রপ্রধান যিনি নিজে ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়ে… সেই মুর্গির ছালুন দিয়ে ভাত খাচ্ছেন এমন ছবিও ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ছাড়া হল। যেহেতু সকল নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক করা হল মুর্গি পালন, সঙ্গে সঙ্গে আরেকটা প্রজ্ঞাপন ছাড়া হল, আজ থেকে সকল সৃজনশীলতা মুর্গি কেন্দ্রিক হতে হবে! যেমন, মুর্গি নিয়ে কবিতা, গল্প, চিত্রকলায় মুর্গির সা রিয়েলিস্টিক প্রয়োগ, মুর্গি নিয়ে জাদুবাস্তব ফিল্ম তৈরি ইত্যাদি… এবং মুর্গির বাইরে সকল সৃজনশীলতা প্রদর্শন, প্রচার বা মুদ্রণ বাজেয়াপ্ত করা হবে! এবং মন্ত্রী আমলাদের জন্য মুর্গি পালন বাধ্যতামূলক, কেনোনা তাদেরকে আদর্শ হয়ে উঠতে হবে জনগনের কাছে। ফলে অতি উৎসাহী আমলাদের একজন বলল, মুর্গির ডিম কি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে গণ্য হবে, নাকি এটা আমাদের ব্যক্তিগত সম্পদ? ভাগবাঁটোয়ারায় পারদর্শী ঐ আমলার প্রশ্নে রাষ্ট্রপ্রধান খুশি হয়ে বলল, না না এটা তোমাদের ব্যক্তিগত, এবং এই ডিম তোমরা খাবে যার থেকে তোমাদের শরীর রক্ষা হবে এবং যেই শরীর রাষ্ট্র রক্ষায় নিয়োজিত, শেষতক এই ডিম রাষ্ট্রের! এই কথা বলার পরে রাষ্ট্রপ্রধানের নিজেরই মনে হল, অতি উচ্চস্তরের একটা সংলাপ দিয়ে ফেলেছেন। ফলে মনে মনে নিজেকেই নিজে বললেন, সর্বনাশ আমি তো শালা বুদ্ধিজীবী হয়ে যাচ্ছি। আর তখনই অরো এক কাঠি উৎসাহী এক মন্ত্রী বলল, সেই ডিম আমরা কি ফর্মুলায় ভক্ষন করিবো… ভাজিয়া, সেদ্ধ করিয়া নাকি পোঁচ করিয়া? রাষ্ট্রপ্রধান বিরক্ত স্বরে বললেন, কাঁচা খাইয়া ফেলিবেন তাহাতে ব্যয় সংকোচ হইবেক।

(খ/ক)

কণ্ঠে তোমার এখনো গান ফোটে?

সাহস তো কম নয়!

বুকে তোমার একটুও নেই

রাজপেয়াদার ভয়?

গাইবে কি গান এখন তো রাত খুব

বোবার মতো তাকিয়ে দেখো সময় এখন, চুপ!

(খ/খ)

