Third Lane Magazine

তিনটি কবিতা ~ চিরায়ত কুশারী

নদী বিষয়ক দু’টি

এক

যতখানি চলে গেলে ফিরে আসা যায়
যতবার মেঘ করে শরীরে শরীরে
এই ভোরের বাতাসে,
যতটুকু মিশে যায় পাখিদের উৎসব
 
ততখানি,
ততবার,
ততটুকু,
 
পড়ে থাকো তুমি
পড়ে আছে ভেঙে যাওয়া অপমান
পড়ে থাকে নিভে যাওয়া শোক
 
তবুও তো শিরায় শিরায় ঘনায় 
অচ্ছুৎ শ্রাবণ;
 
 
ঠিক যতদূর চলে গেলে
ফিরে আসা যায়
 
 
 
ততদূর আমাদের নদী।
 
 

দুই

এইস্থলে প্রাকৃতজনরূপ বসে আছি আর ঢেউয়ে ঢেউয়ে এই শরৎকালীন নদী। কুকুরগুলিকে আদর করে দিই, এছাড়া চরাচরে আর কোন সহজ বিনিময় নেই। প্রতিমার খড় ভেসে যাওয়া দেখি আর দেখি ভেসে যায় বেহুলার ভেলা। অন্য তীরস্থ শ্মশানে জননীর চিতাভস্ম বাতাসে মিলিয়ে যায় অনন্ত বৈরাগ্যে; রতনবাবুর ঘাট থেকে ভেসে আসে একাত্তরের ঐ যুবকের লাশ। এ কি আমারই নিয়তিবিষাদ? নিহিত গরল-আমার ও আমাদের? পাখিদের ফেরবার গান শোনা যায়। শব্দও কেমন পাপবোধে মূক হয়ে আছে এই সান্দ্র অন্ধকারে। এবার সময় হল। জলের গায়ে জল শব্দ করে ওঠে। জন্ম-মৃত্যু-প্রেম ছিঁড়ে তাই একে একে মুছিয়ে দি দগ্ধ করতল।

 তৃতীয় পৃথিবী  
 
ভাস্কর, আপনার কথা ভাবি
আর
নিরুত্তাপ বিছানার কথা মনে পড়ে
 
যৌনক্লান্ত স্তব্ধতা মেখে
ঐ যে মেয়েটি বিকেলের ছাদে দাঁড়িয়ে আছে
ভালোবাসাহীন,
তাকে আমি কী বলব ভাস্কর?
 
তার চেয়ে বরং পরিত্রাণমুখী জীবনের কথা 
ভাবা যাক;
 
সংঘ আর সত্যের কথা? 
শুশ্রূষার কথা?
 
 
আপনি কি দেখতে পান,
শান্ত মোমবাতির একটা পৃথিবী কেমন 
মরে যাচ্ছে প্রতিদিন?
 
 
গত পরশু বিটি রোডে
ঐ লরিটার
মুখ থেকে,
আমার কাঁধ খামচে
সরিয়ে নিলেন কেন ভাস্কর?
 
তৃতীয় পৃথিবীর মত মৃদু হেসে  
কেন বললেন
 
 
‘নাও, সিগারেট ধরাও!’ 
আসা যাওয়া
 
পুড়ে যেতে চেয়ে এই অমল বালক
   গিয়েছিল আগুনে,
   
জন্মান্তরে কি তার সংকেত ছিল কোন?
   ছিল কোন অহৈতুকী আত্মরতি?
 
 
     জ্বালিয়ে দিও ঐ নিরাভরণ
     মুমূর্ষু ক্ষয়ের পাশে 
    এই আমাদের করুণার ইতিহাস, 
    আমাদের সঙ্গোপন রৌদ্রালোক
 
 
 
মাধব, কথা দাও 
একদিন নিয়ে যাবে বীতরাগ অভিসারে।

প্রচ্ছদ: চিরায়ত কুশারী

Related Posts