তিনটি কবিতা – তৈমুর খান

সমস্যা

সমস্যা এসেছে আজ 

আমার নির্বাক জিজ্ঞাসায় তাদের আনাগোনা :

কী চাও? কী নেবে আর? 

ধ্বংস ছুঁড়ে দিচ্ছ শুধু 

নিরশ্রু কান্নার ভেতর নিরন্তর অগ্নিমাছ! 

আমি নিরীহ প্রজ্ঞার কাছে ছায়া টেনে নিই 

নিজেকে ঢেকে রাখি নিস্তব্ধতায় 

যুগের আলোরা প্রতারক 

একটিও প্রদীপ নেই স্বপ্নে জ্বালাবার 

হাওয়া আসছে তবু, ঘর ও বাহিরে হুড়োহুড়ি 

পোশাক বদলের সময়ও দিচ্ছে না 

পিপাসার কারুণ্য ভরা গ্লাসে অবাস্তব সময়ের ঢেউ 

বলতেও দিচ্ছে না কিছু, চারিপাশে জমছে না-বলা 

সমস্যার নতুন মুখ —রক্ত নাকি আলতা পরেছে? 

পা নেই ওর —কথা কাটাকাটি শুধু 

কথা কেটে কেটে তাড়াচ্ছে ঘুম 

রাত জেগে জেগে উদ্বেগে আছে বিশ্বাস।

 

অপমান

অপমান খুব আনন্দে আছে 

বাক্যবাণ সুতীক্ষ্ণ ওর 

প্রাচীন পদ্ধতির আস্ফালন 

সপাঠ ক্রিয়াগুলি দুর্বিনীত, অন্ধ প্রাবল্যে আসীন 

সত্যকে কী করে ডাকব আজ? 

সত্য মৃত, মৃতকে চেনে না সমাজ। 

মিথ্যার কূপ খুঁড়ে প্রহর গুনে গুনে 

চেয়ে আছে উন্মুখ ভ্রান্ত কৃষক

অপমান কারও কেউ নয় 

কোনও অপার্থিব রুচিও তাদের নেই 

শুধু বিষণ্ণ খাদের কাছে এনে 

ফেলে দিতে চায় নিচে, সে অনেক নিচে 

যদিও দাঁড়াই ঘুরে, যদিও যুক্তিকে ডাকি 

তবু দেখি যুক্তি নেই, মুক্তিও ঘুমাচ্ছে খাঁচায় 

সে-ও তবে কারও পোষাপাখি? 

অপমান আনন্দে আছে, মুখে তার কী সুন্দর তীব্র চুনকালি! 

আয়নার সম্মুখে 

বিশ্বাসের ভাঙা আয়নায় 

উদাসীন মুখ দ্যাখে 

চোখের তারায় জ্বলে রাত 

বিপন্ন অসুখগুলি কিলবিল জলে 

পরস্পর আর্তধ্বনি তোলে 

পাঠশালা খুলে যায় এখানে 

চেতনার মাঠ জুড়ে অবিরাম ঝড় 

ভাঙা প্রহরের পাখি ওড়ে 

একটা যুগ আর একটা যুগের ঘাড়ে চেপে যায় 

কোথাও কোথাও দার্শনিক জ্বর 

তুলাদণ্ডে ওজন হয় মানবিক মাংস 

আর বিভ্রান্ত স্বজন আলো জ্বেলে দ্যাখে অসুন্দর 

পোড়া সংসারে জাতীয় পতাকা ওড়ে 

বিদ্বেষে মুখ লুকায় দেশ….. 

প্রচ্ছদঃ সায়ন্তনী দাশগুপ্ত