তিনটি কবিতা – উদয়ন গোস্বামী

বর্ষাতি

সহজ ফড়িং প্রত্যাশার ঘাসে শিশির চোঁয়ানো শব্দ খুঁজে চলেছে। কুমড়ো ডগায় লালের উপর বুটি বুটি পরিহাস নিয়ে ডেঁয়ো পোকা। ছাতা পড়া পেয়ারার ডাল থেকে ঘুম ঘুম নামতা শোনায় ঘুণ। অবুঝ পিঁপড়েরা অবশ্য এখনও উচ্চতা সন্ধানী। আগাছার বর্ষাতিতে পা ডুবাতেই ঠিক বিরক্ত হবে মাটি। অতিথি অসুখ, ছানা কাটা রোদ্দুরে তেলাকুচো লতার মত বাড়তে বাড়তে এখন কচু পাতার আঞ্চলিক মোহে…

মেঘ জমুক বা না জমুক, গত আষাঢ়েও এরা সবাই এসেছিল। বয়স একতিল বাড়েনি অথচ, ছায়ার কলমে পৌনঃপুনিক কালি। হাজার বিদেহী বর্ষার পরেও এরা থেকে যাবে। বেওয়ারিশ লাশ যেমন নাব্যতার পরোয়া করে না। কবি চলে যাবে; চলে যাওয়া তো আশ্মিনের রোদ্দুরের চেয়েও সরল, কিন্তু “এবার তবে,আসি গো”, বলে যাওয়ার মতো কলজের জোরটুকু ফিরে পেতে আরও কতগুলো বর্ষা যে মেঘলা রাখতে হবে নিজেকে কে জানে..

গ্রীনরুম

কুকুরদুটো রীতি মেনে একটা বস্তাওয়ালাকে দেখে চিল্লাচ্ছিল। বঙ্কুর ভ্যানভর্তি চোরাই আম বীরদর্পে পাশ কাটিয়ে গেল। কাল ওদের একটাকে ঢিল ছুড়েছিলাম। খাবার ভেবে শুঁকে পালিয়েছিল…

তলোয়ার, নিজের খাপটাকে ভালবেসে এখন পস্তাচ্ছে…

বঙ্কু আর বস্তাওয়ালা কাল ফের এই পথ দিয়েই মঞ্চে যাবে। আমি, কুকুর দুটোকে খাবার দেব না ঢিল, তা নির্ভর করছে কাল সকালে বঙ্কু অথবা বস্তাওয়ালা কে প্রথম এসে আমাকে জাগাবে। অবশ্য সারারাত কুকুরদুটো ঘুমাতে দিলে হয়…

আয়না, আমার চিত্রনাট্যে তলোয়ার রাখেনি কোনও…

সোয়েটার

পাল ছেঁড়া রক্তের স্বাদ

পেয়েছিলে; আধখানা চাঁদ

ডুব দিল যেই নাক টিপে,

শীতপাকা রাত গাঁথি ছিপে…

ডোরবেলে সনাতন ক্ষত

থম মেরে- অপেক্ষারত

কুয়াশার খোলামেলা ডাক,

নিমপ্যাঁচা ভোরে হবে কাক…

হাড়কাঁপা শহুরে জঞ্জালে

ঝুম চাষী দাবানল জ্বালে…

নগরে পেখম ম্যালে আলো

সোয়েটারে পোষ মানি ভালো…

নাগরিক শৈত্য মিছিলে

ভালোবাসা তুমি গিয়েছিলে?

কাকের পেখমে লেগে ছাই

আধপাকা চাঁদ- তবে যাই…

ডোরবেলে খোলামেলা কাক

পোষাক পালটে উড়ে যাক…

প্রচ্ছদঃ সুমন মুখার্জী

*****