পয়সা দিয়ে মগজ কিনে নেয়া

এতো নতুন কিছু নয়।

যারা রাজকীর্তন গেয়ে খ্যাত হয়

তারা খাঁটি শিল্পী নয়।

দিনটা প্রখর রৌদ্রের, আর রাতে ফুটে উঠলো এক বিরাট বরফ টুকরোর মতো চাঁদ।  পুন্নিমার চাঁদ যে বিরক্তিকর হয়ে উঠতে পারে এই প্রথম তারা জানতে পারল। তারা হেঁটে পার হচ্ছিল। দিনের বেলায় হাঁটার উপায় নেই। প্রহরীরা চেকপোস্ট বসিয়েছে এখানে সেখানে, ধরে ধরে বিচিত্র সব ফাউল প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। যেমন সেদিন সিনিয়র এক বুদ্ধিজীবীকে পথের মধ্যে দাঁড় করিয়ে তার অন্তর্বাসের মধ্যে হাত ভরে দিয়ে এক প্রহরী বলল, একি! মাত্র দুটো? সঙ্গে সঙ্গে অন্য সব প্রহরীরা হো হো… স্বরে হেসে উঠলো! ফলে সিনিয়র বুদ্ধিজীবী হতবুদ্ধি হয়ে থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে… কোন কথা বলতে পারেননি। বরং তার পুত্র বয়সী এই নির্বোধ প্রহরীদের কান্ডে কেঁদে ফেলেছেন। কেনোনা তিনি জানেন, এই নির্বোধ অতিউৎসাহীদের সামনে মুখ খুললেই মুখের মধ্যে বন্ধুকের নল ভরে দিয়ে গুলি করে দেবে! ফলে তিনি চেপে গেছেন যদিও খবরটা ছড়িয়ে গেছে মুখ থেকে মুখে এবং এটাই এখন গণমাধ্যম। ফলে অন্য বুদ্ধিজীবীরা কিছুটা সন্ত্রস্ত, কেননা এটা সকলেই জানে, টিকটিকির ঘোরাফেরা গিরগিটির চেয়ে এখন বেশি। কে যে এজেন্ট এটা বোঝাই মুশকিল। ফলে সেদিন যখন এক তরুণ কার্টুনিস্ট একটা কার্টুন এঁকেছিল, যাতে দ্যাখা যায়, যেহেতু দেশে এখন অঘোষিতভাবে মুখ দিয়ে কথা বলা নিষেধ সেহেতু একটা জলহস্তীর মতো লোকের পাছার সামনে একটা মাইক্রোফোন এবং তিনি তার স্ফীত পাছা দিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে কথা বলছেন! যদিও তার পাছাটা দেখতে অনেকটা তার মুখের মতো, এবং এই মুখটা বা মুখরূপী পাছাটা এক বিখ্যাত বাচাল মন্ত্রীর মতো দেখতে। ফলে পরের দিন কার্টুনিস্ট ছেলেটা অফিস থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায়। রাস্তায় যারা দেখেছিল তারাও মুখ খোলেনি যে কারা ধরে নিয়ে গেছে। যদিও সরকারের অনুদানে মুর্গি বিষয়ক ছবি আঁকা বা কবিতা লেখা বা চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু হয়েছে ব্যাপক হুল্লোড় তুলে…এবং জনৈক এক নৃত্যশিল্পী মুর্গিনৃত্য আবিষ্কার করে রাষ্ট্রীয় শিল্পবোদ্ধাদের মহলে হই চই ফেলে দিয়েছে! এবং নৃত্যশিল্পী আশা করছে এবছর নৃত্যকলায় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদকটা তার ঝুলিতেই ঝুলবে। ফলে সকল ক্ষেত্রের সৃজনশীল মানুষদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেছে এবং এটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এই শাসকদের পক্ষে বা তাদের পদলেহিরা সংখ্যায় কতো। ফলে এক গায়িকা যিনি মঞ্চে একটা শেকল ভাঙার গান গেয়ে মঞ্চ থেকে নামতেই যাকে এক গোয়েন্দা বলেছিল, আপনার সাহসের তারিফ করি ম্যাডাম, তা কতজন পাঠাবো? পারবেন তো সামলাতে, অবশ্য আপনার ফিটনেস সুন্দর… হার্টে প্রবলেম নেই তো? মহিলা এক মুহূর্ত দেরি না করেই চটাস্‌ করে একটা চড় বসিয়ে দিয়েছিল। ব্যাপারটা নিউজ হয়ে যাবার কথা ছিল, কিন্তু কোন মিডিয়া ছাপার সাহস পেলো না। ফলে মুখ থেকে মুখে ছড়ানো ছাড়া পত্রিকাও ছাপে নি। আর কদিনের মাথায় সেই গায়িকা নির্বাসনে গেলেন কোনো একটা সাজানো রাজদ্রোহী মামলার দায়ে। ফলে চৌরাস্তার মোড়ে মাঝরাতে বাড়ি ফেরা এক কবিকে যখন একদল চ্যাংড়া সিপাই আটকে রসিকতা শুরু করলো, তাদের একজন যখন বলল, চুল এতো বড় কেন? তখন কবি দ্বিধা না করেই ফস করে প্যান্ট খুলে দিয়ে বলল, স্কেল নিয়ায়; কোথায় কতো মিলিমিটার মাইপা তোর বাপরে রিপোর্ট কর! পুন্নিমার মাঝরাতে আচমকা একজন মানুষ চৌরাস্তার মোড়ে নগ্ন হয়ে দাঁড়ালে বোধহয় বিভ্রম তৈরি হয়।  সৈনিকরা সবাই কবিকে পাগল ঠাউরে কিংবা মাতাল বলে চলে গেলো। ফলে একটা চিরায়ত কিন্তু নতুন মোড়কে হাজির হওয়া বাক্য হাওয়ায় ঘুরপাক খেতে লাগলো যে, ‘চিন্তার স্বাধীনতা বা ভাবনার মুক্তি’ শৃঙ্খলিত!

