তিনটি কবিতা – স্বপ্ননীল রুদ্র

আমাকে লিখে রাখে বিশ্বাসী নারী

যে অরণ্যের গল্প লিখেছ, সেখানে বিশীর্ণ শীত—

কাঠকুড়নো পায়ে হাঁটা পথ ঝরাপাতার ক্রন্দনে…

ভিজে গিয়েছে আমার চলা, এমন নিঃসঙ্গ বনে

কিশোরী ঝোরায় ভেসে যায় আমার আজ, অতীত

তোমার গল্প থেকে সংলাপ নিরালা-চয়ন করি

সে সঞ্চয়ে আরও নিরালায় একটি কোমল পাখি

বনের আদিম গন্ধ আনে, আমি সে সুরভি রাখি

তোমার জন্য— বনের পথে— যে পথে আমি চরি

আমার পায়ে পায়ে তোমার অশ্রু মাখা মৌন ঘাস

আমার মর্মে তোমার গল্প, গল্পে বিশ্বাসের লতা

লতিয়ে লতিয়ে উঠে বলে এ জন্মের কথকতা

তোমার কাহিনিতে পেয়েছি এই জন্মের বিশ্বাস

এই জন্ম আসলে অরণ্য, আমি একা বনচারী

আমাকে প্রত্যহ লিখে রাখে একটি বিশ্বাসী নারী…

পরাধীন জানালার কবিতা

 

তীব্র ধাক্কা তৈরি করে ঝুলন্ত অবরোধ সরাও,
কান থেকে মুক্ত করো আংটায় লাগানো দুটি দুল,
লোহার ফুলের গ্রিলে নব আভরণ সেঁটে দাও
গলাবন্ধ বোতামে আমার রাখো উন্মনা আঙুল

ফুরফুরে মাধ্যম ভাবো– শুধুই আদেশ আজ্ঞাবাহী–
আমাকে প্রয়োগ করে করো বাতাসের ব্যবহার,
ঘর ভরেছে ঐশ্বর্যে, বাইরে খাড়া হাওয়ার সিপাহী
তোমাদের স্বস্তি-টবে ভারে নুয়ে পড়ে কুন্দ-ঝাড়

আমার বরাদ্দ তবু ঘ্রাণবঞ্চনার ফাঁকা থালা,
চোরাকুঠুরির মতো এক সুনিপুণ দমবন্ধ,
ক্রীতদাসের তকমা না দিয়েও ভারী এক জ্বালা
পরিয়ে দিয়েছ গায়ে, পেটে ছড়িয়েছ অরন্ধন

স্বাধীনতা-খেকো পর্দা ছিঁড়ে করে দাও কুটিপাটি
তোমাকে মাধ্যম করে, বড় সাধ, বাড়িময় হাঁটি

উর্বরতা

 

আগাছা ডেরা বেঁধেছে শরিকি-গোল জমির কোলে,
বর্ষা ফুলেফেপে তুলেছিল সবুজ ধনসম্পদ—
পাড়ার নোংরা ওখানে লুকিয়ে নিক্ষিপ্ত হবে বলে
সারাদিন ঘরে ঘরে জমে, রাত্তিরে তাদের পদ

শূন্যে লাফ দিয়ে উড়ে এসে গোপনে লুকোয় ঝোপে—
লুকিয়ে রাখে নানা বাড়ির জমে ওঠা বর্জ্য, গ্লানি;
সমস্ত দ্বিধাহীন বর্জন জমিতে দিয়েছে সঁপে
বর্ষাকালে ঘন হওয়া পরগাছার নিচে জমিখানি

একান্নবর্তী পরিবারের আমার দাদুর মতো,
অনেক সন্তান তার, তাদের গড়ে ওঠা জগত—
দাদুর বুকে পিলার গেঁথে গড়া ঘর অবিরত
ঘর থেকে রাস্তা, পাড়া— নিজস্ব জীবনের শপথ…

একদিন পাড়ার রাস্তা ধরে পৌঁছে জমিটির কাছে
দেখেছি প্রাচীন উর্বরতা দীর্ঘ-চাপা পড়ে আছে…

*****