তিনটি কবিতা – ইন্দ্রাণী পাল

পেরেক

ঘাটের সিঁড়িতে রোজই ঝুঁকে আসে একটা বেড়াল তারও চোখে ধূসর লোভ জলের দিকে

হঠাৎ তার মুখটা লম্বা হতে হতে আকাশ আর মধ্যাহ্নের মাঝখানের ফাটলটা ভরাট করে দেয়

আর বেড়ার ওপাশে হেমেন মণ্ডলের বউয়ের ভারী শরীরটা নড়েচড়ে ওঠে।

এক সুড়ঙ্গ থেকে আর এক সুড়ঙ্গের অন্ধকার মাপতে মাপতে

দূর থেকে ভেসে আসে পায়ের শব্দ

আন্তর্জাতিক তারিখরেখার ওপারে সময়ের হিসেব ভুলচুক হয়ে যায়

অথচ ছাইরঙা স্যুট আর ট্রাউজার পরা লোকটা রোজই

ঘাড়ে পাউডার মেখে বিকেলের হাওয়া খেতে বেরোয়

জলসীমার ওপারে জাহাজের ভেঁপু বেজে ওঠে

একটা হলদে হয়ে যাওয়া কাগজ হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে আপাতত রণে ভঙ্গ দিয়েছে।

এইসব টুকরো টুকরো দৃশ্যের পেরেক ঝুড়িতে কুড়োতে কুড়োতে দিনের শেষে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছে কিশোরী মেয়েটা।

বেলাশেষের গান

আজ বোধহয় রাত্তির একটু তাড়াতাড়ি হল

সমস্ত আলো নিভে গেছে

চায়ের দোকানের কুপিটাও জ্বলছে না

আর আমরা একরাশ নক্ষত্রের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি

ছাইগুলো ঘাঁটছি; দু’হাতে ওড়াচ্ছি

দু’একটা ভালোবাসার কথা লিখে রাখছি ডায়েরিতে

প্রেইরি অঞ্চলের ম্যাপ; তুষার অববাহিকা

এইসব সুখের টুকরোটাকরা উড়ে আসা কাগজ

আর একটা ছাইজন্ম পেরোতে পেরোতে নিমগাছের ডালে

বসে থাকে দাঁড়কাক

তবু কতটা পথ পেরোলে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে নেওয়া যায়

সেকথা বুঝে নেওয়া অবলোকিত দরজার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে

একজীবনে কতটা ছাড়লে মহাপুরুষ হওয়া যায়!

এইসব আলগোছে চিন্তা করতে করতে কম্বল টেনে

পাশ ফিরে শুই

আর আমাদের অবসরকালীন সন্ধেগুলো আরো মূক হয়ে আসে

ততক্ষণে চাঁদ এলিয়ে পড়েছে আমাদের জানলায়।

পেরেক

ঘাটের সিঁড়িতে রোজই ঝুঁকে আসে একটা বেড়াল

তারও চোখে ধূসর লোভ জলের দিকে

হঠাৎ তার মুখটা লম্বা হতে হতে আকাশ আর মধ্যাহ্নের

মাঝখানের ফাটলটা ভরাট করে দেয়

আর বেড়ার ওপাশে হেমেন মণ্ডলের বউয়ের ভারী শরীরটা

নড়েচড়ে ওঠে।

এক সুড়ঙ্গ থেকে আর এক সুড়ঙ্গের অন্ধকার মাপতে মাপতে

দূর থেকে ভেসে আসে পায়ের শব্দ

আন্তর্জাতিক তারিখরেখার ওপারে সময়ের হিসেব

ভুলচুক হয়ে যায়

অথচ ছাইরঙা স্যুট আর ট্রাউজার পরা লোকটা রোজই

ঘাড়ে পাউডার মেখে বিকেলের হাওয়া খেতে বেরোয়

জলসীমার ওপারে জাহাজের ভেঁপু বেজে ওঠে

একটা হলদে হয়ে যাওয়া কাগজ হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার বৃথা চেষ্টা করে

আপাতত রণে ভঙ্গ দিয়েছে।

এইসব টুকরো টুকরো দৃশ্যের পেরেক ঝুড়িতে কুড়োতে কুড়োতে

দিনের শেষে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছে কিশোরী মেয়েটা।

বেলাশেষের গান

আজ বোধহয় রাত্তির একটু তাড়াতাড়ি হল

সমস্ত আলো নিভে গেছে

চায়ের দোকানের কুপিটাও জ্বলছে না

আর আমরা একরাশ নক্ষত্রের ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছি

ছাইগুলো ঘাঁটছি; দু’হাতে ওড়াচ্ছি

দু’একটা ভালোবাসার কথা লিখে রাখছি ডায়েরিতে

প্রেইরি অঞ্চলের ম্যাপ; তুষার অববাহিকা

এইসব সুখের টুকরোটাকরা উড়ে আসা কাগজ

আর একটা ছাইজন্ম পেরোতে পেরোতে নিমগাছের ডালে

বসে থাকে দাঁড়কাক

তবু কতটা পথ পেরোলে মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখে নেওয়া যায়

সেকথা বুঝে নেওয়া অবলোকিত দরজার পাশে ঠায় দাঁড়িয়ে

একজীবনে কতটা ছাড়লে মহাপুরুষ হওয়া যায়!

এইসব আলগোছে চিন্তা করতে করতে কম্বল টেনে

পাশ ফিরে শুই

আর আমাদের অবসরকালীন সন্ধেগুলো আরো মূক হয়ে আসে

ততক্ষণে চাঁদ এলিয়ে পড়েছে আমাদের জানলায়।

 স্বপ্নতোরণ

রমাদি আজ ছুটি নিয়েছে। পাশের বাড়ির মেয়েটি আর হারমোনিয়ামে গলা সাধে না। আমরা সবাই যে যার ভুলগুলো নিয়ে ব্যস্ত। আমাদের কোনো চেনাজানা গাছ নেই    অথচ ওপারের বারান্দায় দাঁড়ালে পুবের মাঠ থেকে ভেসে আসে হাওয়া।

আজকাল পরিচিত কাউকে দেখলেই সভয়ে পিছিয়ে আসি                           কখনও বা গতানুগতিক কুশল বিনিময়।      স্বপ্নে একটা ট্রেন হুড়মুড় করে করে ঢুকে পড়ে, আর বাসন্তী রঙের একটা পাঞ্জাবি দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে।

স্বপ্নতোরণ

রমাদি আজ ছুটি নিয়েছে। পাশের বাড়ির মেয়েটিও

আর হারমোনিয়ামে গলা সাধে না।

আমরা সবাই যে যার ভুলগুলো নিয়ে ব্যস্ত।

আমাদের কোনো চেনাজানা গাছ নেই

অথচ ওপারের বারান্দায় দাঁড়ালে

পুবের মাঠ থেকে ভেসে আসে হাওয়া।

আজকাল পরিচিত কাউকে দেখলেই সভয়ে পিছিয়ে আসি

কখনও বা গতানুগতিক কুশল বিনিময়।

স্বপ্নে একটা ট্রেন হুড়মুড় করে করে ঢুকে পড়ে, আর

বাসন্তী রঙের একটা পাঞ্জাবি দরজায় দাঁড়িয়ে হাত নাড়ে।

প্রচ্ছদঃ রেশমী পাল

*****