(গ)

পুরোহিতের চোয়াল

আর

 রাজার খড়গ

চিরকালই আছে তোমার উপর,

কবি

তুমি একা;

মৌন মানুষ পেন্ডুলামের মতো…।

মিটিঙয়ে রাষ্ট্রপ্রধান মুর্গির পালক দিয়ে কান চুলকাতে চুলকাতে বললেন, আসলে মুর্গি বিষয়ক আমাদের প্রকল্পগুলো ভালোই এগোচ্ছে, চিন্তা এবং সৃজনশীলতা ভালোই এগোচ্ছে এবং এর খুব প্রচার দরকার সারা পৃথিবীতে। কিন্তু সংকট একটাই মুর্গি বড় বেশি কক কক… করে।  মুর্গি তো চিন্তাশীল প্রাণী না, তবে সে কেন এতো কথা বলে? ষড়যন্ত্র মন্ত্রী তার গোঁফের নিচে থেকে বললেন, একদম ঠিক স্যার! চারদিকে বিবিধ ষড়যন্ত্র জারি আছে। চিন্তকদের সামলানো যাচ্ছে না। পদলেহি চিন্তক এবং সৃজনশীল তৈরির প্রকল্প শুরু করা হয়েছে। দুইহাতে টাকা ঢালা হচ্ছে। বিচিত্র অফার, প্যাকেজ, স্কলারশিপের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারপরও এই কবি শিল্পীদের আটকানো যাচ্ছে না। সেদিন এক শিল্পী একটা গান গেয়েছেন। গানের কথাগুলো মারাত্মক। দুটো লাইন এরকম যে,

রাজা একটা চতুষ্পদ প্রাণ

যার পিঠে দেশ

পায়ের নিচে আমজনতার জান!

এর পরের পংক্তিগুলো উচ্চারণ করা যায় না। ফলে হুংকার দিয়ে ওঠেন ছুরিকাঁচি মন্ত্রী! তিনি বলেন, মাঙ্গিরপুতরে পিস পিস কইরা ফ্যালান নাই ক্যা? ষড়যন্ত্রমন্ত্রী বলল, উত্তেজনা থামান। ঠাণ্ডা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। গুম। ফলে মিটিং কক্ষে শান্তি নামে। কিন্তু ছুরিকাঁচি মন্ত্রী আবেগ সামলাতে পারেন না। তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের দিকে তাকিয়ে বলেন, ছার হুকুম দিলে বেবাক মুর্গার কল্লা কাইট্টা আপ্নারে সাপ্লাই দিতে পারি! আপনের দ্যাশে থাইক্যা আপনের খাইয়্যা, আপনের পইর‍্যা আপনের মুখে হাগে? হালার পোঙ্গার জোর কত? রাষ্ট্রপ্রধান ছুরিকাঁচি মন্ত্রীর উর্বর মগজের তারিফ কোরে বললেন, তুই বের হ রুম থিকা! সবমুর্গির কল্লা কাটলে ডিম পারবো তোর বাপে? ফলে সবাই যখন হাসতে লাগলো তখন, বিজ্ঞান মন্ত্রী দিকে তাকিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলল, তুমি গবেষকদের ডেকে নতুন প্রজাতির মুর্গি বিষয়ক গবেষণা করাও, যেখানে মুর্গি কোন কথা বলবে না! বিজ্ঞান মন্ত্রী জি বলার আগেই বাস-ট্রাক মন্ত্রী বলল, ইজাজাত দিলে আমি একটু কথা বলবার চাই! রাষ্ট্রপ্রধান মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন। বাস-ট্রাক মন্ত্রী অতি উদ্বেগের স্বরে বলল, রাষ্ট্রপ্রধানের নিরাপত্তার স্বার্থে আমি কিন্তু ছুরিকাঁচি মন্ত্রীর সঙ্গে একমত! কয়েকটা মুর্গিরে ক্রসফায়ার থুক্কু জবাই কইরা দিলে হয়! বাকি মুর্গিরা ভয়ে কথা বলবে না? বিজ্ঞান মন্ত্রী হা হয়ে থাকলো এই প্রস্তাবে। আর প্রধানমন্ত্রী বলল, তুমি আর কল্যাণ মন্ত্রী যে কথায় কথায় তোমাদের খামারের মুর্গি জবাই কইরা খাইতেছো আর পকেটের পয়সায় নতুন মুর্গি রিপ্লেস করতেছো সেই নিউজ কিন্তু আমার কাছে আছে। ফলে বাস-ট্রাক মন্ত্রী চুপসে গেলেন। এবং অন্য মন্ত্রীরা বুঝে ফেলল, তারাও নজরদারির বাইরে না, ফলে মিটিঙয়ে চা নাস্তা দেয়া পিয়ন ছেলেটার মনে হল, তাইলে খেলাটা খেলতেছে কে? (চলবে)

প্রচ্ছদঃ সুমন মুখার্জী


যা হতে চলেছে


যা হতে চলেছে